করোনার ক্ষতি পোষাতে ‘ভুতুড়ে টিকিট’

এই মাঠেরই লিগ ম্যাচের টিকিট বিক্রি করছে ডায়নামো ড্রেসডেন।ছবি: সংগৃহীত

করোনাকালে বেশ অনেকটা সময় ফুটবল খেলা বন্ধ ছিল। ইউরোপজুড়ে চলেছে মৃত্যুর মিছিল। কেবল ফুটবল কেন, বন্ধ ছিল সব খেলাই। মানুষের জীবনই যেখানে সংশয় ছিল, সেখানে খেলা কী করে হয়!

জুন–জুলাইয়ের পর ইউরোপে করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রকোপ কিছুটা কমে এলে ফুটবল আবার মাঠে গড়ায়। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে, জৈব সুরক্ষাবলয় তৈরি করে দর্শকবিহীন অবস্থায় মৌসুমটা শেষ করা গেছে। নতুন মৌসুমও শুরু হয়েছে। কিন্তু এই দর্শকবিহীন অবস্থা ক্লাবগুলোকে আর্থিকভাবে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

সমর্থকেরা ক্লাবের প্রাণ। নিজেদের মাঠে লিগের খেলায় সমর্থকদের কাছে টিকিট বিক্রি করে বড় অঙ্ক আয় করে থাকে ক্লাবগুলো। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো মোটামুটি এই পদ্ধতিতেই বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় করে থাকে। করোনার সময় যেহেতু দর্শক মাঠে আসা নিষিদ্ধ, তাই আয়ের এই পথটি একেবারেই বন্ধ ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর। বড় বড় ক্লাবগুলোর অবস্থায় যেখানে সঙিন, সেখানে ছোট ছোট ক্লাবগুলোর অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। রিয়াল, বার্সা বা বায়ার্নের মতো ক্লাবের তাও পৃষ্ঠপোষক আছে, অন্যান্য আয়ের উৎস আছে, কিন্তু ইউরোপের কোনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের তো তা–ও নেই।

ড্রেসডেন ক্লাব জার্মান তৃতীয় বিভাগের দল।
সংগৃহীত ছবি

জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাব ডায়নামো ড্রেসডেনও করোনার এই সময় ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের মাঠ ডার্মস্টাটে খেলা হচ্ছে দর্শক ছাড়াই। আয় নেই বললেই চলে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ড্রেসডেন একটা ফন্দি বের করেছে। ভুতুড়ে টিকিট বিক্রি করে তারা আবার ভালো অঙ্কের রাজস্ব আয় শুরু করেছে।

‘ভুতুড়ে টিকিট’ ব্যাপারটি একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এটি আর কিছুই না, টিকিট ছাপিয়ে বিক্রি করা। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেকোনো ম্যাচেই তারা ডার্মস্টাটের ধারণক্ষমতা যত, ঠিক তত টিকিটই বাজারে ছাড়বে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জেরবার জার্মানিতে এখনো মাঠে এসে খেলা দেখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ড্রেসডেন যে টিকিটগুলো ছাড়বে, সেগুলো কেনার আহ্বান জানানো হবে সমর্থকদের। যাঁর ইচ্ছা, তিনি টিকিট কিনবেন। কিন্তু বাড়িতে বসেই তাঁরা খেলা দেখবেন। এটা ক্লাবের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার লক্ষ্যে সমর্থকদের একধরনের সাহায্যই।

টিকিটগুলো বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্লাবের ওয়েবসাইটে ঢুকে সমর্থকেরা ম্যাচের টিকিট কিনছেন। তাঁরা মাঠে না এলেও সেই টিকিট বিক্রি বাবদ টাকা জমা পড়ছে ক্লাবের কোষাগারে। সম্প্রতি একটি ম্যাচে মোট ৭২ হাজার ১২২টি টিকিট ছেড়েছিল তারা। বিক্রি হয়েছে প্রায় সবই। ম্যাচটি তারা ৩–০ গোলে হারে। তবে ড্রেসডেন আশা করছে, আগামী ম্যাচগুলোতেও সমর্থকেরা টিকিট কিনে তাঁদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে রাখবেনই।

সমর্থকেরাই যে ক্লাবগুলোর প্রাণ। জার্মান তৃতীয় বিভাগে মোটামুটি অখ্যাত এই ডায়নামো ড্রেসডেন সেটিকে কাজে লাগিয়েছে। আর সমর্থকেরা প্রমাণ করে দিয়েছেন কতটা ক্লাব অন্তঃপ্রাণ