কে বলে মেসিকে ছাড়া বার্সা ভালো খেলে না!

মেসি না খেললেও আলো ছড়িয়েছেন গ্রিজমান ও ডেম্বেলে।ছবি: রয়টার্স

দুই ম্যাচ। দুই জয়। গোল করেছে ৭টি। খায়নি একটিও। কে বলে লিওনেল মেসিকে ছাড়া বার্সেলোনা ভালো খেলতে পারে না!

চ্যাম্পিয়নস লিগে এ নিয়ে পরপর দুই ম্যাচে দলের সেরা তারকাকে বিশ্রামে রেখেছেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমান। মেসির বয়স হয়ে গেছে ৩৩। এ বয়সে একটু তো বিশ্রাম দিয়ে দিয়েই খেলাতে হয়। তার ওপর বার্সার সামনে কঠিন সূচি অপেক্ষায়। তুলনায় সহজ প্রতিপক্ষ পেয়ে যাওয়ায় আর চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম তিন ম্যাচেই জিতে যাওয়ায় এই দুই ম্যাচেই মেসিকে বসিয়ে রাখার সুযোগটা নিতে পেরেছেন কোমান। দুই ম্যাচেই মেসিকে ছাড়াও কী দারুণ খেলল বার্সেলোনা!

গত সপ্তাহে দিনামো কিয়েভের মাঠে ৪-০ গোলে জিতেছিলেন গ্রিজমান-ব্রাথওয়েইটরা। কাল ফেরেনৎসভারোসের মাঠেও জয়টা এসেছে অনায়াসেই। ৩-০ গোলে জয় নিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে এখন পর্যন্ত ১০০-তে ১০০ নম্বরই পাচ্ছে বার্সা। ধরে রেখেছে শতভাগ জয়ের ধারা, পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিই জিতেছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচটা বার্সা খেলবে আগামী মঙ্গলবার নিজেদের মাঠে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসের বিপক্ষে।

মেসি না খেলায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি লাভটা হয়েছে আঁতোয়ান গ্রিজমানের। হতে পারে সেটি মাঠে খেলার অবস্থানে বদল আসে বলে। মেসি আর গ্রিজমান সাধারণত মাঠের একই জায়গায় খেলেন। কিন্তু বার্সায় মেসি আছেন বলেই গ্রিজমানকে জায়গা বদল করে খেলতে হয়। মেসি না থাকায় নিজের পছন্দের জায়গায় খেলার সুযোগটাই হয়তো পাচ্ছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।

নাকি মেসির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে ঝামেলার যে গুঞ্জন ছিল, সেটি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে এসে মিটিয়ে দেওয়ার পর আরও মন দিয়ে খেলতে পারছেন বলেই সেটির সুফল পাচ্ছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড? কদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে মেসির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা দারুণ বলে জানিয়েছেন গ্রিজমান, বার্সায় আসার পর মেসি তাঁকে ‘সব সময় তোমার পাশে আছি’ বলেছেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে মেসির বিভেদের গুঞ্জনে জল ঢেলে দিয়েছেন। এরপর থেকে বার্সার জার্সিতে এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচেই গোল পেলেন ‘গ্রিজি’! কাল ফেরেনৎসভারোসের মাঠেও বার্সার সহজ জয়ের শুরুটা তাঁর পায়ে।

মেসি তো ছিলেনই না, বার্সা কোচ বিশ্রামে রেখেছেন চোট কাটিয়ে ফিরতে থাকা গোলকিপার মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন ও ফিলিপে কুতিনিওকে। চোটের কারণে ছিলেন না ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে ও তরুণ উইঙ্গার আনসু ফাতি। ৪-২-৩-১ ছকে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা মার্টিন ব্রাথওয়েইটের পেছনে গ্রিজমান, তাঁর দুপাশে ত্রিনকাও ও দেম্বেলে—এই ছিল বার্সার আক্রমণ। কিন্তু এই বার্সাই প্রথম ৩০ মিনিটেই ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলেছে পুঁচকে ফেরেনৎসভারোসকে।

হাঙ্গেরিয়ান দলটির মাঠে ১৪ মিনিটে বার্সার প্রথম গোল গ্রিজমানের পায়ে। দারুণ গোলই বটে! লেফটব্যাক জর্দি আলবার ক্রসে দুর্দান্ত ব্যাক ফ্লিকে বল জালে জড়ান গ্রিজমান। আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকলে যা হয় আর কী! ছয় মিনিট পর আবার গোল বার্সার। এবার গোলদাতা ব্রাথওয়েইট। গত কিছুদিনে বেশ ভালো ফর্মে আছেন ড্যানিশ এই স্ট্রাইকারও। উসমান দেম্বেলের পাসে তাঁর গোলটি গত তিন ম্যাচে ব্রাথওয়েইটের চতুর্থ গোল। এর আগে কিয়েভের মাঠে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি।

সর্বশেষ তিন ম্যাচে চার গোল করেছেন ব্রাথওয়েইট।
ছবি: রয়টার্স

ব্রাথওয়েইটের গোলটি অবশ্য বার্সার দারুণ দলীয় আক্রমণেরও ফসল। ৩৩ পাসে গড়া আক্রমণের ফসল হয়ে এসেছে গোলটি! সেই গোলে ‘অ্যাসিস্ট’ করা দেম্বেলে ২৮ মিনিটে নাম ওঠালেন স্কোরশিটে। ফরাসি উইঙ্গারের গোলটি পেনাল্টি থেকে। ফেরেনৎসভারোস বক্সে ব্রাথওয়েইটকে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় বার্সা।

এত গোলে এগিয়ে যাওয়া গেছে বলেই কি না, এরপর আর খেলায় তেমন গা করেনি বার্সা। হয়তো শক্তি জমিয়ে রেখেছে পরের ম্যাচগুলোর জন্য। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সের্হিও বুসকেতস ও জর্দি আলবাকে তুলে নেন বার্সা কোচ কোমান, দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে তুলে নেন গ্রিজমান ও ডিফেন্ডার ক্লেমঁ লংলেকেও। নামিয়েছেন রিকি পুচ, কার্লেস আলেনিয়ার মতো তরুণদের।

তা যা-ই হোক, জয়টা তো সহজেই এসেছে। ২০০২-০৩ মৌসুমে আরেক ডাচ্‌ কোচ লুই ফন হালের অধীনে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে প্রথম পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিই জিতেছিল বার্সা। সেবার অবশ্য গ্রুপ পর্বের সব কটি ম্যাচেই জিতেছে। সে কীর্তি ছুঁতে হলে আগামী মঙ্গলবার জুভেন্টাসের বিপক্ষেও জিততে হবে বার্সাকে।

পাঁচ ম্যাচ জিতলেও এখনো গ্রুপসেরা হয়ে বার্সার শেষ ষোলোতে যাওয়া পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। ৫ ম্যাচে বার্সার পয়েন্ট ১৫, দুইয়ে থাকা জুভেন্টাসের পয়েন্ট ১২। জুভেন্টাসের মাঠে প্রথম দেখায় ২-০ গোলে জেতায় মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে বার্সা। মঙ্গলবার তাই বার্সার মাঠে ম্যাচটা ড্র হলে, এমনকি ১-০ বা ২-০ গোলে হারলেও শেষ ষোলোতে গ্রুপসেরা হয়েই যাবে বার্সা। তবে জুভেন্টাস তিন গোলের বেশি করলে এবং দুই গোল বা তার বেশি ব্যবধানে জিতলে জুভেন্টাসই গ্রুপসেরা হবে।