কেমন হবে এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার একাদশ?

মেসি ঝলসে উঠবেন আরেকবার?ছবি : রয়টার্স

এই মৌসুমে বার্সেলোনার শুরুটা যে একদম দুর্দান্ত হয়েছে, বলা যাবে না। সেভিয়ার সঙ্গে ড্র, হেতাফের সঙ্গে পরাজয়—বার্সা মাঝেমধ্যেই খোঁড়াচ্ছে। তবে নতুন রোনাল্ড কোমান যে মেসি-ফাতিদের নিয়ে নতুন কিছু করতে চাইছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে বেশ। দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়ার জন্য তাঁর উদ্যোগটা চোখে পড়ছে। সে উদ্যোগের পথে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে নিজেদের মাঠে আজকেই নামবে কাতালানরা; বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। এল ক্লাসিকো জ্বরে তাই কাঁপছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

কোমানের নিজেরও কি খানিক অস্থির-অস্থির লাগছে না? লাগাই স্বাভাবিক। ১৯৯৫ সালে খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাব ছাড়ার পর একটা স্বপ্নই মনে পুষে রেখেছিলেন, একদিন বার্সার কোচ হবেন। সে সুযোগ এল, তাও অনেক অস্থির সময়ে। হাজারো ঝড়-ঝাপটায় বার্সার যখন টালমাটাল অবস্থা। এই অবস্থায় দলকে স্থিতিশীল করা, স্থিতিশীল করার মাধ্যমে নিজের চাকরি পাকা করার ব্যবস্থা করা— কোমানের মাথায় চিন্তা অনেক। আর আজকের ম্যাচ শেষে সে চিন্তা হয় বাড়বে, নয়তো কমবে। চিন্তা যাতে কমে, সে লক্ষ্যে দরকার সুনিশ্চিত পরিকল্পনা। সে পরিকল্পনাটা কেমন হতে পারে কোমানের?

এ মৌসুমের শুরু থেকেই চিরপরিচিত ৪-৩-৩ ছক থেকে বেরিয়ে ৪-২-৩-১ ছকে খেলছে বার্সেলোনা। নিয়মিত গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন চোটের কারণে মাঠের বাইরে, তাঁর জায়গায় খেলছেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক নেতো। চোটের কারণে এত দিন লেফটব্যাক জর্দি আলবা খেলেননি, তবে ক্লাসিকোর স্কোয়াডে রাখা হয়েছে তাঁকে। আলবা যত দিন ছিলেন না, তাঁর জায়গায় খেলে গিয়েছেন সের্হিনিও দেস্ত। সদ্যই আয়াক্স থেকে দলে আসা এই আমেরিকান তরুণ মূলত রাইটব্যাক। আলবা কিংবা দ্বিতীয় লেফটব্যাক জুনিয়র ফিরপো, চোটের কারণে দুজনই বাইরে ছিলেন, তাই দলে এসে নিজের পছন্দের জায়গায় এখনো খেলা হয়নি দেস্তের। ক্লাসিকোতেই হয়তো চলে আসতে পারে সেই সুবর্ণ সুযোগ, বিশ্বব্যাপী দর্শকদের সামনে দেস্ত দেখিয়ে দিতে পারেন, ঠিক কী কারণে বার্সা কিনেছে তাঁকে। দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে যথারীতি জেরার্ড পিকে ও ক্লেমঁ লংলে জুটি বাঁধবেন।

কোমানের ৪-২-৩-১ ছকে খেলানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে দলের সবচেয়ে বড় তারকাদের ঠিকঠাক ব্যবহার করার ইচ্ছা। আগের দুই কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে কিংবা কিকে সেতিয়েন, কেউই দলের বেশ কিছু খেলোয়াড়কে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেননি। এদের মধ্যে সবার আগে দুজনের নাম আসে—ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও ফিলিপ কুতিনিও। ৪-৩-৩ থেকে সরে এসে ৪-২-৩-১ এ খেলানোর ফলে ডি ইয়ং, কুতিনিও, মেসি—সবাই মোটামুটি নিজেদের পছন্দের জায়গাতেই খেলতে পারছেন। কুতিনিওর সমস্যার কথা সবার জানা। প্রথাগত ‘নম্বর টেন’ বা সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে তেমন খেলতে পারেন না তিনি। তাঁকে ঠিকঠাক ব্যবহার করার জন্য ৪-২-৩-১ ছকটা তাই আদর্শ। ওদিকে আয়াক্সে আদর্শ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে আলো ছড়ানো ডি ইয়ং বুসকেতসের কারণে গত মৌসুমে পছন্দের জায়গায় খেলতে পারেননি। খেলেছেন আরেকটু এগিয়ে, অনেকটা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকায়। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে ওদিকে বুসকেতস নিজেও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কাজ ঠিকঠাক করতে পারতেন না, প্রতিপক্ষের প্রেসে ভেঙে পড়তেন প্রায়ই।

