গোল দেখলে মন ভরে যায়

দ্বিতীয় গোলের পর উদ্‌যাপন বাংলাদেশের। পেছনে করোনা উপেক্ষা করে গ্যালারি ভরিয়ে রাখা দর্শক।
ছবি: বাফুফে

কোন গোলটিকে এগিয়ে রাখা যায়—নাবীব নেওয়াজ জীবনের ভলি নাকি বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্রুতগতিতে বক্সে ঢুকে মাহবুবুর রহমান সুফিলের ঠান্ডা মাথার ফিনিশিং?

বেশির ভাগ দর্শকের মাহবুবুরের গোলটিকেই এগিয়ে রাখার কথা। কী দুর্দান্ত গতির সঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণ! তারপর পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে ঠান্ডা মাথার প্লেসিং। গোলটিতে পরিপক্ব এক স্ট্রাইকারের ছাপ।

গতি, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও ঠান্ডা মাথায় পোস্টে রাখা—সুফিল তিনটি বিষয়কে এক সুতায় রাখতে পেরেছেন বলেই না আড়ালে পড়ে যাচ্ছে নাবীবের পা থেকে আসা বাংলাদেশের প্রথম গোলটি!

অথচ কাছের পোস্টে নিচু ক্রসে আসা বলে শেষ কবে ভলিতে এমন গোল করেছেন বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়, তা তো মনে করাই কষ্টসাধ্য। ডান প্রান্তে সাদ উদ্দিনের ক্রসে শুয়ে পড়ে দারুণ এক ভলিতে কাল নেপালের গোলমুখের তালা খুলে দিয়েছেন নাবীব।

এই দুটি গোল দেখে কে বলবে বাংলাদেশের স্ট্রাইকাররা সুন্দর গোল করতে পারেন না! সহজ সুযোগে অনেক গোল মিস করার যে বদনাম আছে দেশের ফুটবলারদের, সেই বদনামে কিছুটা প্রলেপ দিলেন দেশের এই দুই ফরোয়ার্ড।

গোলের পর নাবীবের উচ্ছ্বাস।
ছবি: প্রথম আলো

মাহবুবুর ও নাবীবকে নিয়ে দুটি ফাটকা খেলেছিলেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। প্রথমত, মূল স্ট্রাইকার হিসেবে সুমন রেজার অভিষেক ঘটানো। অন্যথায় নিয়মিত স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ মূল স্ট্রাইকার হিসেবে না খেললে খাতা–কলমে সেখানে তো মাহবুবুরেরই খেলার কথা। দ্বিতীয়ার্ধে সুমনকে তুলে বদলি হিসেবে মাহবুবুরকে পাঠানো হলো সেই পজিশনেই। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে মাহবুবুর সময় নিলেন ৩৫ মিনিট।

গোলের আনন্দে একেবারে জার্সি খুলে ফেললেন মাহবুবুর। জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর শেষ গোলটি ছিল ঢাকায় ২০১৮ সালের সাফে ভুটানের বিপক্ষে। অবশ্য গত বছর কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ফুটবলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১–০ গোলের জয়ের ম্যাচে একমাত্র গোলটিও ছিল মাহবুবুরের, তবে সেটি ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল।

জেমির অন্য ফাটকাটি নাবীব নেওয়াজকে ‘নাম্বার টেন’ পজিশনে খেলানো। গত বছর সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ভুটানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথমবারের মতো ‘নাম্বার টেন’ পজিশনে খেলানো হয় জীবনকে। সেদিন ৪–১ গোলের জয়ের ম্যাচে জোড়া গোল এসেছিল নাবীবের পা থেকে। এরপর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নাবীবকে আবার নাম্বার নাইনে ফিরিয়ে নেওয়া। সেখানে সাধারণত গোল মিসের মহড়া দিতে দেখা যায় তাঁকে।

গোলের উদ্‌যাপনে জার্সিই খুলে ফেলেছেন মাহবুবুর।
ছবি: প্রথম আলো

বছরখানেক বাদে কাল আবারও নাম্বার টেন পজিশনে নাবীবকে ঠেলে দিয়েছিলেন জেমি। দারুণ এক গোলে নাবীব বুঝিয়ে দিলেন ওই পজিশনটাই হয়তো তাঁর জন্য ভালো হতে পারে।

ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও সে কথা বলেছেন জেমি, ‘জীবন আসলে নাম্বার টেন পজিশনে খেলার মতোই খেলোয়াড়। কিন্তু ভালো মূল স্ট্রাইকারের অভাবে তাঁকে আমাদের নাম্বার নাইন পজিশনে খেলাতে হয়।’

এ জন্য আবাহনী লিমিটেডের পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসকে ধন্যবাদ দিতে পারেন জেমি! কারণ গত বছর এএফসি কাপে নাবীবকে নাম্বার টেন পজিশনে খেলিয়েই বাজিমাত করে দেখিয়েছিলেন লেমোস।

১০ মিনিটে নাবীর আর ৮০ মিনিটে মাহবুবুরের করা দুর্দান্ত দুই গোলেই মুজিব বর্ষ আন্তর্জাতিক সিরিজের প্রথম ম্যাচে নেপালকে কাল ২–০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

সমর্থকদের জন্য যেকোনো জয়ই আনন্দের। তবে সুন্দর গোলের ওপর ভর করে আসে যদি সে জয়, সেটির মাহাত্ম্য বেড়ে যায় অনেকাংশে। নতুন স্বাভাবিকে গ্যালারিতে সামাজিক দূরত্ব না মেনে বসা দর্শকেরা বাড়ি ফিরবেন হয়তো এই দুই গোলের গল্প করতে করতে।