কর্দমাক্ত মাঠে ব্রাজিলিয়ান–আর্জেন্টাইন ঝলকে জিতল বসুন্ধরা

রবসনের সঙ্গে গোল উদযাপন রাউল বেসেরার। তাঁর গোলেই জিতেছে বসুন্ধরা কিংস।ছবি: প্রথম আলো

বলের দখল কিংবা পাস খেলাই অসম্ভব। প্রাধান্য পেল শরীরনির্ভর খেলা। ভারী কর্দমাক্ত মাঠে যেমন ফুটবল হয় আর কী! আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেডের মধ্যকার ম্যাচটা হয়েছে এমনই।

যোগ করা সময়ের গোলে শেষ হাসি হেসেছে বসুন্ধরা (১–০)। একমাত্র গোলটি করে ম্যাচের নিষ্পত্তি করেছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল বেসেরা। গোলশূন্য সমতায় ম্যাচটি শেষ হতে যাচ্ছে, ধরে নিয়েছিলেন সবাই।

কিন্তু দলে রবসন রবিনিওর মতো মিডফিল্ডার ও বেসেরার মতো স্ট্রাইকার থাকলে যা হয়! যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে রবসনের আলতো চিপে খুলে যায় মোহামেডান রক্ষণের তালা। ঊরুতে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাঁ পায়ের ভলিতে বেসেরার গোলটিও দুর্দান্ত।

২০ মিনিটে গোলকিপার মোহাম্মদ সুজন সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ১০ জনের দলে পরিণত হয় মোহামেডান। কিন্তু তাদের খেলা দেখে কে বলবে, বসুন্ধরার মতো চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে এক খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলছে!

রক্ষণভাগ পুরো জমাট, মাঝমাঠে অধিনায়ক উরু নাগাতার দুই পা যেন চলছিল বুলডোজারের মতো! ভারী মাঠে এই বাধা দূর করে গোলমুখ খোলার কোনো কৌশল দেখাতে পারছিলেন না রবিনিও, এলিটা কিংসলি ও বেসেরা। ৭৬ মিনিটে বসুন্ধরা সেন্টারব্যাক ইয়াসিন খান দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে দুই দলই হয়ে পড়ে ১০ জনের। এরপর অন্তিম মুহূর্তে বুদ্ধিদীপ্ত সেই গোল।

ভলিতে গোলটি করার পর বেসেরা।
ছবি: প্রথম আলো

আজ আক্রমণভাগে পুরো শক্তি নিয়েই মাঠে নেমেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ব্রাজিলিয়ান প্রাণভোমরা রবসন ফেরায় ৪–৩–৩ ফরমেশনে কিংসলিকে আজ খেলানো হয় রাইট উইংয়ে। কর্দমাক্ত মাঠে রবসন–কিংসলি–বেসেরা রসায়নটা জমেনি। ৫৬ মিনিটে মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয় কিংসলিকে।

বসুন্ধরার মতো দলের বিপক্ষেও দুই স্ট্রাইকার খেলানোর সাহস দেখিয়েছেন মোহামেডানের কোচ শন লেন। মালির সুলেমান দিয়াবাতের সঙ্গে ক্যামেরুনের ইয়াসান আউচিং–দুজনেই গতিসম্পন্ন ফরোয়ার্ড। ইরানি ডিফেন্ডার খালেদ শাফির অনুপস্থিতিতে তপু ও ইয়াসিনের জুটি তাদের ভালোই সামাল দিয়েছে।

শুরুর ২ মিনিটেই গোল হজম করতে পারত বসুন্ধরা। রাকিব খানের কর্নারে দূরের পোস্ট থেকে মুনজুর কুলদিয়াতির হেড জটলা থেকে তপু বর্মণ ‘ক্লিয়ার’ করলেও পোস্টের মধ্যে ছিল। সেভ করেন গোলকিপার আনিসুর রহমান। ১৩ মিনিটে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ম্যাচের সেরা মুভ বিপলু আহমেদ, রবসন ও বেসেরার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পূর্ণতা পায়নি বক্সের মধ্যে বেসেরা বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারায়।

বক্সের বাইরে হ্যান্ডবল করায় লাল কার্ড দেখেন মোহামেডান গোলকিপার মোহাম্মদ সুজন।
ছবি: প্রথম আলো

২০ মিনিটে বিপলুর উদ্দেশে রবসন থ্রু দিলে পোস্ট ছেড়ে বক্সের বাইরে এসে ‘হ্যান্ডবল’–এর অপরাধ করে লাল কার্ড দেখেন মোহামেডান গোলকিপার মোহাম্মদ সুজন। মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা প্রতিবাদ করায় কিছুটা সময় এ নিয়ে মাঠে উত্তেজনাও ছড়াল। সুজন লাল কার্ড দেখায় মাঠে নামেন গোলকিপার আহসান হাবিব। তুলে নেওয়া হয় মিডফিল্ডার অনিক হোসেনকে।

এক খেলোয়াড় হারিয়ে দমেনি শন লেনের দল। প্রতি–আক্রমন ও সেট পিসে পরীক্ষা নিয়েছে বসুন্ধরার। বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাইড পোস্ট। ৩৩ মিনিটে কামরুল হাসানের কর্নার থেকে কুলদিয়াতির হেড সাইড পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

দ্বিতীয়ার্ধেও ভালো ফুটবল খেলেছে মোহামেডান। ৬৫ মিনিটে দিয়াবাতের শট সাইড পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ব্রাজিলিয়ান রবসনের মূল জাদুটাই তাঁর পায়ের কারুকাজ। ভারী মাঠের জন্য আজ তা দেখানো কঠিন ছিল। বেসেরাকে দিয়ে গোল করিয়ে ঝলকটা দেখিয়েছেন শেষ সময়ে।

এই জয়ে ১৭ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বসুন্ধরা। সমানসংখ্যক ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে মোহামেডান।