ঘরের ছেলে ঘরে ফেরো, আর্জেন্টিনা প্রেসিডেন্টের আকুতি

মেসিকে আর্জেন্টিনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টছবি: রয়টার্স

মেসি বার্সেলোনা ছেড়ে কোথায় যাবেন?

শতকরা নব্বই জন এখন বলবেন ম্যানচেস্টার সিটির নাম। তাই বলে কি অন্যান্য ক্লাব মেসিকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেবে? নাহ্। যেমনটা ছাড়ছে না মেসির জন্মস্থানের ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ। যুক্তিপূর্ণ চিন্তা করলে ইউরোপ ছেড়ে আর্জেন্টিনার কোনো ক্লাবে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না মেসির। বেতনের ব্যাপার আছে, আছে সম্ভাব্য ট্রান্সফার ফি’র চিন্তাও। নিজের পরিবারের নিরাপত্তা ও সার্বিক জীবনযাত্রার মান চিন্তা করলেও ইউরোপের আয়েশি জীবন ছেড়ে এখনই আর্জেন্টিনায় আসার কথা ভাববেন না মেসি।

কিন্তু মন কী আর এত যুক্তি মানে? যেমনটা মানছে না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের মন। তিনি এখনো আশা করে বসে আছেন, বার্সেলোনা ছেড়ে মেসি ফিরবেন নিজের আঁতুড়ঘরে। যেখানে ফুটবলের অ-আ-ক-খ শিখেছিলেন এই তারকা। ফিরবেন নিউয়েলস ওল্ড বয়েজে।

এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে গতকাল আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ মেসিকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশে ফিরে আসার জন্য, তুমি আমাদের সবার মনের মধ্যে আছ। আমরা কখনই তোমাকে আমাদের দেশে খেলতে দেখিনি। আমাদের দেশে এসে ক্যারিয়ার শেষ করো, নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে, যেটা তোমারই ক্লাব। আমাদের সেই আনন্দটা দাও, তোমার ক্যারিয়ারের শেষটা দেখার জন্য।

মেসির জন্ম আর্জেন্টিনার রোজারিওয়ে। ওই শহরের ফুটবল ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজে জীবনের কোনো এক সময়ে খেলার ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। এত দিনে সে ব্যাপারটি সত্যি হতে যাচ্ছে বলে আশায় বুক বেঁধেছেন রোজারিওর মানুষজন। ভাবনায় বাস্তবতার পরিমাণ সামান্য হলেও শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ছেলেটিকে নিয়ে রোজারিওবাসীর আবেগ স্বাভাবিক ব্যাপারই।

বার্সেলোনায় আর খেলতে চান না—ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে এ কথা মেসি জানিয়ে দেওয়ার পরপর সেদিন রোজারিওর মানুষ রাস্তায় নেমে উৎসব করেছে। ব্যাপার অনেকটা এমন যে মেসি বার্সেলোনা ছেড়ে চলে আসছেন নিউয়েলসে খেলতে। বৃহস্পতিবার রোজারিওর সন্ধ্যায় হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। হাজার হাজার সমর্থক নিউয়েলসের পতাকা নিয়ে বাদ্যি বাজিয়ে উদ্‌যাপনে মেতেছেন। রাস্তা দিয়ে যারা যাচ্ছিলেন, তারা অবাক হতেই পারেন। হঠাৎ কী হলো! নিউয়েলস কি বিশেষ কিছু জিতে গেছে! এ উৎসবের কারণ কি!

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ
ছবি: রয়টার্স

উৎসবের কারণটা জেনে-শুনে মুখ বাঁকিয়েছেন অনেকেই। ‘গাছে কাঁঠাল আর গোঁফে তেল’ হয়তো এটাকেই বলে। মেসি বার্সেলোনা ছাড়ার কথা বলেও সারতে পারেননি, আর রোজারিওতে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। বেশির ভাগ সমর্থকই কিন্তু বিশ্বাস করেন না যে মেসি আসবেন। তবে আর্জেন্টাইন তারকার বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্তে ঘরে ছেলে ঘরে ফেরার একটা সম্ভাবনা তো তৈরি হয়েছে! এটাই বা কম কি!

রোজারিওবাসীর মনে বিশ্বাসটা যেন আরও পোক্ত হয়েছে। মেসি ক্যারিয়ার শেষ করার আগে একদিন না একদিন ঠিকই ঘরে ফিরবেন। নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের জার্সি পরে মেসিকে খেলতে দেখা যাবে ঘরের মাঠে। সে দিন কি খুব বেশি দূরে!

মেসি নিজে কিন্তু রোজারিও নিয়ে আবেগী। কোনো এক কালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমায় যদি জিজ্ঞেস করেন আমার জীবনের সেরা স্মৃতিগুলো কোথায় ছড়িয়ে আছে, আমি নির্দ্বিধায় বলব রোজারিওর কথা। আমার জন্মস্থান। আমার ছোটবেলা কেটেছে ওখানে।’ মেসি নিজের জন্মস্থান নিয়ে কতটা আবেগী, সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধ হয় একটাই-নিজের বিয়েটা পর্যন্ত তিনি করেছিলেন এ শহরে এসে।

রোজারিওকে নিয়ে মেসির আবেগ ও বর্তমানে ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনা, সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও সুর মিলিয়েছেন হাজার-হাজার রোজারিওবাসীদের সঙ্গে। আজ হোক কাল হোক, আশাটা পূরণ হয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।