চুয়ামেনিকে দিয়ে ‘অভিশাপ’ ঘোচানোর আশা রিয়ালের

চুয়ামেনির হাতে ১৮ নম্বর জার্সিছবি : টুইটার

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এখনই বাস্তবায়ন করা শুরু করে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। কাসেমিরো, লুকা মদরিচ ও টনি ক্রুসের মাঝমাঠ দলটাকে গত এক দশকে আকাশছোঁয়া সাফল্য এনে দিলেও লস ব্লাঙ্কোসরা জানে, বেশি দিন এই তিনজন রিয়ালের মাঝমাঠ সামলাতে পারবেন না। চোখ রাখতে হবে ভবিষ্যতে।

যে কারণে কয়েক মৌসুম ধরেই মূল একাদশে প্রায়ই দেখা যায় ফেদেরিকো ভালভার্দেকে। একই কারণে গত বছর রেনেঁ থেকে রিয়াল দলে টেনেছে এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে। কামাভিঙ্গার পথ ধরে এবার আরেক ফরাসি মিডফিল্ডার গায়ে চাপিয়েছেন রিয়ালের দুধসাদা জার্সি। মোনাকো থেকে আট কোটি ইউরোতে দলে এসেছেন ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার অরেলিয়েন চুয়ামেনি। এসেই জানিয়ে দিয়েছেন, ১৮ নম্বর জার্সি পরে রিয়ালের হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি।

গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে চুয়ামেনিকে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে
ছবি : টুইটার

কেন ১৮ নম্বর জার্সি? এর পেছনের কারণটাও গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেছেন চুয়ামেনি। এটাও জানিয়েছেন, প্রথম পছন্দ ১৮ ছিল না। চেয়েছিলেন, ৮ নম্বর জার্সি নিতে, ‘যুব দলগুলোয় এর আগে ৮ নম্বর জার্সি পরে অনেক খেলেছি। জাতীয় দল আর ক্লাবের হয়েও ৮ নম্বর জার্সি পরেছি। কিন্তু এখানে টনি ক্রুস ৮ নম্বর জার্সি পরে।’

৮ নম্বর না পেয়ে পরে এমন এক নম্বর পছন্দ করেছেন, যে নম্বর ৮ রয়েছে, ‘আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কোন কোন নম্বরের মধ্যে পছন্দ করা যাবে? এরপর ১৮ নম্বর পেলাম, যার মধ্যে ৮ রয়েছে।’

জোনাথন উডগেট
ছবি : টুইটার

কিন্তু চুয়ামেনির এই ১৮ নম্বর পছন্দ করা দেখে রিয়াল–সমর্থকদের একটু হলেও কি বুক কেঁপে উঠেছে? অশুভ চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে কপালে? পড়লেও বিশেষ দোষ দেওয়া যায় না। রিয়ালের ১৮ নম্বর জার্সি গায়ে সফল হওয়ার উদাহরণ যে বলতে গেলে নেই-ই!

সর্বশেষ রিয়ালের হয়ে ১৮ নম্বর জার্সি পরেছিলেন গ্যারেথ বেল। বেল ১১ নম্বর পরেই খেলতেন, কিন্তু মাঝে এক মৌসুম ধারে টটেনহামে চলে যাওয়ার কারণে বেলের ১১ নম্বর জার্সিটা স্প্যানিশ উইঙ্গার মার্কো আসেনসিওকে দিয়ে দেয় রিয়াল। ধারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেল রিয়ালে ফিরলেও আসেনসিওর কাছ থেকে ১১ নম্বর জার্সিটা আর ফিরে পাননি, সন্তুষ্ট থেকেছিলেন ১৮ নম্বর জার্সিতে।

