খেললেন রাফেত, নাম মুনতাদিরের

অন্যের নামে খেলে এখন অনুশোচনা হচ্ছে গাজী মো. আবদুর রাফেতের। অর্জনেও যে থাকছে না নিজের নাম!

গাজী মো. আবদুর রাফেত

সদ্য সমাপ্ত স্কুল ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে চার গোল করে সে হলো সর্বোচ্চ গোলদাতা। জিতেছে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। অথচ কোথাও তার নাম নেই। নাম আছে মুনতাদির ফুয়াদ ইবনে নূরের! গাজী মো. আবদুর রাফেতের তাই অনুশোচনার শেষ নেই। প্রথম আলোকে দুঃখ করে বলছিল, ‘আমি এতগুলো গোল করলাম, আর নাম গেল আরেকজনের!’

অনুশোচনা করা ছাড়া এখন আর উপায়ও নেই রাফেতের। কারণ, খুদে এই ফুটবলার জেনেশুনেই ফেনীর ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুল দলের হয়ে মুনতাদির ফুয়াদ ইবনে নূর নামে খেলেছে। রাফেত এমনকি ওই স্কুলেরও ছাত্র নয়। ফেনী থেকে মুঠোফোনে সে বলেছে, ‘আমার নাম গাজী মো. আবদুর রাফেত। আমি যে নামে খেলেছি, শুনেছি সে ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুলের ছাত্র। আমি কখনোই ছাগলনাইয়া স্কুলে পড়াশোনা করিনি। আমি জিএ একাডেমি থেকে এসএসসি পাশ করে ভিক্টোরিয়া কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছি।’ রাফেত জানিয়েছে, ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুলই ঠিক করে দিয়েছে সে অন্য নামে তাদের স্কুলের হয়ে খেলবে। সেই নাম নিয়েও আছে বিভ্রান্তি। ফাইনাল শেষে বাফুফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার নাম লেখা হয়েছে মুনতাদির ফুয়াদ ইবনে নূর। খেলোয়াড় তালিকায় নাম মুনতাসির ফুয়াদ ইবনে নূর। আর রাফেত বলছে, সে খেলেছে মুহতাসিম ফুয়াদ ইবনে নূর নামে।

২৬ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে স্কুল ফুটবল। পল্টন আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুলকে ৪–০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাগেরহাট বহুমুখী কলেজিয়েট স্কুল। দেশের ৫৭টি জেলার ৫৭টি স্কুল অংশ নেয় এতে। আট বিভাগের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে ঢাকায় হয় চূড়ান্ত পর্ব। চট্টগ্রাম বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিট পায় ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুল। ফেনীতে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় পর্যায়ের খেলায় ৭ গোল করা রাফেত চূড়ান্ত পর্বেও ৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছে। এতগুলো গোলের সঙ্গে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি, কিছুতেই নিজের নামটা যাচ্ছে না বলে এখন কষ্ট পাচ্ছে রাফেত, ‘আমি খেলতে পেরেই খুশি ছিলাম। কিন্তু এতগুলো গোল করলাম, নাম গেল আরেকজনের! এখন খারাপ লাগছে। নামটি আমাকে স্কুল থেকে দেওয়া হয়েছে। আমি সেটা মুখস্থ করে নিয়েছি।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুলের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্য স্কুলের খেলোয়াড় নিয়ে খেলার সুযোগ ছিল, সে কারণেই আমরা তাকে নিয়েছি। সে আমাদের যে সার্টিফিকেট দিয়েছে, আমরা সেই নামেই তাকে খেলিয়েছি। আমরা বাফুফের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারা যাচাই–বাছাই করে খেলার অনুমতি দিয়েছে।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এক স্কুলের ছাত্রদের অন্য স্কুলের হয়ে খেলার সুযোগ দিয়েছে শুধু চূড়ান্ত পর্বে। বাফুফে সদস্য ও স্কুল ফুটবল কমিটির প্রধান বিজন বড়ুয়া বলেছেন, ‘চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা কোনো স্কুল যদি মনে করে তার জেলার অন্য স্কুলের কোনো ভালো ফুটবলারকে খেলাবে, তাহলে মৌখিকভাবে নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বিভাগীয় পর্যায়ে এই সুযোগ ছিল না। বিভাগীয় পর্যায়ে স্কুলের ছাত্রদের নিয়েই খেলার নিয়ম ছিল। আর বিষয়টা দেখার দায়িত্ব ছিল জেলা ফুটবল সংস্থার।’ অথচ রাফেত ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুলের হয়ে খেলেছে বিভাগীয় পর্যায় থেকেই। বিভাগীয় পর্যায়ে এক স্কুলের ছাত্রের অন্য স্কুলের হয়ে খেলার নিয়ম ছিল না বলেই ছাগলনাইয়া পাইলট হাইস্কুলের এক ছাত্রের নামে খেলানো হয় তাকে।

এত বড় অনিয়ম কীভাবে হলো, জানতে চাইলে বিজন বড়ুয়া বলেছেন, ‘আমরা বোর্ডের অনলাইনেও কাগজপত্র যাচাই করেছি। কিন্তু সেখানে সাদা–কালো ছোট ছবি হওয়ায় চেহারা ভালোভাবে বোঝা যায় না। আবার খেলোয়াড়দের এসব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওরা সার্টিফিকেটের সঙ্গে মিলিয়ে পুরো বৃত্তান্ত হুবহু বলে দেয়।’