চমক দেখাল লিভারপুল

ইউরোপীয় ফুটবলের শীতকালীন দলবদল শেষ হয়েছে গত রাতে। মাসজুড়ে ক্লাবগুলো পছন্দের খেলোয়াড় কিনে নিজেদের শক্তি বাড়াতে কিংবা দুর্বলতা কাটাতে চেয়েছে, আবার অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড় ছেড়ে খরচ কমাতেও চেয়েছে।

আগামী মৌসুমের আগপর্যন্ত এই চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেটানোর সুযোগ গত রাত পর্যন্তই ছিল তাদের সামনে।

গত রাতে শেষ মুহূর্তে অনেক নতুন চুক্তিই হয়েছে ক্লাবগুলোর মধ্যে। শেষ দিকে কোন ক্লাব কাকে দলে আনল, ছেড়েই–বা দিল কাকে, আসুন দেখে নেওয়া যাক একনজরে—

তুরস্কের সেন্টারব্যাক ওজান কাবাক।
ছবি: টুইটার

শেষ দিনে দুই ডিফেন্ডার দলে এনেছে লিভারপুল

চমক দেখিয়েছে লিভারপুল। চোটের কারণে গোটা মৌসুমের জন্য দল থেকে ছিটকে গেছেন তিন মূল সেন্টারব্যাক ভার্জিল ফন ডাইক, জোয়েল মাতিপ ও জো গোমেজ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই করোনাকালে টাকা খরচ করে নতুন সেন্টারব্যাক আনতে চাইছিল না বর্তমান ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়নরা।

ভরসা রেখেছিল নাথানিয়েল ফিলিপস, রিস উইলিয়ামসের মতো আনকোরা সেন্টারব্যাকদের ওপর। ভরসা রেখেছিল ফাবিনিও, জর্ডান হেন্ডারসনদের মতো তারকাদের ওপর, যাঁরা আসলে মিডফিল্ডার।

কিন্তু এত কিছুর পরও ভালো সেন্টারব্যাক না থাকায় লিভারপুলের দুর্বলতা বোঝা যাচ্ছিল ভালোভাবেই। যেভাবে তারা প্রতি–আক্রমণ করতে চায়, গোল করতে চায়, খেলতে চায়—সেভাবে খেলতে পারছিল না। তাই শেষ দিনেই দুজন নতুন সেন্টারব্যাক দলে ভিড়িয়েছে তারা।

ওয়েলশ সেন্টারব্যাক বেন ডেভিস
ছবি: টুইটার

শালকে ০৪ থেকে দলে এসেছেন তুরস্কের ২০ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক ওজান কাবাক। আপাতত ১০ লাখ (১ মিলিয়ন) পাউন্ডের বিনিময়ে আগামী জুন পর্যন্ত ধারে এলেও কাবাক যদি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে ১ কোটি ৮০ লাখ (১৮ মিলিয়ন) পাউন্ডের বিনিময়ে আগামী জুনে তাঁকে পাকাপাকিভাবে দলে আনতে পারবে লিভারপুল।

শুধু কাবাকই নন, লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন প্রেস্টন নর্থ এন্ডের ওয়েলশ সেন্টারব্যাক বেন ডেভিসও। আপাতত পাঁচ লাখ পাউন্ডের (আধা মিলিয়ন পাউন্ড) বিনিময়ে যোগ দিলেও বিভিন্ন পারফরম্যান্স–সংক্রান্ত লক্ষ্য পূরণ করলে আরও ১১ লাখ পাউন্ড পকেটে পুরতে পারবে প্রেস্টন।

ওদিকে জাপানি উইঙ্গার তাকুমি মিনামিনোকে সাউদাম্পটনে পাঠিয়েছে লিভারপুল। আগামী ছয় মাসের জন্য ধারে ওই ক্লাবে থাকবেন তিনি, ধার চুক্তি শেষ হওয়ার পর মিনামিনোকে পাকাপাকিভাবে কেনার কোনো শর্ত জুড়ে দেয়নি লিভারপুল।

