কলসিন্দুরের মেয়েরা এবার বইয়ের পাতায়
জাতীয় নারী দলের ফুটবলার তহুরা খাতুন রোমাঞ্চিত। এ বছরই উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছেন এই স্ট্রাইকার। লড়াই–সংগ্রাম ছাপিয়ে এবার নিজের জীবনের উঠে আসার গল্পটা নিজেই পড়বেন পাঠ্যবইয়ে!
শুধু তহুরা নয়, মারিয়া মান্দা, সানজিদা খাতুনসহ ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের একদল মেয়ের ফুটবলে আসার গল্প ও তাদের সাফল্য ছাপা হয়েছে একাদশ শ্রেণির ইংরেজি প্রথমপত্র বইয়ে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একাদশ শ্রেণির এ বছরের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কলসিন্দুরের নারী ফুটবলারদের গল্প।
ইংলিশ ফর টুডে বইয়ের ৮৮ নম্বর পৃষ্ঠায় বড় করে দেওয়া একটা ছবি, যেখানে সবার সামনে গোল উদ্যাপনে ব্যস্ত জাতীয় দলের মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দা। ‘দ্য আনবিটেন গার্লস’ (অপরাজেয় মেয়েরা) এই শিরোনামের গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে মারিয়া, সানজিদারা কীভাবে ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসে ফুটবল রাঙাচ্ছে।
মাত্র শৈশব পেরোনো মেয়েরা কীভাবে ফুটবল শিখেছে সেটাই লেখা আছে এই গল্পে।
ফুটবল কলসিন্দুর গ্রামের মেয়েদের জীবন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ফুটবল খেলার সুবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে একাধিকবার দেখা করতে পেরেছে সানজিদা, মারিয়ারা। অসচ্ছল পরিবারের এসব মেয়ে এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী শুধু ফুটবল খেলার কারণেই।
তারা শুধু ফুটবলে আলো ছড়ায়নি, তাদের সাফল্য গ্রামের অন্ধকার দূর করেছে বিজলী বাতির রোশনাইয়ে। গল্পে উঠে এসেছে এসব ফুটবলারের লড়াই–সংগ্রামের কথা।
মারিয়া, সানজিদাদের ফুটবল শিখিয়েছেন কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মফিজ উদ্দিন। গল্পে উঠে এসেছে এই শিক্ষকের কথাও।
মেয়েদের শুধু ফুটবল খেলাটাই শেখাতে চেয়েছিলেন মফিজ উদ্দিন। এই ফুটবলাররা বইয়ের পাতায় স্থান পাবে তা কখনো ভাবেননি তিনি। মফিজ উদ্দিন বলেন ‘এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এটা আমার জন্য গর্বের একটা বিষয়। আমার পরিশ্রম সার্থক। ওরা ভালো কিছু করবে সেটা জানতাম। কিন্তু এই মেয়েরা বইয়ের পাতায় আসবে এটা কখনো কল্পনা করিনি।’
পাঠ্যবইয়ে নিজেকে দেখতে পেয়ে একটু অবাকই তহুরা, ‘আমার নিজের কথা আমাকেই পড়তে হবে, আবার পরীক্ষার খাতায় লিখতে হবে এ প্রসঙ্গে। এটা ভেবেই ভালো লাগছে।’
সানজিদা মনে করেন কলসিন্দুরের মেয়েদের উঠে আসার গল্প অন্য মেয়েদের অনুপ্রেরণা দেবে, ‘আমরা এই পর্যায়ে আসতে কতটা লড়াই করেছি সবাই সেটা এই গল্পের মাধ্যমে জানতে পারবে। আমাদের গল্প পড়ার পর আরও অনেকে ফুটবলে আগ্রহী হয়ে উঠবে।’