খেলা শেষে সতীর্থদের জানালেন, তিনি সিটিতেই যাচ্ছেন

গোল করার পর রুবেন দিয়াস (জার্সি নম্বর ৬)।ছবি : এএফপি

পর্তুগিজ ফুটবলের নিয়মিত খোঁজখবর যারা রাখেন, তাঁদের কাছে রুবেন দিয়াস বেশ পরিচিত এক নাম। পেপে-কারভালহো পরবর্তী যুগে রোনালদোরা জাতীয় দলের রক্ষণভাগ সামলানোর জন্য যাদের ওপর দায়িত্ব সঁপেছেন, তাদের মধ্যে এই রুবেন দিয়াস অন্যতম। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বেনফিকার এই সেন্টারব্যাক বড় ক্লাবগুলোর নজরে আছেন। শেষমেশ ম্যানচেস্টার সিটিরই হয়ে যাচ্ছেন এই ডিফেন্ডার। প্রায় পাঁচ কোটি পাউন্ডের বিনিময়ে বেনফিকা থেকে সিটিতে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন ২৩ বছর বয়সী এই তারকা, সিটি বা বেনফিকার কাছ থেকে নিশ্চিত ঘোষণা না আসলেও ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর এমনই।

রুবেন দিয়াস যাচ্ছেন সিটিতেই।
ছবি: রয়টার্স

এই গুঞ্জনের মাঝেই গতকাল মাঠে নেমেছিলেন দিয়াস। মোরেইরেনসের বিপক্ষে ম্যাচটায় ২-০ গোলে জিতেছে তাঁর বেনফিকা। ম্যাচে অধিনায়কত্বও করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গোল করে দলের জয়ে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন। তবে ম্যাচ শেষে যা করলেন, তাতে মোটামুটি সবাই নিশ্চিত হয়ে গেলেন, যা রটেছে, তা সত্যি। ম্যাচ শেষে প্রত্যেকটা সতীর্থকে জড়িয়ে ধরলেন আলাদাভাবে। জড়িয়ে ধরলেন ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক রুই কস্তাকেও। কেন জড়িয়ে ধরছেন এভাবে? তা নিয়ে কারওর মনে সামান্যতম সংশয় থাকলে সেটাও দিয়াস মিটিয়ে দিয়েছেন নিজ দায়িত্বে। টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিয়াস বলেছেন, 'এটা একটা বিশেষ মুহূর্ত ছিল আমার জন্য। আমার মনে হয় সবাই জানে কেন আমি এটা (সবাইকে জড়িয়ে ধরা আলাদাভাবে) করেছি। অবশ্যই আমি অনেক খুশি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল এটা আমাদের জন্য, আর এই ম্যাচে গোল করে দলকে জয় এনে দেওয়া অনেক বড় কিছু ছিল আমার জন্য। আমার মনে হয় সবাই বুঝতে পেরেছে আমি কেন রুই কস্তাকে জড়িয়ে ধরেছি।'

দিয়াসের এমন অর্থপূর্ণ ইঙ্গিতের পর এটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না, আসলেই ম্যানচেস্টার সিটিতে যাচ্ছেন তিনি। পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যমের খবর, আজ রোববার ম্যানচেস্টারে গিয়ে চুক্তি বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সিটির খেলোয়াড় হয়ে যাবেন দিয়াস।

বেনফিকার ম্যানেজার হোর্হে হেসুসও নিশ্চিত করেছেন দিয়াসের বিদায়, ‘আমি নিশ্চিত বেনফিকার জার্সি গায়ে এটাই ওর শেষ ম্যাচ ছিল। ও এমন একজন খেলোয়াড় যাকে চলে যেতে দেখে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমাদের।’

গত মৌসুমে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৪৯ ম্যাচ খেলেছিলেন এই ডিফেন্ডার।

