কোমরে কামড়ে নিষিদ্ধ ভারতের গোয়ার খেলোয়াড়

অনুশীলনে এদু বেদিয়া।ছবি: ইনস্টাগ্রাম

লুইস সুয়ারেজ যখন বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছেন, তত দিনে কাতালান ক্লাবটিতে এদু বেদিয়ার অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে। বলতে গেলে সুয়ারেজ ক্লাবের দরজা দিয়ে ঢুকেছেন, বেদিয়া বেরিয়েছেন।

২০১৩-১৪ মৌসুমে লিভারপুলে দুর্দান্ত খেলে সুয়ারেজ যান বার্সেলোনায়, একই সময়ে বেদিয়া বার্সা ছাড়েন। বার্সা বলতে অবশ্য ক্লাবটার মূল দল নয়, ‘বি’ দলে খেলেছেন বেদিয়া। তা-ও বেশি নয়, এক মৌসুমে ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন, গোল করেছেন ৭টি।

কিন্তু অতটুকুতেই সুয়ারেজের একটা বৈশিষ্ট্য যেন নিজের করে নিয়েছেন বেদিয়া। বৈশিষ্ট্যটা হলো প্রতিপক্ষকে কামড়ানো। বার্সায় যোগ দেওয়ার ঠিক আগে ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির জর্জো কিয়েল্লিনিকে কামড়ে চার মাস নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সুয়ারেজ, বেদিয়া একই কাণ্ড করেছেন গত পরশু ভারতের ফুটবল লিগে।

এই মুহুর্তে ভারতের ক্লাব এফসি গোয়ায় খেলেন ৩১ বছর বয়সী স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বেদিয়া, গোয়ার অধিনায়কও তিনি। পরশু চেন্নাইয়িন এফসির বিপক্ষে ম্যাচে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের কোমরে কামড়ে দিয়েছেন।

গত শনিবার ভারতের ঘরোয়া ফুটবল টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান সুপার লিগে চেন্নাইয়িনের বিপক্ষে দুবার পিছিয়ে পড়েও ২-২ গোলে ড্র করেছে গোয়া। চেন্নাইয়িনের মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে যোগ করা সময়ে চেন্নাইয়িনকে ড্র এনে দেওয়া দ্বিতীয় গোলটি করেন ইশান পান্ডিতা। এই ড্রয়ে ১১ দলের লিগের পয়েন্ট তালিকায় গোয়া উঠে এসেছে ৪ নম্বরে। গোয়া তখন কোথায় উচ্ছ্বাস করবে, দারুণভাবে লড়া আর হার না মানা মানসিকতার জন্য কোথায় দলটার প্রশংসা হবে, তা নয়, ম্যাচ শেষে আলোচনায় বেদিয়া।

যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটের কথা। চেন্নাইয়িনের দীপক টাংরির সঙ্গে বল দখলের লড়াই চলছিল বেদিয়ার। মাটিতে পড়ে ছিলেন বেদিয়া, এমন সময়ে লাফিয়ে বল হেড করার পর টাংরি পড়েন বেদিয়ারই ওপর। এতেই কী হয়ে গেল বেদিয়ার! দিলেন টাংরির পাঁজরের একটু নিচে কামড়ে! ব্যথায় চিৎকার করতে করতে মাটিতে গড়াতে থাকেন টাংরি।

চেন্নাইয়িনের প্রধান কোচ সিসাবা লাজলো ম্যাচের পর এ নিয়ে প্রশ্নে বলেছেন, ‘এদু বেদিয়া কী করেছে, সেটা জানতে আপনাকে প্রশ্নটা দীপক টাংরিকেই করতে হবে।’

আশ্চর্যজনকভাবে রেফারি তখন শুধু হলুদ কার্ড দেখান বেদিয়াকে। হয়তো রেফারি ঠিকভাবে দেখেননি ঘটনাটা, সে কারণে তখন বেঁচে যান স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। কিন্তু চেন্নাইয়িন ছাড়েনি। ম্যাচের পর লিখিতভাবে অভিযোগ করে ভারতের ফুটবল ফেডারেশন এআইএফএফে।

স্প্যানিশ ফুটবলারের এমন কাণ্ড বলেই হয়তো এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে মাদ্রিদভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক ‘এএস’। তারা লিখেছে, বেদিয়াকে লম্বা সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে এআইএফএফ। নিষেধাজ্ঞাটা পুরো মৌসুমের জন্যও হতে পারে!

ফুটবলে কামড়ানোর জন্য লুইস সুয়ারেজ বিখ্যাতই হয়ে আছেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার জর্জো কিয়েল্লিনির কাঁধে কামড়ে চার মাস নিষিদ্ধ হন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার।

২০১৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইতালির ডিফেন্ডার জর্জো কিয়েল্লিনির কাঁধে কামড়ে দেন সুয়ারেজ।
ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই লিভারপুল থেকে বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি। অনেকে অভিযোগ করেন, লিভারপুল যাতে বার্সার কাছে তাঁকে বিক্রির জন্য দাম কমাতে বাধ্য হয়, সে জন্যই বিশ্বকাপে এমন কাণ্ড করেছিলেন সুয়ারেজ। কিয়েল্লিনিকে কামড়ানোয় সুয়ারেজকে ৪ মাস নিষিদ্ধ করে ফিফা।

এর আগে লিভারপুলে থাকার সময়ও অবশ্য কামড়ানোর অভ্যাসের প্রমাণ রেখেছিলেন সুয়ারেজ। ২০১৩ সালে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচে সে সময়ে চেলসিতে খেলা ডিফেন্ডার ব্রানিসলাভ ইভানোভিচের হাতে কামড়ে দিয়েছিলেন, নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ১০ ম্যাচের জন্য।

লিভারপুলে আসার আগেও প্রতিপক্ষকে কামড়ে আলোচনায় এসেছিলেন সুয়ারেজ। সেটি ২০১০ সালে আয়াক্সে থাকার সময়ে, কামড়েছিলেন পিএসভি আইন্দহফেনের ওটমান বাক্কালকে। সে সময় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাত ম্যাচ।

এমনি এমনিই তো সুয়ারেজের কামড় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মিম বানানো হয়নি! এখন বোধ হয় বেদিয়াকে নিয়েও বানানোর সময় এল!