গ্যালারি ভরা হলো 'নকল' দর্শকে

নকল দর্শকের সামনে খেলছে আর্সেনাল। ছবি: টুইটার
নকল দর্শকের সামনে খেলছে আর্সেনাল। ছবি: টুইটার

হাইলাইটস: ১৯৯২ সালে গ্যালারির একাংশ দর্শকের দেয়ালচিত্র দিয়ে সাজিয়েছিল ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল


করোনাভাইরাসের ভয়ে দর্শক আসছে না মাঠে। তাই গ্যালারিতে ‘নকল’ দর্শক হাজির করছে বেলারুশিয়ান ফুটবল ক্লাব ডায়নামো ব্রেস্ত। বেলারুশের বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়নরা অবশ্য নতুন কিছু করেনি, ফুটবল ইতিহাসে এ রকম উদাহরণের অভাব নেই। ‘নকল’ দর্শক দিয়ে গ্যালারি ভরার সবচেয়ে বড় ‘কীর্তি’ বিখ্যাত এক ক্লাবের—আর্সেনাল।

গানাররা মাঠে ‘নকল’ দর্শক এনেছিল ১৯৯২ সালে। ইংলিশ ক্লাবটির সে সময়ের স্টেডিয়াম হাইবুরিতে তখন সংস্কার কাজ চলছিল। ভেঙে ফেলা হয়েছিল নর্থ ব্যাঙ্ক নামে পরিচিত উত্তর গ্যালারি। আগস্টে মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও সংস্কার কাজ শেষ করা যায়নি। গোল পোস্টের পেছনে নির্মাণকাজ চলছে, এটা কেমন দেখাবে—এই ভাবনা থেকেই অভিনব এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে গানার কর্তৃপক্ষ। গ্যালারির ওই অংশটা দেয়ালচিত্র বা ম্যুরাল দিয়ে ঢেকে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। দর্শকেরা খেলা দেখছেন এমন ছবিই আঁকা হয় সেখানে।

তবে অভিজ্ঞতা সুখের ছিল না আর্সেনালের। চারদিক থেকে সমালোচনার তির ছুটে আসে। ছবিতে বিশেষ বর্ণের মানুষ ও নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এমন কথা ওঠে। শিশুদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থাগুলোও খেপে যায়। তারা দাবি তোলে দেয়ালচিত্রে শিশুদের ছবি ভুলভাবে আঁকা হয়েছে। বাবা-মা সঙ্গে খেলা দেখছে শিশুরা, এমন ছবিই এঁকেছিলেন শিল্পীরা। কিন্তু দাতব্য সংস্থার দাবি ছবি দেখা বোঝা যায় না ওই শিশুরা নিজেদের বাবা-মার পাশে খেলা দেখছে। সমালোচনার মুখে বেশ কয়েকবার দেয়ালচিত্রে পরিবর্তন আনা হয়। চারজন ‘নান’ খেলা দেখছেন—এই দৃশ্যটা পরে যোগ করা হয়েছিল।

ডায়নামো ব্রেস্তের গ্যালারিতে নকল দর্শক। ছবি: ডায়নামো ব্রেস্ত টুইটার অ্যাকাউন্ট
ডায়নামো ব্রেস্তের গ্যালারিতে নকল দর্শক। ছবি: ডায়নামো ব্রেস্ত টুইটার অ্যাকাউন্ট

দেয়ালচিত্রের মতো মৌসুমটাও বাজে গিয়েছিল আর্সেনালের। কতটা তা শোনা যাক সে সময়ে দলটির নিয়মিত সেন্টারব্যাক স্টিভ বোল্ডের মুখ থেকে। অবসরের পর ২০০৬ সালে ‘হাইবুরি ম্যুরাল’ নিয়ে বিতৃষ্ণার কথা বলেন বোল্ড, ‘এক দঙ্গল পটে আঁকা মানুষ চুপচাপ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে—ওই পাশের দেয়ালচিত্রটা আসলেই অস্বাভাবিক ছিল। ওটার সামনে খেলতে কেমন অস্বস্তি লাগত। মাঠের পারফরম্যান্সেও সেটিরও প্রমাণ আছে। এই দেয়ালচিত্রের সামনে খেলা প্রথম ম্যাচে নরউইচের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও ২-৩ গোলে হেরে যাই আমরা।’

পুরো মৌসুমটাই বাজে কেটেছিল গানারদের। খোঁড়াতে খোঁড়াতে শেষ পর্যন্ত ১০ম হয়েছিল দলটি।

১৮ বছর পর গানারদের পথ অনুসরণ করে ইতালির সিরি ‘বি’ ক্লাব ত্রিস্তিনা। ক্লাবটির ভেন্যু স্তাদিও নেরেও রোক্কোর দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল ৩২ হাজার ৪৫৪। কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি গ্যালারি ফাঁকা পড়ে থাকত বেশির ভাগ ম্যাচে। তাই ২০১০ সালে মাঠের এক পাশের গ্যালারি বন্ধ করে দেয় ত্রিস্তিনা কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখানে ভিনাইলের বিশাল পোস্টার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। দর্শকেরা খেলা দেখছেন এমনই ছবিই ছিল সেই পোস্টারে।

ক্লাবটি মালিক মরিসিও জাম্পেরিনি সাফাই গেয়েছিলেন এমন সিদ্ধান্তের, ‘পুরো গ্যালারি সত্যিকারের দর্শকে ঠাসা, এমন দৃশ্যই আমরা দেখতে চাই। মানুষ যাতে মাঠে আসে তা নিশ্চিত করতে কত চেষ্টাই না করেছি আমরা। তবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তাই আর কী করা, এখন এভাবেই একটু চেষ্টা করলাম গ্যালারি ভরাতে।’