কোহলি-রোহিতের পর ভুবনেশ্বর-শার্দূল

কোহলির সিরিজ জয়ের আনন্দ।ছবি: এএফপি

প্রথম ইনিংসের পরই ম্যাচ শেষ বলে মনে হয়েছিল। ইংল্যান্ড ইনিংসের দ্বিতীয় বলের পর তো শেষ সন্দেহটাও উবে গিয়েছিল। কোনো রান তোলার আগেই জেসন রয় ফিরে গেছেন ড্রেসিংরুমে। ২২৫ রানে লক্ষ্য এমনিতেই কঠিন, আগের ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর তো সেটা প্রায় অসম্ভব। সে ম্যাচটাই জমিয়ে তুলেছিল ইংল্যান্ড। একপর্যায়ে জয়ের সম্ভাবনা তাদেরই বেশি ছিল। কিন্তু শার্দূল ঠাকুরের এক ওভারেই ম্যাচটা ছিটকে পড়ে তাদের। ইংল্যান্ডকে ৩৬ রানে হারিয়ে ৩-২ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নিল ভারত।

শেষ ৬ ওভারে ৮৯ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। উইকেটে ৬৭ রান করা ডেভিড মালান। এমন অবস্থায় ম্যাচটা নিজেদের দিকে হেলিয়ে দিয়েছেন শার্দূল ঠাকুর। মাত্র ৬ রান দিয়ে জনি বেয়ারস্টো ও মালানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এর আগেই অবশ্য আরও বড় ধাক্কা খেয়েছে ইংল্যান্ড। দারুণ ছন্দে থাকা জশ বাটলারকে তুলে নিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। এরপর তো শার্দুলের ওই ধাক্কা।

পরের ওভারেই অধিনায়ক এউইন মরগানকে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। সম্ভাব্য জয় আবার নিশ্চিত পরাজয় হয়ে গেছে ৪ ওভার বাকি থাকতেই। ২২৫ রানের লক্ষ্যে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান তুলেছে ইংল্যান্ড।

৯৪ রানের দারুণ এক জুটি গড়েছেন রোহিত-কোহলি।
ছবি: এএফপি

এর আগে প্রথম ইনিংসে ভারত ঠিক যেমনটা চাইছিল, তেমনটাই পেয়েছে। মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান নামার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের সর্বনিম্ন স্কোর ৩২। সর্বনিম্ন স্ট্রাইকরেট বিরাট কোহলির, সেটাও প্রায় ১৫৪! ব্যাটিং লাইনআপের সবাই একই দিনে ছন্দে থাকলে কী হতে পারে, সেটা টের পেয়েছে ইংল্যান্ড। ইনিংসের শুরুতে আদিল রশিদ আর মাঝে বেন স্টোকসই শুধু ওভারপ্রতি ১০-এর নিচে রান দিতে পেরেছেন। বাদ বাকিরা রোহিত-কোহলিদের অত্যাচার সহ্য করেছেন অসহায় হয়ে।

শুধু ভারত নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেই সাদা বলের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। এমন দুজন একসঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামলে এবং দুজনই ফর্মে থাকলে কী হতে পারে, সেটা আরেকবার দেখা গেছে। বরাবরের মতো আগ্রাসী ঢঙে শুরু করেছেন রোহিত। অন্যদিকে স্ট্রাইক বদলে থিতু হয়েছেন কোহলি। এক প্রান্তে কোহলি প্রায় চুপ থাকার পরও পাওয়ার প্লের মধ্যেই ৫০ পেরিয়ে ৬০ ছুঁয়েছে ভারত। ৩৪ বলে ৬৪ রান তুলে রোহিত যখন ফিরেছেন, ভারতের রান তখন ৯৪।

কোহলি এরপরও খেলার ছন্দ বদলাননি। সূর্যকুমার যাদব যখন নামছেন কোহলির নামের পাশে তখন ২২ রান। ৪৯ রানের জুটি গড়ে যাদব যখন ফিরে গেলেন কোহলির নামের পাশে তখন ৩৮। ১৭ বলেই ৩২ রান করে ফিরেছেন যাদব। ২৮ বলে ৩৮ রান তখন কোহলির। ইনিংসের ৪০ বল বাকি থাকতে মাঠে নামেন হার্দিক পান্ডিয়া। পান্ডিয়াই প্রথম আক্রমণ শুরু করলেন। এর আগেই দুই চার ও দুই ছক্কা মারা কোহলি ৫০ ছোঁয়ার আগে আর কোনো বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করেননি।

১৩০ রানের জুটিতেও দলের ভাগ্য বদলাতে পারেননি মালান-বাটলার।
ছবি: এএফপি

১৮তম ওভারে গিয়ে ছন্দ বদলালেন কোহলি। অন্য দিকে পান্ডিয়াও বাহুর শক্তি দেখালেন। প্রথম ৪১ বলে ৫৩ রান তোলা কোহলিই ইনিংস শেষ করলেন ৫২ বলে ৮০ রান তুলে। ওদিকে পান্ডিয়া অপরাজিত থাকলেন ১৭ বলে ৩৯ রানে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ভারতও পেল ২২৪ রানের এক পাহাড়।

সে পাহাড় যে এত মামুলি মনে হবে, সেটা কে জানত? রয় আউট হওয়ার পর প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। পরের ওভারেই শিকল ভেঙে দিলেন পান্ডিয়া। প্রথম বল ডট দিয়েছিলেন, এর পরের বলেই ওয়াইড। পরের তিন বলে ডেভিড মালানের সংগ্রহ ৪, ৬, ৪! পান্ডিয়ার ওভারে ১৮ রান তুলে সেই যে দাপট দেখানো শুরু ইংল্যান্ডের, সেটা ইনিংসের প্রথমার্ধে আর থামেনি। পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়েই ইংল্যান্ড ৬২ রান তুলেছে।

পাওয়ার প্লে শেষ হলেও রানবন্যা থামেনি। পরের ৪ ওভারে এসেছে আরও ৪২ রান। ১১তম ওভারেই নিজের ফিফটি বুঝে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টির শীর্ষ ব্যাটসম্যান মালান। ৮ চারের সঙ্গে তখন পর্যন্ত ১ ছক্কা। বাটলারের ৫০ ছুঁতে মালানের চেয়ে ৩ বল কম লেগেছে। এই উইকেটকিপারের ফিফটিতে ২ চারের সঙ্গে ছিল ৪ ছক্কা। ইংল্যান্ডের সর্বনাশের শুরু এরপরই।

১২তম ওভারে ফিফটি পেয়েছেন বাটলার। পরের ওভারেই দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা ভুবনেশ্বরের শিকার। ৩৪ বলে ৫২ রান করে লং অফে যখন ধরা পড়লেন, ৪৩ বলে ৯৫ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু বাকি সময়ে মাত্র ৫৮ রান তুলতে পেরেছে সফরকারীরা। এর মধ্যে ২০ রান এসেছে শেষ ওভারে। অবশ্য ৫৭ রান দরকার এমন অবস্থায় ২০ রান খরচায় কোহলির মতো অধিনায়কেরও খুব একটা আপত্তি হয়নি! রান বন্যার ম্যাচে মাত্র ১৫ রান দিয়ে দুই ওপেনারকে তুলে নিয়ে আগেই যে ভুবনেশ্বর কাজ সেরে নিয়েছেন।