ঘুরে দাঁড়ানোর রাতে রিয়ালের মুখরক্ষা

কাসেমিরোর গোলেই রক্ষা রিয়ালের।ছবি : রয়টার্স

এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে চেনা পরিচিত সেই রিয়াল মাদ্রিদকে দেখা যাচ্ছে না যেন। যে রিয়াল ম্যাচের লাগাম নিজের হাতে ধরে রাখতে অভ্যস্ত। অভ্যস্ত প্রতিপক্ষকে নব্বই মিনিটের লড়াইয়ে আস্তে আস্তে পর্যুদস্ত করতে। যে রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগের অবিসংবাদিত রাজাধিরাজ। ১৩ বারের শিরোপাজয়ীরা গত সপ্তাহেই চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমের প্রথম ম্যাচে হেরে বসেছিল শাখতার দোনেৎস্কের কাছে, ৩-২ গোলে। যে শাখতার করোনার প্রকোপে মূল দলের দশ জনকে খেলাতেই পারেনি। শনিবার লিগের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে আনন্দের সাগরে ভাসলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে আবারও হোঁচট খেয়েছেন রামোস-বেনজেমারা। বরুসিয়া ম’গ্লাডবাখের বিপক্ষে ড্র করেছেন ২-২ গোলে।

তবে ম্যাচের ফলাফল আরও খারাপ হতে পারত রিয়ালের জন্য। হয়তো বা হেরেও বসতেন রামোসরা। ৮৫ মিনিটে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর রিয়ালকে এক পয়েন্ট এনে দিয়েছে খেলোয়াড়দের হার-না-মানা মানসিকতা। একদম শেষ মুহূর্তে স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা আর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরোর গোলে ড্র করে ফিরেছে তাঁরা। শুধু তাই নয়, ফিরে আসার নিদর্শন রেখেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ ও আতালান্তাও। সালজবুর্গের বিপক্ষে একপর্যায়ে ১-২ গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও নিজেদের মাঠে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছে আতলেতিকো। প্রথমে দুই গোল খাওয়ার পরেও রিয়ালের মতো শেষ মুহূর্তে দুই গোল দিয়ে আয়াক্সের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিয়েছে আতালান্তা।

থুরাম ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
ছবি : রয়টার্স

৪-৪-২ ছকে নামা ম’গ্লাডবাখের বিপক্ষে ৪-৩-৩ ছকে মাঠে নেমেছিল রিয়াল। বার্সার বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে রাইটব্যাক হিসেবে বেশ ভালো খেলা লুকাস ভাজকেজ এই ম্যাচেও নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন। এ ছাড়া বার্সার বিপক্ষে যারা মূল একাদশে ছিলেন, তারা এই ম্যাচেও ছিলেন। ২৯ মিনিটে টনি ক্রুসের দূরপাল্লার এক শট বেশ ভালো রিফ্লেক্সে আটকে দেন ম’গ্লাডবাখের সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমের। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে স্রোতের অনেকটা বিপরীতেই গোল করে বসে ম’গ্লাডবাখ। মাঝমাঠ থেকে জার্মান মিডফিল্ডার লার্স স্টিনডলের সঙ্গে ওয়ান-টু করে ডি-বক্সের একটু বাইরে মার্কাস থুরামের উদ্দেশে বল বাড়ান ফরাসি স্ট্রাইকার আলাসানে প্লিয়া। রাফায়েল ভারানের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে যাওয়া পাসটা অত দ্রুত না হলেও রিয়াল রক্ষণভাগের কেউ আর তা আটকাতে পারেননি। রামোস-কাসেমিরোরাও ছিলেন ওপরে। পরে স্লাইড ট্যাকল করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি ভাজকেজ। বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটে দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম।

৪৪ মিনিটে সোমেরের আরেকটি দুর্দান্ত সেভ গোলবঞ্চিত করে মার্কো আসেনসিওকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরেকবার গোলবঞ্চিত হন আসেনসিও। এবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলপোস্ট। রিয়ালের হতাশার মধ্যেই ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলে মনশেনগ্লাডবাখ। এবারও গোল-শিকারির ভূমিকায় মার্কাস থুরাম। বাবা লিলিয়ান এক সময়ে বার্সেলোনা রক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, বাবার পর এবার ছেলেও রিয়ালকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন ক্ষণে ক্ষণে। ডান প্রান্ত থেকে রাইটব্যাক স্টেফান লাইনারের ক্রসে যে ভলিটি প্লিয়া করেছিলেন, রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়া কোনোভাবে তা সেভ করলেও বলটা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। ফলে বল চলে যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা থুরামের কাছে। টুক করে গোল করতে ভুল হয়নি এই ফরাসি স্ট্রাইকারের।

ফেলিক্সের জোড়া গোলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আতলেতিকোও।
ছবি : রয়টার্স

৬১ মিনিটে আরেকটা দুর্দান্ত সুযোগ পায় ম’গ্লাডবাখ। রিয়াল রক্ষণ ভেদ করে বিপজ্জনকভাবে কোর্তোয়ার সামনে পড়ে যান প্লিয়া। তবে বেলজিয়ান গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় স্কোরলাইন ৩-০ হয়নি। শেষ সময়ে আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়ে দেয় রিয়াল। এমনই এক আক্রমণে কাসেমিরোর হেড থেকে বল পেয়ে বাইসাইকেল কিকে ব্যবধান কমান বেনজেমা। এর কিছুক্ষণ পরে কাসেমিরোই গোলদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। রামোসের কাছ থেকে বল নিয়ে ব্রাজিল মিডফিল্ডার সমতায় ফেরান দলকে। আর রিয়াল শিবিরে ফিরে আসে হার এড়ানোর স্বস্তি।

প্রথমে গোল খেয়ে পরে ফিরে এসেছিল আতলেতিকোও। তবে রিয়ালের মতো ড্র না, পুরো তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে তাঁরা। ম্যাচের ২৯ মিনিটে গোল করে অবশ্য আতলেতিকোই এগিয়ে গিয়েছিল। গোল করেন মিডফিল্ডার মার্কোস ইয়োরেন্তে। পরে দুই গোল করে ম্যাচটা জমিয়ে দেন সালজবুর্গ। তাদের যাওয়ার পেছনে অবশ্য আতলেতিকোর ব্রাজিলিয়ান সেন্টারব্যাক ফেলিপের অবদান বেশি, একটা আত্মঘাতী গোল করেছেন। বাকি গোলটা উইঙ্গার দমিনিক জবোস্লাইয়ের। দ্বিতীয়ার্ধে পর্তুগিজ তারকা জোয়াও ফেলিক্সের জোড়া গোলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে দিয়েগো সিমিওনের দল।

দুভান জাপাতাকে শেষমেশ আটকাতে পারেনি আয়াক্স।
ছবি : রয়টার্স

নিজেদের মাঠে প্রথমে দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও আয়াক্সের বিপক্ষে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আতালান্তা। লাসিনা ত্রায়োরে আর দুসান তাদিচের দুই গোলে আয়াক্স এগিয়ে গেলেও পরে ম্যাচে সমতা আসে কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার দুভান জাপাতার জোড়া গোলে। ওদিকে গত সপ্তাহে রিয়ালকে হারিয়ে চমক দেখানো শাখতার ইন্টার মিলানকে আটকে দিয়েছে গোলশূন্য ড্রয়ে। দুই ম্যাচ শেষ এক জয় আর এক ড্র নিয়ে গ্রুপে সবার ওপরে শাখতার, এক পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে আছে রিয়াল। মনশেনগ্লাডবাখ দুইয়ে, ইন্টার তিনে।