করোনার ভয়ে ৩৭ গোল হজম!

রিপডর্ফ-হোল্ডস্টেগেন ম্যাচের একটি মুহূর্ত। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের গোল করতে বাধা দেয়নি রিপডর্ফ।
ছবি: টুইটার

ধরুন, এমন এক দলের সঙ্গে ম্যাচ যাদের স্কোয়াডে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক খেলোয়াড় আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিপক্ষ দল খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই খেলোয়াড়কে বসিয়ে রাখতে বলবে। কিংবা ম্যাচটা মুলতবি রাখার অনুরোধ করবে। কিন্তু তবু সেই দলের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে হলে করণীয় কি? খুব সহজ, মাঠেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা। আর সেই সুযোগে প্রতিপক্ষ দল কী করতে পারে? সেটা তো আরও সহজ—গোলের পর গোল!

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এমন ঘটনাই ঘটেছে জার্মান ফুটবলের ১১তম স্তরে। লোয়ার স্যাক্সনি ক্রেইসলিগায় দুই অপেশাদার দল এসজি রিপডর্ফ ও এসভি হোল্ডস্টেডেনের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ ম্যাচের প্রস্তুতিতেই শুরু হয় জটিলতা। রিপডর্ফ সভাপতি প্যাট্রিক রিস্তো অভিযোগ করেন, হোল্ডস্টেডেনের আগের ম্যাচে করোনায় আক্রান্ত একজনের সংস্পর্শে এসেছেন ক্লাবটির এক খেলোয়াড়। এরপর খেলোয়াড়দের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করায় হোল্ডস্টেডেন। সবারই ‘নেগেটিভ’ ফল আসে।

কিন্তু রিপডর্ফের খেলোয়াড়েরা তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারেননি। সাবধানতা হিসেবে ১৪ দিনের ‘কোয়ারেন্টিন’ মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই হোল্ডস্টেডেনের খেলোয়াড়েরা মাঠে নামবেন, আর তাদের বিপক্ষে খেলাটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেনি রিপডর্ফ।

ম্যাচটা আপাতত মুলতবি রাখার দাবি জানিয়েছিল রিপডর্ফ। কিন্তু স্থানীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের দাবি কানে তোলেনি। যদিও সাবধানতা হিসেবে হোল্ডস্টেডেন একাদশ বদলে মাঠে নেমেছিল। তবু নিশ্চিন্ত হতে পারেননি রিপডর্ফের খেলোয়াড়েরা। যদিও তাদের সামনে পথ ছিল মাত্র দুটি—হয় মাঠে নামো নয় তো বড় অঙ্কের জরিমানা গোনো। বাধ্য হয়েই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় রিপডর্ফ।

তবে দলের সবাই মাঠে ছিল না। জার্মান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৭ খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নেমেছিল রিপডর্ফ। আর খেলেছেও একটু অন্যভাবে—সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ফুটবল খেলা আর কি! প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধরার বালাই নেই, কোনো অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে না। এভাবে ফুটবল খেলার পরিণাম কি হতে পারে তা সকলেরই জানা। গোলের পর গোল করে গেছেন হোল্ডস্টেডেনের খেলোয়াড়েরা। আর দূরত্ব বজায় রেখে তা দেখেছেন রিপডর্ফের খেলোয়াড়েরা। শেষ পর্যন্ত স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩৭-০!

‘নিরাপদ থাকতে কিছু খেলোয়াড় হোল্ডস্টেডেনের খেলোয়াড়দের সংস্পর্শে যেতে চায়নি। এর দায় কোচিং স্টাফ এবং ক্লাব পরিচালকদের, তারা সেটা মেনেও নিচ্ছেন।
প্যাট্রিক রিস্তো, রিপডর্ফ সভাপতি

রিপডর্ফ সভাপতি প্যাট্রিক রিস্তো খেলোয়াড়দের এমন আচরণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘নিরাপদ থাকতে কিছু খেলোয়াড় হোল্ডস্টেডেনের খেলোয়াড়দের সংস্পর্শে যেতে চায়নি। এর দায় কোচিং স্টাফ এবং ক্লাব পরিচালকদের, তারা সেটা মেনেও নিচ্ছেন। সংক্রমণ এড়ানোই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। একই সময়ে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারেও সাবধান হতে হবে ক্লাবকে। শাস্তি শুধু আর্থিক ক্ষতিই ডেকে আনবে।’

তবে হোল্ডস্টেডেন ক্লাবের খেলোয়াড়দের ভাষ্য সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের গোলরক্ষক ফ্লোরিয়ান শিয়েরওয়াটার বলেন, ‘তাদের না খেলার কোনো কারণই নেই। এডেলস্টর্ফের (আগের ম্যাচের দল) সেই খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমাদের কারও সংস্পর্শ ঘটেনি। বাকিদের মতো আমিও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে আমাদের দলের অর্ধেক খেলোয়াড়ের পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।’