কোচ বদলাতেই ভাগ্য বদলাল সাইফ স্পোর্টিংয়ের

গোলের পর সাইফ স্পোর্টিং খেলোয়াড়দের উদযাপনছবি: প্রথম আলো

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বেলজিয়ান কোচ পল পুট বিদায় নিয়েছেন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। কোচ বিদায়ের পর আজই প্রথম মাঠে নামে ফেডারেশন কাপের রানার্সআপ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।

সহকারী কোচ জুলফিকার মাহমুদের ওপর প্রথম লেগের বাকি দুই ম্যাচের দায়িত্ব দিয়েছেন ক্লাব কর্মকর্তারা। প্রথম দিনের পরীক্ষাতেই সফল জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলার। কোচ বদলানোর পর ভাগ্যটাও বদলে গেল সাইফের। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ এফসিকে।

সাইফ স্পোর্টিংয়ের পক্ষে জোড়া গোল করেছেন জন ওকোলি। কেনেথ একেচুকু ও সাজ্জাদ হোসেন করেছেন ১টি করে গোল। পুলিশের একমাত্র গোলটি জমির উদ্দিনের।

এবারের মৌসুমে তারুণ্যনির্ভর দল সাইফ স্পোর্টিংয়ের। জাতীয় দলের পাঁচ ফুটবলার পাপ্পু হোসেন, ইয়াসিন আরাফাত, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান ও আরিফুর রহমানদের সঙ্গে একেচুকু কেনেথ ও জন ওকোলিদের নিয়ে গড়া দলটি ফেডারেশন কাপে খেলেছিল দুর্দান্ত। লিগে যেন সেই ছন্দ সেভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

আজকের আগপর্যন্ত ১০ ম্যাচে ৫ জয়, ১ ড্র ও ৪ হারে পয়েন্ট তালিকার সাতে ছিল দলটি। আজ অবশ্য জুলফিকার মাহমুদ পুলিশের বিপক্ষে ৪-৩-৩ ছকে খেলিয়েছেন দলকে। কোচের এই কৌশল দিন শেষে কাজে দিয়েছে দারুণভাবে।

যদিও পুলিশ কোচ পাকির আলীও অলআউট ফুটবল খেলিয়েছেন। ম্যাচে বারবার রক্ষণ অরক্ষিত রেখে ওপরে উঠেছে পুলিশের ফুটবলাররা। আর সেই সুযোগে প্রতি–আক্রমণ থেকে গোল বের করে নিয়েছে সাইফ স্পোর্টিং।

বিশেষ করে জন ওকোলির দ্বিতীয় ও বদলি হিসেবে নামা সাজ্জাদের গোল দুটি হয়েছেই পাকির আলীর কৌশলের ফাঁক বের করে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়া পুলিশ ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে জমির উদ্দিনের গোলে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের অভাবে শেষ পর্যন্ত হেরেই মাঠ ছেড়েছে পুলিশ।

পুলিশের রক্ষণে আক্রমণ সাইফ স্পোর্টিংয়ের
ছবি: প্রথম আলো

গোলের জন্য সাইফ স্পোর্টিংকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচের ৪৪ মিনিট পর্যন্ত। বিরতিতে যাওয়ার আগে মাত্র তিন মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড করে দেয় পুলিশের রক্ষণ। ম্যাচের ১৮ মিনিটে কেনেথ ইকেচুকু প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন পুলিশের পোস্টে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য ইকেচুকুর, বলটা ক্রসবারে লেগে ফেরে। কিন্তু তাই বলে মোটেও এমন শট নেওয়া থেকে বিরত থাকেননি এই নাইজেরিয়ান।

ঠিক এমনই একটা মাপা দূরপাল্লার শটে এবার লক্ষ্যভেদ ৪৪ মিনিটে। সাইফ স্পোর্টিং ততক্ষণে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে পুলিশ গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল যে গোলটি হজম করলেন, সেটি বড় অদ্ভুতই।

বাঁ প্রান্ত থেকে ইয়াসিন আরাফাতের লং বল জন ওকেলি এমনভাবে রিসিভ করেন, নেহাল হয়তো ভেবেই নিয়েছিলেন বলটা মাঠের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু নেহালের একেবারে সামনে থেকেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলে শট নেন, বল জড়ায় জালে। রীতিমতো বোকা বনে যান নেহাল।

এরপর ৬২ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে পুলিশের মিডফিল্ডার মুরোলিমঝন আখমেদভ ফ্রি–কিক নেন। তাঁর বাঁকানো ফ্রি–কিক সাইফ স্পোর্টিংয়ের গোলরক্ষক পাপ্পু ফিস্ট করে ফেরান। কিন্তু ফিরতি বলে জমির উদ্দিন হেডে স্কোরলাইন ২-১ করে ফেলেন। ৮৫ মিনিটে করা জন ওকোলির গোলটা ছিল দেখার মতো।

সাইফের আক্রমণের সামনে টিকে থাকাটা কঠিন ছিল পুলিশের জন্য
ছবি: প্রথম আলো

পুলিশের আখমেদভের ফ্রি–কিক থেকে বলটা হেডে ক্লিয়ার করেন সাইফ ডিফেন্ডার ইম্যানুয়েল আরিয়াচুকু। ওই বলটা ধরেই প্রতি–আক্রমণ থেকে গোল করেন ওকোলি। এত দ্রুত বল নিয়ে দৌড়েছেন যে পুলিশের ডিফেন্ডাররা দৌড়েও আটকাতে পারেননি ওকোলিকে। সামনে তখন শুধুই পুলিশ গোলরক্ষক নেহাল।

এরপর ঠান্ডা মাথায় গোল করেন ওকোলি। আর যোগ হওয়া সময়ে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শটে ৪-১ করেছেন বদলি সাজ্জাদ।

১১ ম্যাচে ৬ জয়, ১ ড্র ও ৪ হারে ১৯ পয়েন্ট উঠে এল চারে। আর সমান ম্যাচে ৩ জয়, ৩ ড্র ও ৫ হারে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আটেই রইল পুলিশ।