গার্দিওলা কিছুই জেতেননি, সব জিতিয়েছেন মেসি

বার্সেলোনায় কোচ পেপ গার্দিওলা ও খেলোয়াড় লিওনেল মেসি জুটি।
এএফপি ফাইল ছবি

২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার কোচের দায়িত্বে ছিলেন পেপ গার্দিওলা। আধুনিক ফুটবলে বার্সেলোনার ওই সময়কে স্বর্ণযুগ ধরা হয়। বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথম মৌসুমেই ট্রেবল জেতেন গার্দিওলা। দুই বছর পর জেতেন আরও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ। সব মিলিয়ে তিনটি লা লিগা ও দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফিসহ বার্সেলোনাকে মোট ১৪টি বড় ট্রফি উপহার দিয়েছেন বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটির কোচ।

তখন থেকেই গার্দিওলাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বার্সেলোনার সেই সাফল্যের পেছনে কোচ গার্দিওলার অবদান দেখছেন না বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক কোচ ফেলিক্স মাগাথ। জার্মানির সাবেক এই ফুটবলারের মতে গার্দিওলা-যুগে বার্সেলোনার সাফল্যের নায়ক লিওনেল মেসি। জার্মান দৈনিক বিল্ডে তিনি বলেছেন, ‘শিরোপাগুলো মেসি জিতিয়েছিল, গার্দিওলা নয়।’

গার্দিওলার ব্যাপারে এমন কিছু অবশ্য মাগাথই যে প্রথম বলেছেন, তা নয়। বার্সেলোনাকে দিয়েই শীর্ষস্তরে কোচিং শুরু গার্দিওলার, সেখানে প্রথম তিন বছরে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। বার্সেলোনায় চার বছরের পর এক বছর বিরতি নিয়েছিলেন গার্দিওলা, এরপর বায়ার্ন মিউনিখে ছিলেন তিন বছর, সেখান থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে এ নিয়ে পঞ্চম মৌসুম কাটছে তাঁর। সব মিলিয়ে শীর্ষস্তরের ফুটবলে ১১ বছর কাটিয়েও গার্দিওলার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা সেই দুটিই। তাঁকে সময়ের সেরা কোচদের একজন মানা হলেও তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচনা এখানেই।

গার্দিওলার দলের খেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষের অর্ধে প্রচুর পাস খেলা। আদতে যে কৌশলকে বলা হয় টিকি-টাকা। বার্সেলোনায় গার্দিওলার এই কৌশলে মেসিই ছিলেন মূল প্রাণভোমরা। বার্সেলোনা ছাড়ার পর ২০১৩ সালে বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেওয়ার পর বুন্দেসলিগায়ও এই কৌশলে সফল হয়েছিলেন গার্দিওলা। কিন্তু টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় তাঁকে। এরপর ম্যানচেস্টার সিটির হয়েও লিগ শিরোপা জিতলেও এখন পর্যন্ত জিততে পারেননি চ্যাম্পিয়নস লিগের কোনো শিরোপা। সিটির হয়ে তো গত মৌসুমেই প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছেছেন। ফেলিক্সের প্রশ্ন, টিকা-টাকা কৌশলে গার্দিওলা যদি এত সাফল্য পেয়ে থাকেন, তাহলে বায়ার্ন ও সিটিতে ব্যর্থ হবেন কেন?

খেলোয়াড়ি জীবনে হামবুর্গকে ১৯৮৩ ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগ) জেতানো মাগাথের চোখে, পার্থক্যটা মেসির থাকা-না থাকা। ‘মেসিকে ছাড়া গার্দিওলার এই কৌশল কখনোই অত সফলতা দেখাতে পারেনি। না হলে আরও আগেই বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার সিটিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতত সে (গার্দিওলা)। টিকি-টাকা কৌশলটি তখনই ভালো কাজ করে যখন টেকনিকের দিক থেকে আপনার দলে প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো খেলোয়াড় থাকে। দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি, বল ধরে রাখার এই কৌশল খুবই বিরক্তিকর এবং ভালো দলের এই কৌশল প্রয়োজন হয় না’—বলেছেন মাগাথ।

এছাড়া বর্তমান সময়ে গার্দিওলা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণকে দায়ী করেছেন মাগাথ, ‘আমার মতে গার্দিওলা খেলার আগেই জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সে কারণে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা তাকে সাফল্য পেতে দেয় না।’

বার্সেলোনায় কোচ পেপ গার্দিওলা ও খেলোয়াড় লিওনেল মেসি জুটি।
এএফপি ফাইল ছবি

ম্যানচেস্টার সিটিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মৌসুমে টানা দুবার লিগ জিতলেও গত মৌসুমে গার্দিওলা সেটিও খুইয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলের কাছে। প্রায় ৩০ বছর পর লিভারপুলের প্রিমিয়ার লিগ জেতার নেপথ্যে ক্লপের অবদানকেই বড় করে দেখেন সবাই। তবে লিভারপুল কোচের ক্ষেত্রেও তাঁর কৌশলের চেয়ে দলে ভালো খেলোয়াড়ের উপস্থিতিকে এগিয়ে রাখছেন মাগাথ, ‘ইয়ুর্গেন ক্লপ এই কৌশলকে সফল করতে পেরেছে মূলত খেলোয়াড়ের কারণেই, তাঁর কৌশলের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে নয়। যদি লিভারপুল সিন্দুকে হাত না দিত, ৬ কোটি ইউরোতে গোলকিপার আলিসন বা সাড়ে আট কোটি ইউরোতে ভার্জিল ফন ডাইকের মতো ডিফেন্ডার না কিনত, (ক্লপের) এই কৌশলও হয়তো এতটা সফল হতো না।’