চাটি মেরে লাল কার্ড দেখলেন মেসি

লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছেন মেসি।ছবি: রয়টার্স

এমন দৃশ্য দেখার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। এমনকি লিওনেল মেসিও ভাবতে পারেননি কী কাণ্ড করতে চলেছেন তিনি! ম্যাচের একদম অন্তিম সময়, দল ৩-২ গোলে পিছিয়ে, এ অবস্থায় কার মাথা ঠিক থাকে!

সেভিয়ায় কাল রাতে স্প্যানিশ সুপার কোপার ফাইনালে একেবারে শেষ মুহূর্তে মেসিরও মাথা ঠিক থাকেনি। ম্যাচের ১২১তম মিনিটে (অতিরিক্ত সময়) লাল কার্ড দেখেন মেসি। বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে এটাই তাঁর প্রথম লাল কার্ড। মাথা নাড়তে নাড়তে তাঁর মাঠ ছাড়ার দৃশ্যটা মনে থাকবে বার্সা–সমর্থকদের।

অ্যাথলেটিক বিলবাও বক্সের বাইরে বল পেয়েছিলেন মেসি। বাঁ প্রান্তে সতীর্থকে বল ঠেলে বিলবাওয়ের বক্সে ঢুকতে দৌড় শুরু করেছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। তাঁকে বাধা দিতে পাশ থেকে সামনে গিয়ে পড়েন বিলবাওয়ের স্ট্রাইকার আসিয়ের ভিয়ালিব্রে। ম্যাচে যেকোনো মুহূর্তে শেষ বাঁশি বাজবে, এর মধ্যে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সামনে পড়ে দৌড়ে বাধা দেওয়ায় সম্ভবত মেজাজ হারান বার্সা তারকা। ভিয়ালিব্রের মাথায় চাটি মেরে বসেন!

বার্সা ক্যারিয়ারের প্রথম লালকার্ড দেখলেন মেসি
ছবি: রয়টার্স

মেসির এই অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) চোখ এড়ায়নি। মেসি যখন ভিয়ালিব্রেকে চাটি মারেন, তখন পায়ে বলও ছিল না। ‘অফ দ্য বল’ মুহূর্তে এমন মারাত্মক অপরাধের জন্য লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে মেসিকে। বার্সাও ম্যাচটা হেরেছে ৩-২ ব্যবধানে। বার্সার মূল দলে ৭৫৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম লাল কার্ড মেসির। গোটা ক্যারিয়ারে এ নিয়ে চতুর্থবার লাল কার্ড দেখলেন তিনি। ২০০৫ সালে বার্সা ‘বি’ দলের হয়ে লাল কার্ড দেখেছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। এ ছাড়া আর্জেন্টিনার জার্সিতে লাল কার্ড দেখেছেন দুবার, এর মধ্যে রয়েছে তাঁর অভিষেক ম্যাচও।

চোটের কারণে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি মেসি। ফাইনালে প্রথমার্ধে বার্সার প্রায় প্রতিটি আক্রমণের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। ৪০ মিনিটে তাঁর গোল করার চেষ্টা প্রতিহত হলে বল পেয়ে যান আঁতোয়ান গ্রিজমান। বল জালে পাঠিয়ে দলকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন বার্সার এই ফরাসি তারকা। সমতায় ফিরতে মাত্র ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময় নিয়েছে বিলবাও। ইনাকি উইলিয়ামসের দুর্দান্ত পাস থেকে বিলবাওয়ের সমতাসূচক গোলটি করেন ডি মার্কোস।

বিরতির পর রাউল গার্সিয়ার হেডে করা গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। এ অর্ধে বার্সাকে বেশ চাপে রেখেছিল মার্সেলিনো গার্সিয়ার দল। তবে নির্ধারিত সময় থেকে ১৪ মিনিট আগে খেলার ধারার বিপরীতে গোল করে বার্সাকে শিরোপার সুবাস পাইয়ে দেন গ্রিজমান। কিন্তু নাটকের তখনো বাকি ছিল। ৯০ মিনিটে ভিয়াব্রের কল্যাণে আবারও সমতাসূচক গোল পেয়ে যায় বিলবাও। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যোগ করা সময়ের ৩ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত বাঁকানো শটে বিলবাওকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন উইলিয়ামস। এরপর তো মেসির লাল কার্ড দেখার মধ্য দিয়ে রাতটা পুরোপুরি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় বার্সার জন্য।

বিলবাওয়ের কাছে ৩–২ গোলে হেরে সুপারকোপা হারাল বার্সেলোনা।
ছবি: রয়টার্স

সেমিতে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসা বিলবাওয়ের গত ছয় বছরের মধ্যে এটাই প্রথম শিরোপা। ২০১৫ সালে এই বার্সাকে হারিয়েই সুপার কোপার শিরোপা জিতেছিল বাস্ক প্রদেশের ক্লাবটি। অন্যদিকে, কোচ রোনাল্ড কোমানের অধীনে প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমে খালি হাতে ফিরতে হলো বার্সাকে। তবে লা লিগায় ১৩ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে এমন হার নিশ্চিতভাবেই কষ্ট দেবে বার্সা সমর্থকদের।

লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়া মেসির প্রতি সমব্যথী বার্সা কোচ কোমান, ‘মেসি যা করেছে, তার মর্ম আমি বুঝি। তাকে যে কতবার ফাউল করা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বল ড্রিবল করা কাউকে বারবার ফাউল করা হলে এমন প্রতিক্রিয়াই স্বাভাবিক। তবে আমাকে এই দৃশ্যটা আবারও দেখতে হবে।’

তবে জোড়া গোল করা গ্রিজমান বার্সার হার মেনে নিতে পারছেন না, ‘ফাইনাল হারের পর যতটা খারাপ লাগা উচিত, ততটাই লাগছে। ভীষণ রাগ লাগছে। কারণ, সেট পিসে আমরা ভুল করেছি, ডিফেন্ডিং ভালো ছিল না। এমনকি সেট পিসে আমরা কথাও বলিনি, যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’