অনেক কিছুই নির্ভর করবে ডি ইয়ংয়ের ওপর।
ছবি : রয়টার্স

এই সমস্যার সমাধান করার জন্য এবার কোমান দুজনকে পাশাপাশি খেলাচ্ছেন, আগে-পিছে না। আয়াক্সে ডি ইয়ং প্রায় সময়েই ম্যাচের মধ্যে তৃতীয় সেন্টারব্যাকের ভূমিকা নিতেন, রক্ষণভাগ থেকে বল নিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে উঠে আক্রমণ গড়ে দেওয়ার কাজ করতেন। সে কাজটা এখন বার্সাতে করতে পারছেন ডি ইয়ং। দুই সেন্টারব্যাকের পাশে অনেকটা ছদ্ম লেফটব্যাকের জায়গা নিয়ে মূল লেফটব্যাক (দেস্ত বা আলবা) কে ওপরে ওঠার লাইসেন্স দিচ্ছেন ডি ইয়ং। ফলে নিচ থেকে আক্রমণের কাজটা বেশ ভালো ভাবে করতে পারছে বার্সেলোনা। ওদিকে বয়সের কারণে বুসকেতস যেহেতু রক্ষণভাগ আগলে রাখার কাজটা অত ভালোভাবে করতে পারছেন না, সেহেতু তাঁর ভূমিকা থাকবে একটু ওপরে উঠে মেসি-কুতিনিওদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা।

ডি ইয়ংয়ের ছদ্ম-লেফটব্যাক ভূমিকার কথা বলা হচ্ছিল। ডাচ তারকা নিচে থাকার কারণে লেফটব্যাক হিসেবে আলবা উঠে যাওয়ার লাইসেন্স পাচ্ছেন। ওপরে উঠে সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কুতিনিও আর লেফট উইঙ্গার ফাতির সঙ্গে আক্রমণভাগে দুর্দান্ত এক ত্রিভুজ গঠন করছেন। বার্সার এই ত্রিভুজ আক্রমণের বাড়তি চাপ নিয়ে নিচ্ছে, ফলে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা মেসির ওপর আক্রমণের চাপ কমছে, আগের মৌসুমে যে চাপটা অতিরিক্ত ছিল। দলের মূল গোলদাতা, মূল গোল সহায়তাকারী—দুই-ই ছিলেন মেসি। আবার নিজেই নিচে নেমে প্লেমেকিংয়ের কাজ করতেন।

এবার সে চাপ অনেকটাই কমেছে কুতিনিও, আলবা, ফাতি ‘ত্রয়ী’র কল্যাণে। ক্লাসিকোতে মেসি ছাড়াও এই তিনজনের দিকে বাড়তি নজর রাখবে রিয়াল। সদা সতর্ক থাকবেন ওদিকে খেলা ফেদেরিকো ভালভার্দে, নাচো ফার্নান্দেজ ও রাফায়েল ভারান।
তবে ডান দিকে গ্রিজমান কেমন খেলবেন, তার ওপরেও নির্ভর করতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। ডি ইয়ং, মেসি ও কুতিনিওকে পছন্দের জায়গায় খেলাতে গিয়ে কোমান যে একজনকে ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না, তিনি হলেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। রাইট উইংয়ে গ্রিজমানকে কেমন যেন অচেনা মনে হয়। এখন সেখানে গ্রিজমান থাকবেন, না তাঁর জায়গায় তরুণ ত্রিনকাওকে খেলানো হবে, সেটাও দেখার বিষয় আজ।

সম্ভাব্য একাদশ:
নেতো
সের্হিনিও দেস্ত, জেরার্ড পিকে, ক্লেমঁ লংলে, জর্দি আলবা
সার্জি বুসকেতস, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং
আতোয়ান গ্রিজমান, ফিলিপ কুতিনিও, আনসু ফাতি
লিওনেল মেসি