গত মৌসুমে লিভারপুলের কাছে ইংলিশ লিগ ও লিওঁর কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর সিটি নিজেদের রক্ষণভাগ আঁটসাঁট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। রক্ষণভাগ বানানোর ক্ষেত্রে গার্দিওলার একটা অলিখিত নিয়ম আছে। সেন্টারব্যাক হিসেবে তিনি যে দুজনকে খেলান, ডান দিকে যে থাকেন, তাঁকে ডান পায়ের খেলোয়াড় হতে হয়। বাঁ দিকের খেলোয়াড়কে হতে হয় বাঁ পায়ের খেলোয়াড়। সে হিসাবে কখনোই একই পা দিয়ে খেলা দুই তারকাকে দিয়ে সেন্ট্রাল ডিফেন্সের জুটি বানান না তিনি। সিটিতে এখন যেসব সেন্টারব্যাক আছে, তাঁদের মধ্যে ফরাসি ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত বাঁ পায়ের। ওতামেন্দি, স্টোনস, এরিক গার্সিয়া—সবাই ডান পায়ের। গত মৌসুমে মাঝেমধ্যে যে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে খেলাতেন, সে ফার্নান্দিনিও-ও ডান পায়ের। ফলে দেখা গেছে, বাঁ পায়ের লাপোর্তকে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই খেলতে হয়েছে। লাপোর্তের সঙ্গী হিসেবে কখনো ওতামেন্দি, কখনো স্টোনস, কখনো ফার্নান্দিনিও বা কখনো গার্সিয়াকে খেলিয়েছেন গার্দিওলা।

ডান পায়ের সেন্টারব্যাক হিসেবে দিয়াসকেই মনে ধরেছে গার্দিওলার।
ছবি : এএফপি

এই মৌসুমে লাপোর্তের ওপর চাপ কমানোর জন্য বোর্নমাউথ থেকে এসেছেন আকে। আকে বাঁ পায়ের ডিফেন্ডার। কিন্তু ওতামেন্দি, স্টোনস—কেউই ডান পায়ের ডিফেন্ডার হিসেবে এত দিন ধরে গার্দিওলাকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। ফার্নান্দিনিওর বয়স হয়ে যাচ্ছে অনেক, তার ওপর তিনি ডিফেন্ডারও নন ঠিক। ওদিকে গার্সিয়ার সঙ্গে চুক্তি প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে সিটির। সিটির সঙ্গে চুক্তি বাড়াতেও আগ্রহী নন তিনি, ফিরতে পারেন সাবেক ক্লাব বার্সেলোনায়। গার্দিওলাও নিশ্চিত করেছেন এই কথা।

ফলে ডান পায়ের একজন সেন্টারব্যাক হন্যে হয়ে খুঁজছেন গার্দিওলা। সে লক্ষ্যে প্রথমে নাপোলির সেনেগালিজ তারকা ডিফেন্ডার কালিদু কুলিবালিকে চাইলেও আকাশছোঁয়া দাম দেখে একটু দমে গেছেন। নজর দিয়েছেন স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার তরুণ ফরাসি ডান পায়ের সেন্টারব্যাক জুল কুন্দের দিকে। কুন্দের দামও কম নয়। সবচেয়ে বড় কথা, ডান পায়ের যে-ই ডিফেন্ডারই আসুক না কেন, গার্দিওলা চাইছেন, সে ডিফেন্ডারের চুক্তিতে কোনোভাবে ওতামেন্দিকে ঢুকিয়ে দিতে। যাতে একই সঙ্গে একজন নতুন খেলোয়াড় আসার পাশাপাশি দল থেকে একজন বাতিল খেলোয়াড়ও চলে যান। ওতামেন্দিকে নেওয়ার ব্যাপারে কুন্দের সেভিয়া আগ্রহ দেখায়নি, দেখিয়েছে দিয়াসের বেনফিকা। শেষমেশ তাই দিয়াসেই থিতু হতে চলেছেন গার্দিওলা।

দেখা যাক, নতুন এই রক্ষণভাগ নিয়ে এই মৌসুমে সিটি লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারে কি না!