পচেত্তিনোকে খেলোয়াড় দিলেন না মরিনিও

এমনিতেই নতুন কোচ জোসে মরিনিওর অধীনে তেমন সুযোগ-টুযোগ পান না, ইংলিশ মিডফিল্ডার দেলে আলি চেয়েছিলেন, সাবেক কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর নতুন ক্লাব পিএসজিতে নাম লেখাতে।

কিন্তু শেষমেশ আদর্শ বিকল্প না পাওয়ায় আলিকে ছাড়তে রাজি হননি মরিনিও। সঙ্গে কিছুদিন আগে দলের মূল স্ট্রাইকার হ্যারি কেইনও চোটে পড়েছেন, এই অবস্থায় মরিনিও কীভাবে কাউকে দলে না এনে খেলোয়াড় ছাড়েন?

সাবেক জার্মান মিডফিল্ডার সামি খেদিরা
ছবি: টুইটার

সাবেক রিয়াল তারকা জায়গা পেলেন না প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে
রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক জার্মান মিডফিল্ডার সামি খেদিরা গত মৌসুমেই বুঝে গিয়েছিলেন, জুভেন্টাসের মূল একাদশে জায়গা হবে না। তাই এই মৌসুমে চেয়েছিলেন অন্য কোনো ক্লাবে যেতে, চেয়েছিলেন ইংলিশ ফুটবলের স্বাদ নিতে। পারলেন না। ঘুরেফিরে ঘরের মাটিতেই ফিরেছেন খেদিরা, যোগ দিয়েছেন হার্থা বার্লিনে। ওদিকে রিয়ালের আরেক সাবেক উইঙ্গার হেসে রদ্রিগেজ পিএসজি ঘুরে যোগ দিয়েছেন স্প্যানিশ ক্লাব লাস পালমাসে।

বায়ার্নকে ডিফেন্ডার কেনার পথ করে দিল লাইপজিগ
লাইপজিগের ফরাসি ডিফেন্ডার দায়োত উপামেকানোর পেছনে আগ্রহী ক্লাবের অভাব নেই। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে শুরু করে লিভারপুল, চেলসি থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এসি মিলান থেকে শুরু করে পিএসজি—সবাই কোনো না কোনো সময়ে এই ডিফেন্ডারের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছে।

ফরাসি ডিফেন্ডার দায়োত উপামেকানো
ছবি: টুইটার

তবে সব সময় সবার চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। এমনকি দলটার প্রধান নির্বাহী কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে তো সেদিন প্রকাশ্যেই বলেছেন, উপামেকানোকে চান তাঁরা। উপামেকানোর চুক্তিতে একটা বিশেষ শর্ত আছে। চলতি মৌসুমের শেষেই চাইলে চার কোটি ইউরোর বিনিময়ে আগ্রহী ক্লাব তাঁকে দলে নিতে পারবে। আর সেই সুযোগটাই নিতে যাচ্ছে বায়ার্ন।

এদিকে উপামেকানো যান আর না যান, এর মধ্যেই তাঁর বিকল্প দলে এনে ফেলেছে লাইপজিগ। জার্মান ক্লাব স্ত্রাসবুর্গ থেকে ফরাসি ডিফেন্ডার মোহাম্মদ সিমাকানকে ১৩ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভিড়িয়েছে তারা। তবে এখনই সিমাকান লাইপজিগে আসবেন না, আসবেন আগামী জুনে। অর্থাৎ উপামেকানো গেলেই সঙ্গে সঙ্গে চলে আসছেন তিনি!

