করোনার কারণে ৭ জন নিয়ে ম্যাচ, শেষ মাত্র ৯ মিনিটে

বলিভিয়ান লিগে করোনার কারণে বিপাকে পড়েছিল রয়্যাল পারি (লাল জার্সি) ক্লাব।

ইকুয়েডরের সঙ্গে বলিভিয়ার কোনো সীমান্ত সংযোগ নেই। কিন্তু একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা দক্ষিণ আমেরিকার এ দুটি দেশের ফুটবলকে মিলিয়ে দিল এক মোহনায়।

গত মাসে ইকুয়েডরিয়ান সিরি ‘আ’তে বার্সেলোনা এসসির বিপক্ষে সাত খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নেমেছিল অকাস। খেলোয়াড়েরা কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ায় ক্লাবটির কিছু করার ছিল না। বলিভিয়ান ফুটবল লিগেও একই ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার।

করোনা হানা দেওয়ায় বলিভিয়ান লিগের শীর্ষস্থানীয় দল দ্য স্ট্রংগেস্টের বিপক্ষে বয়সভিত্তিক দলের সাত খেলোয়াড়কে নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হয় রয়্যাল পারি। দুটি ম্যাচের ফলই সহজে অনুমেয়।

স্ট্রংগেস্ট এবং বার্সেলোনা তো জিতেছেই, কিন্তু স্কোরলাইন? ৩-০! পার্থক্য শুধু ম্যাচের সময়ে। বার্সেলোনা-অকাস ম্যাচ টিকেছে ১৮ মিনিট, স্ট্রংগেস্ট-পারি ম্যাচের স্থায়িত্ব ছিল ৯ মিনিট।

বলিভিয়ান লিগের ঘটনাটা আগে বলা যাক। খেলোয়াড়েরা করোনায় সংক্রমিত হওয়ায় লিগ কর্তৃপক্ষ এবং প্রতিপক্ষের কাছে ম্যাচটা স্থগিত করার অনুরোধ করেছিল লিগ টেবিলে বর্তমানে চতুর্থস্থানীয় দল রয়্যাল পারি।

কিন্তু স্ট্রংগেস্ট কোচ গুস্তাভো ফ্লোরেন্তিন রাজি হননি, বলিভিয়ান ফুটবল ফেডারেশনও ম্যাচটা স্থগিত করেনি। অগত্যা বয়সভিত্তিক দলের সাত খেলোয়াড়কে নিয়ে মাঠে নামে রয়্যাল পারি।

ম্যাচে ২, ৫ ও ৭ মিনিটে লক্ষ্য ভেদ করে গোল উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছিল স্ট্রংগেস্ট। পরের মিনিটে পারি ডিফেন্ডার কেভিন রোজাস চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। ছয়জনের দলে পরিণত হয় পারি। বদলি খেলোয়াড়ও ছিল না দলটির। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচ হতে দলে অন্তত সাতজন খেলোয়াড় দরকার হয়, যা ছিল না রয়্যাল পারির।

রেফারি তাই বাধ্য হয়ে ৯ মিনিটে শেষ বাঁশি বাজিয়ে স্ট্রংগেস্টকে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করেন। গত এপ্রিলে বার্সেলোনার বিপক্ষেও অকাসের এক খেলোয়াড় মাঠে চোট পান। এরপর রেফারি আর ম্যাচটি চালাতে পারেননি, ৩-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সা।

ফুটবল কমিটির সভাপতি ক্রিস্টিয়ান আলেকোরেজা বলিভিয়ান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের পেশাদার স্কোয়াডে ৩৫ খেলোয়াড় আছে। এর বাইরেও একটি রিজার্ভ দল আছে, যাদের তারা খেলাতে পারে। তাই ম্যাচটা এভাবে পণ্ড হওয়ার দোষটা তো তাদেরই।’

কিন্তু রয়্যাল পারি সভাপতি লাজারো ফেরেইরার পাল্টা যুক্তি, খেলার চেয়ে খেলোয়াড়ের জীবন তাঁদের কাছে আগে। কারণ, ফুটবলাররা সবার আগে মানুষ, ‘আমরা বুঝতে পারিনি ভাইরাসটি (জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে) কীভাবে ও কত দিন ধরে সংক্রমিত হচ্ছে। যা–ই হোক, আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আবার ফিরে আসব।’

পারি ম্যানেজার পাবলো চাভেজ ম্যাচের আগে অভিযোগ করেছিলেন, স্ট্রংগেস্ট শুরুতে ম্যাচটি স্থগিত করার অনুরোধে রাজি হয়েছিল। কিন্তু পারির দুরবস্থার সুবিধা নিতে পরে তারা বেঁকে বসে।

ম্যাচে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি রয়্যাল পারি।
ছবি: টুইটার

ইকুয়েডর লিগে সেই ম্যাচে মারাত্মক চোট পাওয়া হাত নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন অকাস গোলরক্ষক জোহান লারা। এই চোটের কারণে তাঁর অন্তত ৪৫ দিন মাঠের বাইরে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন মাঠে নেমে ১৮ মিনিটের মাথায় আর পারেননি লারা। ম্যাচে তখন ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। লারা রেফারিকে কথাটা বলার পর তিনি শেষ বাঁশি বাজান এবং বার্সেলোনাকে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

গত মাসে কলম্বিয়ান ফুটবল লিগেও কাছাকাছি এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। দেশটির শীর্ষস্থানীয় লিগে চোট ও করোনা সংক্রমণের জন্য বয়াকা চিকোর বিপক্ষে ম্যাচে সাত খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হয় রিওনেগ্রো আগুইলাস।

শুধু কোভিড সংক্রমণের কারণেই মূল দলের ২২ খেলোয়াড়কে পায়নি তারা। এই দল নিয়েই ম্যাচের ৫৭ মিনিট পর্যন্ত ১১ জনের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ০-০ ব্যবধানে সমতায় ছিল আগুইলাস। ৭৯ মিনিটে দলটির জিওভান্নি মার্তিনেজ চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলে ম্যাচ সেখানেই শেষ ঘোষণা করতে বাধ্য হন রেফারি। ম্যাচের ফল?

৫৭ থেকে ৭৯ মিনিটের মধ্যে রিওনেগ্রো আগুইলাস হজম করেছিল ৩ গোল, অর্থাৎ এখানেও সেই ৩-০!