ওতাবেক–নুরুলে দুর্দান্ত শুরু শেখ জামালের

দ্বিতীয় গোলের পর শেখ জামালের উল্লাস।
ছবি: বাফুফে

ঢাকার মাঠে ফ্রি–কিক থেকে দর্শনীয় গোল আগেও করেছেন ওতাবেক।

উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার গত মৌসুমে খেলেছেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে। এবার খেলছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের জার্সিতে। বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে গত বছর ফ্রি–কিকে মানবদেয়ালের ওপর দিয়ে শূন্যে ভাসিয়ে চমৎকার একটা গোল করেছিলেন ওতাবেক। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ওতাবেকের ফ্রি–কিকটি যেন ওই ম্যাচের কথাই আবারও মনে করিয়ে দিল দর্শকদের।

প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে আজই প্রথম খেলতে নেমেছে শেখ জামাল। জয় দিয়ে শুরু করেছে প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। চট্টগ্রাম আবাহনীকে আজ ২-১ গোলে হারিয়েছে শেখ জামাল। ম্যাচে শেখ জামালের হয়ে একটি করে গোল করেছেন ওতাবেক ও নুরুল আবসার। পেনাল্টি থেকে চট্টগ্রাম আবাহনীর একমাত্র গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নিক্সন গিয়াহেমে।              

মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি ডাগআউটেও পরোক্ষ একটা লড়াই ছিল দেশের অন্যতম দুই সেরা কোচের মধ্যে। যে লড়াইয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হককে হারিয়ে দিলেন শেখ জামালের কোচ শফিকুল ইসলাম। ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরার কাছে ২-০ গোলে হেরে মৌসুম সূচক টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় শেখ জামাল। তবে চট্টগ্রাম আবাহনী উঠেছিল সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে রানার্সআপ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল চট্টগ্রাম আবাহনী।

দুই দলের ফরোয়ার্ড লাইনই বলতে গেলে এই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। যদিও শেখ জামালের আক্রমণভাগের মূল ভরসা সলোমন কিং সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ফেডারেশন কাপে শেখ জামাল প্রতিপক্ষের জালে সব মিলিয়ে দেয় ৪টি গোল। এর মধ্যে কিংয়েরই ছিল ৩টি। অন্য গোলটি ছিল গাম্বিয়ান ডিফেন্ডার ওমর জোবের। তবে আজ এই দুজন নয়, ম্যাচের নায়ক ওতাবেক ও স্থানীয় ফরোয়ার্ড নুরুল আবসার।

ওতাবেক।
ছবি: বাফুফে

চট্টগ্রাম আবাহনী মৌসুমের শুরু থেকেই ভুগছে তাদের স্ট্রাইকারদের নিয়ে। সাখাওয়াত হোসেন চোটের কারণে দর্শক। আর করোনা থেকে সেরে উঠে ফেডারেশন কাপে এক ম্যাচ খেলেছিলেন নাইজেরিয়ান চিনেদু ম্যাথু। আজও তাঁকে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে দেখা যায়নি। চোট সেরে নিক্সন মাঠে ফিরেছেন বটে, তবে বক্সে ঢুকে তিনি বল মারতে দেরি করেছেন অনেক। কখনো তাঁর নেওয়া দুর্বল শট মুঠোবন্দী করেছেন শেখ জামালের গোলরক্ষক জিয়াউর রহমান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পেনাল্টি থেকে একটা গোল পেয়েছেন। আর ম্যাচের শেষ দিকে বাইসাইকেল কিকে একটা ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা গেছে নিক্সনকে।

চট্টগ্রাম আবাহনীর বড় সর্বনাশটা হয়েছে মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়েরের লাল কার্ডে। ফেডারেশন কাপে সাইফ স্পোর্টিংয়ের মিডফিল্ডার আল আমিনের পা ভেঙে দেওয়ায় লাল কার্ড পেয়েছিলেন দিদিয়ের। আজ তাই স্বাভাবিকভাবেই মাঠে নামতে পারেননি। দিদিয়েরের অভাবটা মাঠে বেশ টের পাওয়া গেছে। তাঁর বদলে সোহেল সেভাবে মাঝমাঠটা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি।

ম্যাচের ১৩ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত শেখ জামাল। কিন্তু কিংয়ের শট চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈমের হাতে লেগে ফেরে। ফিরতি শটটি অবশ্য ক্লিয়ার করেন মিডফিল্ডার মানিক মোল্লা। এরপর ২৯ মিনিটে ওতাবেক বক্সের বাইরে থেকে নেন ফ্রি–কিক। নুরুল আবসার হেড করেছিলেন, কিন্তু চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক নাঈমের হাতে লেগে ফেরে বলটি। শেষ পর্যন্ত ৩৯ মিনিটে শেখ জামালকে হাসির উপলক্ষ এনে দেন সেই ওতাবেক, দর্শনীয় এক ফ্রি–কিকে। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি–কিক চট্টগ্রাম আবাহনীর নিক্সনের গায়ে লেগে গোলরক্ষককে বিভ্রান্ত করে জালে ঢোকে। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক খেলেছে শেখ জামাল। দ্বিতীয় গোলটি হয়েছে মনির হোসেন ও নুরুল আবসারের চমৎকার মেলবন্ধনে। বক্সের ডান পাশ থেকে মনিরের ক্রস, শূন্যে লাফিয়ে দারুণ হেডে নুরুল করেছেন ২-০। আর ম্যাচ শেষের ৭ মিনিট আগে পেনাল্টি থেকে একটা গোল শোধ করেন নিক্সন।