ক্লাব অবনমনের শঙ্কায়, ম্যারাডোনা গেলেন রাজনীতির মাঠে!

ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও নিকোলাস মাদুরো। ছবি: সংগৃহীত
ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও নিকোলাস মাদুরো। ছবি: সংগৃহীত
>

জিমনাসিয়া লা প্লাটার ম্যানেজার হয়ে কিছুদিন আগেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তাঁর অধীনে দলের অবস্থা তেমন ভালো না। জানুয়ারি চলে এসেছে, জিমনাসিয়া এখনো পয়েন্ট টেবিলের অবনমন অঞ্চলে আছে। এ অবস্থায় দলকে বাঁচানোর জন্য কোচের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা। ম্যারাডোনার তাতে কোনো বিকার নেই, গেছেন ক্ষমতার টানাটানিতে থাকা ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে নৈতিক সমর্থন দিতে

কোচ হিসেবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার ইতিহাস তেমন সুখের নয়।

টেক্সটিল মান্দিয়ু, রেসিং, আল ওয়াসল, ফুজাইরা, দোরাদোস দে সিনেলোয়া—দেশ বিদেশ ঘুরে একাধিক ক্লাবের কোচিং করালেও অর্জনের ভাঁড়ার শূন্য। তাও, খেলোয়াড় হিসেবে চূড়ান্ত সফল এই তারকা কোচ হিসেবেও নতুন খেলোয়াড়দের কানে জয়ের মন্ত্রণা দেবেন, এই আশায় সম্প্রতি জিমনাসিয়া লা প্লাটা ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ম্যারাডোনাকে। লাভ হয়নি। চব্বিশ দলের লিগে জিমনাসিয়া পড়ে আছে ২০তম স্থানে। প্রতি মৌসুমে চারটা করে দল অবনমিত হয়, সে হিসেবে জিমনাসিয়া এখন আছে অবনমন অঞ্চলে। ফর্মের উন্নতি না হলে মৌসুম শেষে অবনমিত হতে হবে। আর মাঝ মৌসুমে যেসব ক্লাব অবনমন অঞ্চলে থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দেখা যায় শেষ পর্যন্ত তারাই অবনমিত হয়।

এই সময় অবনমন অঞ্চলে পড়ে থাকা দলগুলোর কোচদের অবস্থা হয় দেখার মতো। চাকরি বাঁচানোর জন্য দলকে অবনমন অঞ্চল থেকে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু জিমনাসিয়ার কোচ ম্যারাডোনার তা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে! তিনি ক্লাব ছেড়ে গেছেন রাজনৈতিক সংকটে থাকা ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে নৈতিক সমর্থন জানাতে!

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যাওয়া ভেনেজুয়েলার অবস্থা বেশ সঙিন বলা যায়। দেশটির ক্ষমতায় নিকোলাস মাদুরো সরকার থাকলেও তারা সাধারণ মানুষ থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। গত এপ্রিলে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সেই বিক্ষোভ সামাল দিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মাদুরো সরকার এখনো টিকে থাকলেও তা কত দিন টিকে থাকবে, তা বলা যাচ্ছে না। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়ান গুয়াইদোকে স্পষ্টত সমর্থন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। মাদুরোর পাশে এখন সেনাবাহিনী রয়েছে। কিন্তু মার্কিন সমর্থনপুষ্ট গুয়াইদো ও তাঁর অনুসারীদের হাত থেকে কত দিন ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন তিনি, তা একেবারেই অনিশ্চিত।

গুয়াইদোর হাতে ক্ষমতা গেলে নিশ্চিতভাবেই ভেনেজুয়েলা ও দক্ষিণ আমেরিকার একটি যুগের পতন হবে। অঞ্চলটিতে মার্কিন মিত্র হিসেবে কাজ করছে ব্রাজিল ও কলম্বিয়া। বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান, আন্তর্জাতিক সমালোচনা সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছেন মাদুরো। ২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচন বয়কট করেছিল বিরোধী দল। অভিযোগ উঠেছিল ভয়াবহ কারচুপির। এর মধ্যে গতকাল ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে গতকাল গুয়াইদো কয়েক হাজার মানুষের সামনে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে ক্ষমতা নিয়ে এক রকম প্রকাশ্যেই বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন মাদুরো-গুয়াইদো।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যারাডোনা কখনোই তেমন সহ্য করতে পারেন না। ফিদেল কাস্ত্রো থেকে শুরু করে হুগো শাভেজ, লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যত নেতা ছিলেন বা আছেন, সবার সঙ্গেই ম্যারাডোনার সখ্য দেখার মতো। ম্যারাডোনার সেই বন্ধুতালিকায় আছেন নিকোলাস মাদুরোও। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রপন্থী গুয়াইদোকে সমর্থন দিচ্ছেন না আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি, মাদুরোকে সমর্থন দিতে ক্লাবকে কোচিং করানো বাদ দিয়ে চলে গেছেন ভেনেজুয়েলায়। মাদুরোর সঙ্গে ম্যারাডোনার করমর্দন ও উষ্ণ আলিঙ্গনের সেই ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে।

সঙ্গে ম্যারাডোনা কোচ হিসেবে যে কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন, সেই সমালোচনাও উঠেছে। গতকাল ভেলেজ সার্সফেল্ডের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে জিমনাসিয়া। ফলে সেই সমালোচনা বেড়েছে বৈ কমেনি।

দেখা যাক, মৌসুম শেষে এভাবে কোচিং করিয়ে ম্যারাডোনা জিমনাসিয়াকে অবনমনের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন কি না!