কুমিল্লায়ও ব্রাজিলিয়ান ঝলক

আবারও দল জেতালেন রবসন।
ছবি: বাফুফে

ঘরের কাছে জাতীয় দলের তারকাদের সঙ্গে খেলছেন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। এমন দিনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি কুমিল্লাবাসী। করোনাকালীন নতুন স্বাভাবিকে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে মাঠে এসে উৎসাহ দিয়েছেন ঘরের দল হিসেবে খেলা বসুন্ধরা কিংসকে। নিজেদের হোম ভেন্যুতে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে বসুন্ধরাও পেয়েছে প্রত্যাশিত জয়। যদিও সেটি এসেছে ব্রাজিলিয়ান রবসন ডি সিলভার একমাত্র গোলের কষ্টসাধ্যে।

চলতি মৌসুমে কুমিল্লার ভাষাশহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামকে নিজেদের হোম ভেন্যু বানিয়েছে বসুন্ধরা। মাঠটিকেও নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে তারা। পূর্ব গ্যালারিতে জার্সির অনুকরণে লাল রঙে ক্লাবের নাম লেখা। সেখানে বসেই আজ স্টেডিয়াম মাতিয়ে রাখলেন কয়েক হাজার দর্শক। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি ঢাকা, চাঁদপুর থেকে বাস ভরে ভরে দর্শক আসতে দেখা গেছে। লিগের আগে করোনার জন্য দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়ে জয়ের স্বাদ নিয়েই বাড়ি ফিরলেন তাঁরা।

সমতল মাঠে সবুজ ঘাস। খেলা দেখতে এসে মাঠের প্রশংসা করেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও। ভালো মাঠে দুর্দান্ত খেললেন রবসন, জোনাথন ফার্নান্দেজ, মোহাম্মদ ইব্রাহিমরা। বসুন্ধরার ১–০ গোলের জয় যে দাপট বোঝানোর জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়।

বসুন্ধরার সামনে পাঁচ ডিফেন্ডারের রক্ষণ দেয়াল দাঁড় করিয়েছিল ব্রাদার্স। বিদেশি দুই সেন্টারব্যাক ফুরকাত জন কাসানোভ ও ওসাই মানডের সঙ্গে স্থানীয় মুন্না মিয়া। শৃঙ্খলাবদ্ধ থেকে রক্ষণের কেন্দ্র জমাট বেঁধে রেখেছিলেন তাঁরা। দুই উইংব্যাক ফয়সাল মাহমুদ ও উত্তম চন্দ্রও ভেতরের দিকে ঢুকে জমাট রাখতে সহায়তা করেছেন। পাঁচ ডিফেন্ডারের সঙ্গে চার মিডফিল্ডারের উদ্দেশ্যও ছিল নিজেদের গোলমুখে তালা ঝুলিয়ে রাখা।

এমন জটলা পাড়ি দিয়ে গোলের মুখ খোলাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। তাই রবসন, জোনাথন ফার্নান্দেজ ও রাউল বেসেরা আক্রমণের ঝড় তুলে পাগল করে দিলেও গোলের মুখ খোলা গেল না প্রথমার্ধে। ব্রাদার্স গোলরক্ষক তিতুমীর চৌধুরীও ভালো একটি সেভ দিয়ে দলকে বাঁচিয়েছেন।

ব্রাদার্সকে পুরো ম্যাচে ব্যস্ত রেখেছেন রবসন।
ছবি: বাফুফে

দ্বিতীয়ার্ধে আর আটকে রাখা যায়নি তারকাসমৃদ্ধ বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। প্রথমার্ধে আলমগীর কবির ও জোনাথন ফার্নান্দেজকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলিয়ে ৪–২–৩–১ ফরমেশনে একাদশ সাজিয়েছিলেন অস্কার ব্রুজোন। দ্বিতীয়ার্ধে ফার্নান্দেজকে আক্রমাণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। আর দুই উইঙ্গার মাহবুবুর রহমান ও বিপলু আহমেদের জায়গায় বদলি হিসেবে পাঠানো হয় মতিন মিয়া ও মোহাম্মাদ ইব্রাহিমকে। এতেই খুলে যায় ব্রাদার্সের গোলের তালা।

বদলি নেমে গোলটি করিয়েছেন ইব্রাহিমই। ৬৪ মিনিটে তাঁর কাটব্যাকে বক্সের মধ্যে থেকে রবসনের ডান পায়ের প্লেসিং। ম্যাচের মীমাংসা করে দেওয়া গোল। এ নিয়ে লিগে ৩ গোল হলো তাঁর।

আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা ব্রাজিলিয়ান রবসন আজও ছিলেন আক্রমণাত্মক ছন্দে। ম্যাচের ১৪ মিনিটে রাউল বেসেরার সঙ্গে ওয়ান টু করে বক্সে ঢুকে শটে নিয়েছিলেন রবসন। স্লাইড করে ঠেকাতে গিয়ে বল হাতে লাগতে দেখা যায় ব্রাদার্সের উজবেক ডিফেন্ডার ফুরকাতের। বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়েরা পেনাল্টির দাবিও তুলেছিলেন। কিন্তু কর্ণপাত করেননি রেফারি।

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে সমর্থকেরা হাজির বসুন্ধরা কিংসের খেলা দেখতে।
ছবি: বাফুফে

পুরো ম্যাচেই রবসনকে ঠেকাতে ব্যস্ত ছিলেন ব্রাদার্স ডিফেন্ডাররা। ব্রাদার্স গোলরক্ষক তিতুমীর দুর্দান্ত সেভ না দিলে ১৬ মিনিটেই রবসনের কল্যাণে এগিয়ে যেতে পারত বসুন্ধরা। আউটসাইড–ইনসাইড ডজে ব্রাজিলিয়ান সুরভি ছড়িয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে শট নিলে সেভ করেন তিতুমীর।

৪ মিনিট পরেই আবার। রবসনের সঙ্গে ওয়ান টু করে বক্সে ঢুকে গোলমুখে বেসেরার উদ্দেশে পাস দিয়েছিলেন জোনাথন। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের করা মার্কিংয়ে থাকায় পা ছোঁয়াতে পারেননি বেসেরা। ২৬ মিনিটে রবসনের কর্নার থেকে গোলমুখে আনমার্কড থাকা অবস্থায় হেড করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর হেড ক্রসবার উঁচিয়ে বাইরে।
ফেডারেশন কাপের টানা পাঁচ ম্যাচে গোল করেছিলেন আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড।

লিগের প্রথম ম্যাচেও গোল করেছিলেন। কিন্তু এরপর টানা দুই ম্যাচ গোলশূন্য বেসেরা। দলের মূল স্ট্রাইকার টানা দুই ম্যাচ গোল পেলেন না, এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে পারেন বসুন্ধরার সমর্থকেরা। কিন্তু তাতে কী? ব্রাজিলিয়ান রবসন তো গোলের মধ্যেই আছেন আর দলও তুলে নিয়েছে টানা তৃতীয় জয়।