লুকা ইয়োভিচেরও সঙ্গী ছিল ১৮ নম্বর জার্সি
ছবি : টুইটার

১৮ নম্বর জার্সি গায়ে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে খেলার তেমন সুযোগই পাননি এই ওয়েলশ উইঙ্গার, চোখধাঁধানো কিছু করা তো দূরে থাক। রিয়ালের সঙ্গে আর দুই সপ্তাহ পরেই চুক্তি শেষ হচ্ছে তাঁর, এর মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, রিয়ালের হয়ে আর চুক্তি নবায়ন করছেন না। ফলে, ১৮ নম্বর জার্সি পাচ্ছে নতুন মালিক। সে সুবিধাই নিয়েছেন চুয়ামেনি।

শুধু বেল বলেই নয়; রিয়ালে ১৮ নম্বর জার্সির ‘অভিশাপ’টাই এমন। যিনিই এ জার্সি পরেন, সফল হতে পারেন না। ২০০৪ সালে নিউক্যাসল ইউনাইটেড থেকে ইংলিশ সেন্টারব্যাক জোনাথন উডগেটকে দলে টেনে সবার চোখ কপালে তুলেছিল রিয়াল। রিয়ালের মতো বড় ক্লাবে খেলার যোগ্যতা নেই উডগেটের, এমনটা মনে করা হলেও তৎকালীন কোচ হোসে আন্তোনিও কামাচো আস্থা রেখেছিলেন এই সেন্টারব্যাকের ওপর। উডগেট কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। সে উডগেটের হাতেও ১৮ নম্বর জার্সি তুলে দিয়েছিল রিয়াল।

জুলিয়েন ফবার্ট - মনে পড়ে কি এই রাইটব্যাককে?
ছবি : টুইটার

উডগেটের মতো একই ভাগ্য বরণ করেছিলেন ফরাসি রাইটব্যাক হুলিয়েন ফবার্ট। ওয়েস্ট হ্যাম থেকে ধারে আসা এই রাইটব্যাক এমন কিছু করে দেখাতে পারেননি, যেটা দেখে রিয়াল তাঁর ধার চুক্তিটা পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে বদলে ফেলে। ফবার্টো পরতেন ওই ১৮ নম্বর জার্সি। ছয় বছর বার্সেলোনায় খেলার পর চুক্তি শেষে ফ্রি দলবদলে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হাভিয়ের সাভিওলা। তাঁকেও ১৮ নম্বর জার্সির ভার দিয়েছিল রিয়াল। ১৭ লিগ ম্যাচে ৪ গোল করেই থেমে যায় সাভিওলার রিয়াল-ক্যারিয়ার।

রিয়ালের ১৮ নম্বর জার্সি গায়ে সবচেয়ে বড় ‘ফ্লপ’ খুব সম্ভবত আন্তোনিও কাসানো ও লুকা ইয়োভিচ। ইতালির নতুন ত্রাতা মানা হতো কাসানোকে। কিন্তু চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রতিভাবান এই ফরোয়ার্ডকে ধরে রাখতে পারেনি এএস রোমা। মাত্র ৫০ লাখ ইউরোতে রিয়ালে নাম লেখান এই ইতালিয়ান। দেওয়া হয় ১৮ নম্বর জার্সি।

শেষ মৌসুমে রিয়ালের ১৮ নম্বর জার্সি পরেছেন বেল
ছবি : টুইটার

রিয়ালে পাঁচ মৌসুম থাকলেও দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিজেকে কখনো প্রমাণ করতে পারেননি। কিটক্যাট চকলেটের লোভ সামলাতে না পারা কাসানোর জীবনযাত্রার ধরন, আচার-ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন ছিল অনেক। শেষমেশ ২০০৮ সালে নিজের দেশের ক্লাব সাম্পদোরিয়াতে চলে যান কাসানো।

সে তুলনায় দুই স্ট্রাইকার লুকা জোভিচ আর মারিয়ানো দিয়াজের উদাহরণ দুটি সাম্প্রতিক। আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ছয় কোটি ইউরোর বিনিময়ে রিয়ালে নাম লেখানো জোভিচ কখনোই কোচ জিনেদিন জিদানের আস্থার পাত্র হতে পারেননি। মারিয়ানো দিয়াজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

চুয়ামেনি কি এই ধারায় ব্যতিক্রম আনতে পারবেন? রিয়াল–সমর্থকদের সেটাই আশা।