গোটা মাসে সম্পাদিত হওয়া সব গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি দেখে নিন একনজরে।

ধারে গেলেন যাঁরা:

ওজান কাবাক (শালকে ০৪ থেকে লিভারপুল)
জ্যাঁ-ক্লাইর তোদিবো (বার্সেলোনা থেকে নিস)
জশ উইলক (আর্সেনাল থেকে নিউক্যাসল)
এইনসলি মেইটল্যান্ড নাইলস (আর্সেনাল থেকে ওয়েস্ট ব্রম)
রোলান্দো মানদ্রাগোরা (জুভেন্টাস থেকে তোরিনো)
জোশুয়া জির্কজি (বায়ার্ন মিউনিখ থেকে পারমা)
পাত্রিক কুত্রোনে (উলভারহ্যাম্পটন থেকে ভ্যালেন্সিয়া)
পাওলো গাজ্জানিগা (টটেনহাম থেকে এলচে)
দানিয়েলে রুগানি (জুভেন্টাস থেকে ক্যালিয়ারি)
জেসি লিনগার্ড (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ওয়েস্ট হাম)
আদোলফো গাইচ (সিএসকেএ মস্কো থেকে বেনেভেন্তো)
মার্টিন ওডেগার্ড (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে আর্সেনাল)
আরকাদিউশ মিলিক (নাপোলি থেকে মার্শেই)
সিদ কোলাসিনাচ (আর্সেনাল থেকে শালকে)
উইলিয়ান জোসে (রিয়াল সোসিয়েদাদ থেকে উলভারহ্যাম্পটন)
ড্যানি ড্রিঙ্কওয়াটার (চেলসি থেকে কাসিমপাসা)
উইলিয়ান জোসে (রিয়াল সোসিয়েদাদ থেকে উলভারহ্যাম্পটন)
লুকা ইয়োভিচ (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট)
মুসা দেম্বেলে (অলিম্পিক লিওঁ থেকে আতলেতিকো মাদ্রিদ)
তাকেফুসা কুবো (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে হেতাফে)
ম্যাট রায়ান (ব্রাইটন থেকে আর্সেনাল)
কার্লেস আলেনিয়া (বার্সেলোনা থেকে হেতাফে)
রাজ্জা নাইনগোলান (ইন্টার মিলান থেকে ক্যালিয়ারি)

জার্মান সেন্টারব্যাক শকোদ্রান মুস্তাফি
ছবি: টুইটার

পূর্ণাঙ্গ চুক্তি:
সামি খেদিরা (জুভেন্টাস থেকে হার্থা বার্লিন, ফ্রি)
শকোদ্রান মুস্তাফি (আর্সেনাল থেকে শালকে, ফ্রি)
বেন ডেভিস (প্রেস্টন নর্থ এন্ড থেকে লিভারপুল, ০.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
ভিক্টর কোভালেঙ্কো (শাখতার দোনেতস্ক থেকে আতালান্তা, ০.৬ মিলিয়ন পাউন্ড)
জেরার্ড ডেলোফেউ (ওয়াটফোর্ড থেকে উদিনেসে, ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
স্টেফান এল শারাউয়ি (সাংহাই শেনহুয়া থেকে রোমা, ফ্রি)
হাল্ক (সাংহাই শেনহুয়া থেকে আতলেতিকো মিনেইরো, ফ্রি)
সকরাতিস পাপাস্থাতোপোলোস (আর্সেনাল থেকে অলিম্পিয়াকোস, ফ্রি)
মাতেও মুসাক্কিও (এসি মিলান থেকে লাৎসিও, ফ্রি)
পাপু গোমেজ (আতালান্তা থেকে সেভিয়া, ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
সকরাতিস পাপাস্থাতোপোলোস (আর্সেনাল থেকে অলিম্পিয়াকোস, ফ্রি)
ক্লাস-ইয়ান হুন্টেলার (আয়াক্স থেকে শালকে, ফ্রি)
জ্যাক উইলশেয়ার (ওয়েস্ট হাম থেকে বোর্নমাউথ, ফ্রি)
ক্রেপিন দিয়াত্তা (ক্লাব ব্রুজেস থেকে মোনাকো, ১১.৭ মিলিয়ন পাউন্ড)
মেসুত ওজিল (আর্সেনাল থেকে ফেনেরবাচে, ফ্রি)
সেবাস্তিয়েন আলের (ওয়েস্ট হাম থেকে আয়াক্স, ২০ মিলিয়ন পাউন্ড)
আমাদ দিয়ালো (আতালান্তা থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৮.৭ মিলিয়ন পাউন্ড)