ওতাবেক ‘জাদুতে’ শেখ জামালের জয়

ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ওতাবেক।
সৌজন্য ছবি

কখনো মানব দেওয়ালের ওপর দিয়ে শূন্যে ভাসিয়ে গোল করেছেন। কখনো ‘অলিম্পিক’ গোল করে দর্শকদের চমকে দিয়েছেন। তবে গোল করার চেয়ে করানোর কাজটাই যেন বেশি উপভোগ করেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের মিডফিল্ডার ভালি ওতাবেক। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্বে খেলতে নেমে আজ শেখ জামাল ধানমন্ডি যে ৩-১ গোলে হারিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনীকে, তাতে বড় অবদান তো উজবেকিস্তানের এই ফুটবলারেরই।

শেখ জামালের হয়ে একটি করে গোল করেছেন সুলাইমান সিল্লাহ, সলোমন কিং ও রেজাউল করিম। তিন গোলেরই যোগানদাতা ওতাবেক। শুধু তাই নয় ম্যাচের ৫৯ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার রাকিব হোসেনকে। বল দখলের লড়াইয়ে মেজাজ হারিয়ে ওতাবেককে অহেতুক বুকে লাথি মারেন রাকিব। সেই শাস্তি পেয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী দশ জনের দল হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে ঘটনাবহুল ম্যাচে পুরোটাই নিজের ওপর আলো কেড়ে রাখেন ওতাবেক।

শেখ জামালের বিদেশিরাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন।
সৌজন্য ছবি

আজকের এই ম্যাচে লড়াইটা ছিল দেশের অন্যতম সেরা দুই কোচ শেখ জামাল ধানমন্ডির শফিকুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মারুফুল হকের মধ্যে। সেই লড়াইয়ে বিজয়ীর হাসি হেসেছেন শফিকুল।

দুই দলের ফরোয়ার্ড লাইন এই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম আবাহনীর চার্লস দিদিয়ের, নিক্সন গিয়াহামে, চিনেদু ম্যাথিউ-কেউই সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি ম্যাচে। নিক্সনকে তো কোচ মারুফুল হক হতাশ হয়ে উঠিয়েই নিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। দিদিয়ের দু-একটা শট নিয়েছেন, কিন্তু কখনো বল গেছে পোস্ট ঘেষে, কখনো বারের ওপর দিয়ে।

শেখ জামালের আক্রমণভাগের ত্রিমূর্তি-পা ওমর জোবে, সুলাইমান সিল্লাহ ও সলোমন কিং প্রথম পর্ব মাতিয়েছেন দারুণভাবে। যদিও নিষেধাজ্ঞার কারণে শেখ জামালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা (১২টি) ওমর জোবেকে কোচ আজ মাঠে নামাতে পারেননি। তবে জোবের অভাব এতটুকু বুঝতে দেননি সিল্লাহ ও কিং।

গোলের পর সিল্লাহ।
সৌজন্য ছবি

শুরুতে বল দখলে এগিয়ে ছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। কিন্তু প্রথমার্ধের দুই মিনিটের ঝড়ে এলোমেলো চট্টগ্রাম আবাহনীর রক্ষণ! ম্যাচের ৩০ মিনিটে প্রথমে সিল্লাহ এগিয়ে নেন শেখ জামালকে। মাঝ মাঠ থেকে ওতাবেকের বাড়ানো লম্বা বলটা ধরে ঠান্ডা মাথায় প্লেসিংয়ে সিল্লাহ করেন ১-০। লিগে এটি সিল্লাহর ষষ্ঠ গোল।

৩২ মিনিটে সলোমন কিং ব্যবধান দ্বিগুন করেন। কেষ্ট কুমার ফ্রি কিক থেকে লম্বা বল বাড়িয়ে দেন ওতাবেকের কাছে। বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো ওতাবেক বল এগিয়ে দেন কিংকে। অরক্ষিত কিংয়ের আলতো টোকায় গোল করতে কোনো কষ্টই হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ৪৬ মিনিটে বদলি মান্নাফ রাব্বির গোলে লড়াইয়ের একটা আভাসও দিচ্ছিল চট্টগ্রামের দলটি। প্রথমে কৌশিক বড়ুয়া গোলের চেষ্টা করেন। কিন্তু কৌশিকের শট প্রথম দফায় ফিস্ট করে ফেরান শেখ জামালের গোলরক্ষক জিয়াউর রহমান। ফিরতি বল থেকে মান্নাফ রাব্বি করেন ২-১।

গোল উদ্‌যাপনেও প্রাণকেন্দ্রে ওতাবেক।
সৌজন্য ছবি

মূলত শেখ জামালের ডিফেন্ডার রেজাউলের ভুল পাস ধরেই আক্রমণে ওঠেন কৌশিক। তবে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ঠিকই শোধ করেছেন রেজাউল। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ওতাবেকের ফ্রি কিক থেকে দর্শনীয় হেডে গোল করেন রেজাউল। চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম হতাশ হয়ে চেয়ে রইলেন বলের দিকে।

ম্যাচের ৫৯ মিনিটে মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো রাকিব দেখেন লাল কার্ড। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওতাবেকের বুকে লাথি মারেন রাকিব। বাকি সময়ে দশ জন নিয়ে লড়াই করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। কিন্তু গোলের দেখা আর পায়নি। ম্যাচের শেষ সময়ে এসে দিদিয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন আরেকটা। ওই সময় জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন গোলরক্ষক জিয়া। কিন্তু শেখ জামালের বদলি ফুটবলার আরিফুল গোললাইন সেভ করেন সে যাত্রায়।

লিগের প্রথম পর্বে শেখ জামাল ২-১ গোলে হারিয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনীকে। আজও জয়ের দেখা পায়নি তারা। এই জয়ে ১৩ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রইল শেখ জামাল ধানমন্ডি। আর সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে সাতে চট্টগ্রাম আবাহনী।