ওয়েম্বলিতে জার্মানদের কান্না

ওয়েম্বলিতে হারের পর এভাবেই হতাশায় পুড়েছেন জার্মানির সমর্থকেরা।ছবি: এএফপি

ছোট মেয়েটির মুখে আঁকা ছিল জার্মানির কালো–লাল–হলুদ রঙের পতাকা। বাবার কোলে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে প্রায় ৪৫ হাজার দর্শক, বেশির ভাগ ইংল্যান্ডের সমর্থক। তার মধ্যে হাজার দুয়েক জার্মান দর্শক। তাদের মধ্যেই বাবার কোলে বসেছিল ক্রন্দনরত ছোট মেয়েটি। টেলিভিশনের পর্দায় বারবার ভেসে আসছিল সেই কান্নার মুখ।

জার্মান দলের নিষ্প্রভ ঝলকহীন ফুটবল খেলার ৭৫ মিনিটে যখন ইংল্যান্ড রাহিম স্টার্লিংয়ের গোলে এগিয়ে গেল, তখন থেকেই মেয়েটি কাঁদছিল। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে সেই মেয়েটির কান্নার ঢেউ এসে লেগেছিল জার্মানিতে। জার্মানির ফুটবলপ্রেমীদের কাছে মঙ্গলবারের সন্ধ্যাটি ছিল বেদনার্ত।

দীর্ঘ করোনা শাটডাউন আর লকডাউনের খপ্পরে অতিষ্ঠ মানুষ ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন একটি উপলক্ষ পেয়েছিল। জার্মান দলের খেলার দিন কালো–লাল–হলুদ রঙে সেজেগুজে দলবদ্ধভাবে উল্লাস করে খেলা দেখছিল।

গতকালও তার ব্যতিক্রম হয়নি, কাজের দিনে মানুষ তাড়াহুড়া করে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় খেলা দেখার জন্য বাড়ির ড্রয়িংরুমে বা বাইরে বড় পর্দার সামনে হাজির হয়েছিল।

মুলার–নয়্যারদের হারের পর হতাশায় এভাবেই মুখ ঢাকেন জার্মান সমর্থকেরা।
ছবি: এএফপি

করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সংক্রমণের আতঙ্কে, কয়েক দিন থেকেই লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে না যাওয়ার জন্য জার্মানির ফুটবল ফ্যানদের নিরৎসাহী করা হচ্ছিল। তবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা বলে কথা।

১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জার্মানি, ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়েছিল। তারপর গত ৫৫ বছরে বড় টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে ইংল্যান্ডের কাছে জার্মানদের পরাজিত হওয়ার রেকর্ড ছিল না। জার্মান ফুটবলের গর্ব করার সেই রেকর্ড গতকাল ভেঙে গেল।

এমনিতেই জার্মান–ব্রিটিশদের চিরবৈরিতা সর্বজনবিদিত, কেউ কারও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে চায় না। তবে ফুটবলের আদি দেশের খেলাটি জার্মানিরা ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে।

জার্মান ফুটবলের ঝুলিতে রয়েছে চারটি বিশ্বকাপ আর তিনটি ইউরোপসেরার ট্রফি। এর বিপরীতে ইংল্যান্ডের ঝুলিতে রয়েছে কেবল একটি বিশ্বকাপ।

ইউরো টুর্নামেন্ট থেকে জার্মান দলের বিদায় নেওয়ার সঙ্গে বিদায় নিলেন ১৫ বছর ধরে জার্মান ফুটবল দলের কোচ ইওয়াখিম ল্যুভ। ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৭ কনফেডারেশন কাপ বিজয়ী এই ফুটবল–গুরুর গতকাল ছিল জার্মান দলের সঙ্গে শেষ ম্যাচ।

জার্মান দলের নতুন কোচ হিসেবে আসছেন ল্যুভর একসময়ের সহকারী হ্যান্সি ফ্লিক।

খেলা শেষে জার্মান টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইওয়াখিম ল্যুভ জানিয়েছেন, তিনি জার্মান জাতীয় দলের কোচ পদে না থাকলেও ফুটবলের জগৎ সহসাই ছাড়ছেন না।

ইউরোর শেষ ষোলো থেকে প্রিয় দলের বিদায়ের পর বিষাদ ভর করে জার্মান সমর্থকদের মধ্যে।
ছবি: এএফপি

বরাবরের মতো গতকালও হ্যানোভারের ফাউস্ট সংস্কৃতিকেন্দ্রের খোলা চত্বরে খেলা দেখছিলাম। জার্মান দলকে সমর্থন দিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। টেলিভিশনের বড় পর্দায় ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে, মুখে জার্মানির পতাকা আঁকা বাবার কোলে ক্রন্দনরত ছোট মেয়েটিকে বারবার দেখাচ্ছিল।

সেই কান্না দেখে আশপাশে কয়েকজনকে চোখ মুছতে দেখলাম। জার্মানির ফুটবল–ঈশ্বর আজ হতাশ করল জার্মান ফুটবলপ্রেমীদের। তাই জার্মানিতে গতকাল রাতটা ছিল দুঃস্বপ্নে ভরা।