গার্দিওলার শিরোপা গার্দিওলা রেকর্ড গড়েই জিতলেন

গার্দিওলার গলায় আবার লিগ কাপ বিজয়ীর পদক।ছবি: রয়টার্স

কেন যে লিগ কাপটা আয়োজন করতে যায় ইংল্যান্ড! পেপ গার্দিওলা যতদিন ম্যানচেস্টার সিটিতে আছেন, ততদিন শিরোপাটা ম্যান সিটি জিতছে ধরে নিয়ে ট্রফিটা এমনিই তাদের দিয়ে দিলেই তো চলে।

চার মৌসুম ধরে লিগ কাপের শিরোপামঞ্চে গার্দিওলার সিটির উল্লাস দেখে অভ্যস্ত সমর্থকদের এমনটা মনে হতেই পারে। সিটিতে যাওয়ার পর প্রথম মৌসুমে কিচ্ছু জেতেননি গার্দিওলা, কিন্তু এরপর প্রতি মৌসুমে আর কিছু জিতুন না জিতুন, এই একটা শিরোপায় কোনো নড়চড় হয়নি। গার্দিওলার শিরোপাটা এবারও গার্দিওলাই জিতেছেন।

ওয়েম্বলিতে আজ টটেনহামকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা চতুর্থ লিগ কাপ ঘরে তুলেছে ম্যান সিটি। তাতে গার্দিওলার একটা রেকর্ড হয়েছে। ব্রায়ান ক্লফ, অ্যালেক্স ফার্গুসন, জোসে মরিনিওদের রেকর্ড ছোঁয়া চতুর্থ লিগ কাপ স্প্যানিশ কোচ জিতলেন গার্দিওলা, তবে সে রেকর্ডটাই ছুঁয়েছেন আরেকটা রেকর্ড গড়ে। তাঁর মতো করে টানা চারবার এই ট্রফিটা জেতেননি আর কোনো কোচ!

করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওয়েম্বলিতে ৮ হাজার দর্শক ছিলেন, ১৩ মাসের মধ্যে এই প্রথম ইংল্যান্ডের কোনো ম্যাচে দুই দলেরই দর্শক ঢোকার অনুমতি পেলেন। তাতে টটেনহামের বিপক্ষে সিটির দাপুটে পারফরম্যান্সই দেখেছেন দর্শকেরা।

লিগ কাপে প্রতি মৌসুম শেষের চেনা ছবি এবারও দেখা গেল।
ছবি: রয়টার্স

জোসে মরিনিওকে গত সপ্তাহে হঠাৎ বরখাস্ত করেছে টটেনহাম, এরপর অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রায়ান ম্যাসনের অধীনে লিগে গত সপ্তাহে একটা ম্যাচও খেলে ফেলেছে। আজ ওয়েম্বলিতে ম্যাসনের অধীনে ‘মরিনিওর কৌশলে’ খেলা টটেনহামের দেখাই মিলেছে। কিন্তু টটেনহামের ১৩ বছরের শিরোপাখরা ঘোচানোর বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও ম্যাচজুড়ে জাগাতে পারেনি।

পুরো ম্যাচে সিটির পোস্টে ৫টি শট নিয়েছে টটেনহাম, এর মাত্র দুটি ছিল সিটির পোস্টে। ম্যান সিটিও যে টটেনহামের পোস্টে গোলকিপারের বড় পরীক্ষা নিতে পেরেছে, তা নয়, তবে পোস্টের আশপাশে মেরেছে অনেকবার। ম্যাচে মোট ২১ শট নিয়েছে সিটি, তার ৫টি ছিল পোস্টে। শেষ পর্যন্ত ব্যবধান অবশ্য গড়ে দিয়েছে এক ডিফেন্ডারের গোল। ৮২ মিনিটে এমেরিক লাপোর্তের হেডে করা গোলটিই শেষ পর্যন্ত হয়ে থেকেছে ব্যবধানসূচক।

গত সপ্তাহে চেলসির কাছে এফএ কাপের সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় সিটির এই মৌসুমে চার শিরোপার চারটিই জেতা তো আর হচ্ছে না, তবে লিগ কাপ জেতার পর মৌসুমে লিগ-চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লিগ কাপের ‘ত্রিমূকুট’ জেতার স্বপ্ন এখনো উজ্জ্বল রইল গার্দিওলার দলের। চ্যাম্পিয়নস লিগে আগামী বুধবারই পিএসজির বিপক্ষে সেমিফাইনালের প্রথম লেগ খেলবে সিটি। সমীকরণ মিলে গেলে লিগ শিরোপা জিতে যেতে পারে আগামী সপ্তাহেই।

হেডে সিটির গোলটা করছেন লাপোর্ত।
ছবি: রয়টার্স

সেসব পরের ব্যাপার, ওয়েম্বলিতে আজ সিটি শুরু থেকেই খেলেছে চ্যাম্পিয়নের মতো। গোল কেন আর দিতে পারেনি, সে এক রহস্য বটে! রাহিম স্টার্লিংয়ের একটা শট গোললাইন থেকে ফিরিয়েছেন টটেনহাম ডিফেন্ডার টবি অলডারভেইরেল্ড, তার কিছুক্ষণ পর সিটির ফিল ফোডেনের শট একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেইঞ্জ থেকে ফিরিয়েছেন টটেনহাম গোলকিপার উগো লরিস। স্টার্লিংয়ের একটা চিপ এরপর পোস্ট ঘেঁষে গেছে, দুবার রিয়াদ মাহরেজের বুলেট গতির শট গেছে পোস্টে বাতাস লাগিয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অবশ্য টটেনহামের জিওভান্নি লো সেলসো একবার পরীক্ষা নেন সিটির গোলপোস্টে অনিয়মিত জ্যাক স্টিফেনের, এর বাইরে বিরতির পরও একমুখী যাত্রাই ছিল। সিটি রাইটব্যাক জোয়াও কানসেলোর শট ঠেকান লরিস, ইলকায় গুন্দোয়ান দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন বাইরে মেরে। লরিস ঝাঁপিয়ে ফেরান মাহরেজের শট।

লাপোর্তকে (মাঝে) ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস।
ছবি: রয়টার্স

শেষ পর্যন্ত গোল যখন এল, তা এল অপরিচিত উৎস থেকে। কেভিন ডি ব্রুইনার ফ্রি-কিকে দূরের পোস্টে হেড করেন লাপোর্ত। গোল খেয়েও টটেনহামের আর জ্বলে ওঠার যেন শক্তি ছিল না, উল্টো স্টার্লিং ও ফোডেন দারুণ দুটি সুযোগ না হারালে সিটির জয়ের ব্যবধানটা আরও বড় হতো। বাধা হয়ে দাঁড়ায় অফসাইডও। শেষ দিকে মাহরেজ একবার বল জালে জড়িয়েই দিয়েছিলেন, কিন্তু অফসাইডে তা বাতিল হয়।

তা নিয়ে অবশ্য সিটির এখন আর কী যায়-আসে!