ইউরোর মতো একটা টুর্নামেন্ট, মর্যাদার দিক দিয়ে বিশ্বকাপের পরেই যার স্থান। এখন যদি বলা হয় এমন একটা টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় আক্ষরিক অর্থে ‘বেকার’—মানবেন তো?
চমকে যাবেন না। কাগজে-কলমে ব্যাপারটা এমনই অনেকটা। এবারের ইউরোর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ইতালির জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা। এসি মিলানের সঙ্গে যাঁর চুক্তি শেষ হয়েছে জুনের শেষ দিনেই। কয়েক দিন পর যোগ দেবেন নতুন ক্লাবে। যত দিন যোগ দিচ্ছেন না, তত দিন পর্যন্ত তো তাঁকে বেকার বলতেই হবে। নাকি?
দোন্নারুমার চমকের ব্যাপারটা শুধু এখানেই শেষ হচ্ছে না। তিনি যে পজিশনের খেলোয়াড়, সে পজিশনটা সাধারণত একটু অনাদরের, অবহেলার। ফুটবল মাঠে স্ট্রাইকার, উইঙ্গার বা মিডফিল্ডাররা যেমন আলো কেড়ে নেন, গোলকিপার বা রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা ঠিক ততটা কাড়তে পারেন না। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করার সময় তাই স্ট্রাইকার বা মিডফিল্ডারদেরই প্রাধান্য দেখা যায়। দোন্নারুমাও সেই আলো কাড়তে না পারা দলেরই যাত্রী। কিন্তু এ ইউরোতে যা যা করে দেখালেন, এর পরে কি আর পাদপ্রদীপের আলো তাঁকে এড়িয়ে চলতে পারে?
তিন ম্যাচে দলকে গোল খেতে দেননি। নয়-নয়টা দুর্দান্ত সেভ করেছেন টুর্নামেন্টজুড়ে। গোল খেয়েছেন মাত্র চারটি। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে দলকে এক হাত দিয়ে দুর্দান্ত এক সেভ করে উদ্ধার করেছেন। সেমিফাইনাল আর ফাইনালের দুই টাইব্রেকে বলতে গেলে একাই উদ্ধার করেছেন ইতালিকে। সেমিফাইনালে আটকে দিয়েছেন আলভারো মোরাতার পেনাল্টি, ফাইনালে দোন্নারুমা-দেয়ালে বাধা পড়েছে জেডন সানচো আর বুকায়ো সাকার দুটি শট। যে গোলকিপারের পারফরম্যান্স এমন,তাঁকে উয়েফা কীভাবে এড়িয়ে থাকতে পারত?
পারেনি। পারেনি দেখেই ইতিহাসের প্রথম গোলকিপার হিসেবে ইউরোর সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন দোন্নারুমা। এখন বেকার হলেও দুদিন পর ঠিকই নতুন ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন এই গোলকিপার। ১৬ বছর বয়স থেকে এসি মিলানের হয়ে খেলা এই গোলকিপার আগামী মৌসুম থেকে হবেন নেইমার-রামোস-এমবাপ্পেদের সতীর্থ, খেলবেন পিএসজির হয়ে। ২২ বছরের জীবনে এত অর্জন, ভাবা যায়!
পিএসজি হয়তো এখন হাঁপ ছেড়েছে এই ভেবে যে ভাগ্যিস দোন্নারুমাকে আগেভাগে দলে ভিড়িয়ে রাখার কাজটা করেছিল তারা! না হয় এই ইতালিয়ান গোলকিপার যা করলেন, নিশ্চিতভাবেই এই ইউরোর পর তাঁকে নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত।
‘আমি ভাগ্যবান, কারণ আমি জিয়ানলুইজি বুফনের সঙ্গে খেলেছি। আমি ভাগ্যবান, কারণ আমি এখন জিয়ানলুইজি দোন্নারুমার সঙ্গে খেলি’—দলের অধিনায়ক জর্জো কিয়েল্লিনির এই একটা বাক্যই প্রমাণ করে, বুফনের উত্তরসূরি হিসেবে ইতালি সঠিক মানুষটাকেই বেছে নিয়েছে!