চাইলেও মেসিকে জানুয়ারিতে বেচতে পারবে না বার্সা

মেসি বার্সায়ই থাকবেন শেষ পর্যন্ত?ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনার সাবেক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিভালদোর ধারণা, এই মৌসুমের পর আর বার্সেলোনায় থাকবেন না লিওনেল মেসি। রিভালদোর সঙ্গে মতের মিল আছে, এমন মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছেই!

আবার এদিকে ইউরোপের সংবাদমাধ্যমে মৃদু গুঞ্জন, আগামী জানুয়ারিতেই মেসিকে পেতে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়বে ম্যানচেস্টার সিটি। বার্সায় মেসি যে দিনে দিনে বিরক্ত হয়ে উঠছেন, তা স্পষ্ট। বার্সাও মেসিকে যেতে দিলে আর্থিকভাবে কিছুটা স্বস্তিই পাবে। সে হিসেবে জানুয়ারিতে মেসির বার্সা ছাড়ার একটা সম্ভাবনা তো দেখা যাচ্ছে! কিন্তু সেটিও সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিচ্ছে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা। বার্সেলোনার এই অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের মেসিকে বিক্রি করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও নেই বলে জানাচ্ছে মার্কা।

বার্সায় মেসির অস্বস্তি প্রতিদিনই বাড়ছে। সর্বশেষ সেটির প্রমাণ পাওয়া গেছে গত পরশু, আর্জেন্টিনার হয়ে খেলে বার্সেলোনায় ফেরার পথে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখে পড়েন মেসি। আঁতোয়ান গ্রিজমানের বার্সায় থিতু হতে না পারার কারণ মেসিই—গ্রিজমানের সাবেক মুখপাত্রের এমন অভিযোগের ব্যাপারে মেসির কাছে জানতে চাওয়া হলে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড বিরক্তির সুরে বলেন, ‘এই ক্লাবটার সব সমস্যার মূলে নিজেকে অভিযুক্ত হতে দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত!’

গত আগস্টেই বার্সা ছাড়তে চেয়েও চুক্তির বেড়াজালে আটকে থাকতে হয় মেসিকে। কিন্তু প্রতিবছর চ্যাম্পিয়নস লিগে লজ্জার বিদায়ের পর বার্সার বড় শিরোপা জিততে চাওয়ার ইচ্ছা আর সেটির প্রক্রিয়ার (স্পোর্টিং প্রজেক্ট) ওপরই মেসির ভরসা ভেঙে গেছে। তাঁর চুক্তি এই মৌসুম শেষেই শেষ।

এদিকে মেসির ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার পর থেকে ক্লাবের খোলনলচেও বদলে গেছে। এরই মধ্যে ক্লাবের সদস্যরা ভোট দিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউকে, অবস্থা বেগতিক দেখে পরে বার্তোমেউ ও তাঁর বোর্ড নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছে। আপাতত বার্সার দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের হাতে, যাদের মূল দায়িত্ব নতুন সভাপতি নির্বাচন করা। স্পেনে বলা হচ্ছে, নতুন নির্বাচিত সভাপতি ভালো স্পোর্টিং প্রজেক্ট দেখাতে পারলে হয়তো মেসি থেকে যাবেন।

গ্রিজমানকে ঘিরে মেসিকে নিয়ে নতুন সমালোচনা উঠেছে, যেটিতে মেসি বিরক্ত।
ছবি: রয়টার্স

এদিকে গতকাল থেকে ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। গত আগস্টে মেসি ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার পর থেকেই বলা হচ্ছিল, সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলার বর্তমান ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতেই যাবেন মেসি। গতকাল সিটির সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছেন গার্দিওলা। এরপরই ইংলিশ দৈনিক ডেইলি সানে খবর আসে, এই জানুয়ারিতেই মেসির জন্য সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি ইউরোর প্রস্তাব করবে সিটি। সঙ্গে একসময়ে বার্সেলোনার একাডেমিতেই বেড়ে ওঠা ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়াকেও দেওয়ার প্রস্তাব করবে। এই গার্সিয়ার জন্য গত আগস্টের দলবদলের বাজারেও চেষ্টা করেছিল বার্সা, কিন্তু সিটির চাওয়ার সঙ্গে বার্সার দামে মেলেনি। এবারও মেসিকে বার্সা না বিক্রি করলে গার্সিয়াকে আলাদাভাবে কিনতে গেলে আবার সিটি চড়া দাম হাঁকবে বলেই গুঞ্জন। স্পেনে গুঞ্জন, গার্দিওলার চুক্তির সময়ে সিটির মালিকপক্ষ নাকি বলে দিয়েছে, ‘মেসিকে আনো!’

আবার মেসিকে বিক্রি করলে আর্থিকভাবে বার্সা একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। করোনার কারণে ক্ষতি সামলাতে সব ক্লাবেই এবার বেতনের সীমা বেঁধে দিয়েছে স্প্যানিশ লিগ কর্তৃপক্ষ। মেসি চলে গেলে তাঁর কর–পরবর্তী পাঁচ কোটি ইউরো বেতনের দায় থেকে কিছুটা বাঁচবে বার্সা, সে ক্ষেত্রে লা লিগার বেঁধে দেওয়া সীমা মানতে সুবিধা হবে। যদিও মেসি চলে গেলে বার্সার আর্থিক ক্ষতিও হবে। কদিন আগে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, শুধু মেসির কারণেই মৌসুমে ৩০ কোটি ইউরো আয় হয় বার্সার!

কিন্তু মেসিকে বার্সা বিক্রি করতে পারবে কি? ক্লাবের গঠনতন্ত্র তো সেই অনুমতি দেয় না। অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের খেলোয়াড় বিক্রি করার ক্ষমতাই নেই। ‘অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড আগের বোর্ডের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে, তবে সেসব শুধু ক্লাবের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা আর ক্লাবের স্বার্থরক্ষার মধ্যে সীমিত’—এমনটাই লেখা বার্সার নীতিমালায়। অর্থাৎ প্রতিদিনের সাধারণ কার্যক্রম আর পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন আয়োজনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের ক্ষমতা সীমিত। কোনো চুক্তি সই করা বা খেলোয়াড় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত তাদের আওতাধীন নয়।
আগামী ২৪ জানুয়ারি বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচন।