চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেই পিএসজিকে সিলভার তির

পিএসজিতে গুরুত্ব হারানো দুজন কাল জিতলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ।ছবি: এএফপি

ইউরোপ জয় করতে হবে—এ স্বপ্ন নিয়েই পিএসজির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট। সে স্বপ্নযাত্রায় ২০১২ সালে সারা ফেলে দিয়েছিল পিএসজি। একসঙ্গে দলে টেনেছিল ইব্রাহিমোভিচ, লুকাস মৌরা, মার্কো ভেরাত্তি, এজেকিয়েল লাভেজ্জি ও ডেভিড বেকহামকে। এ তারকাপুঞ্জের সঙ্গে রক্ষণের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ডেকে আনা হয়েছিল থিয়াগো সিলভাকে।

তাঁদের মধ্যে পিএসজিতে এখনো টিকে রয়েছেন মার্কো ভেরাত্তি। গত মৌসুম পর্যন্ত ভেরাত্তির সঙ্গে টিকেছিলেন থিয়াগো সিলভাও। কিন্তু গত মৌসুম শেষ হওয়ার আগে পিএসজি সিলভাকে জানিয়ে দেয়, তাঁকে আর দরকার নেই তাদের। ইউরোপ জয়ের জন্য নতুন করে স্কোয়াড পুনর্গঠনের পথে ৩৫ বছর বয়সী সিলভাকে অপ্রয়োজনীয় ঠেকেছে পিএসজির।

গতকাল শনিবার পিএসজিকে একপ্রকার যেন একটা জবাবই দিয়েছেন সিলভা। চেলসির হয়ে কাল ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে নিয়েছেন। আট মৌসুম পিএসজিতে থেকে যা কখনো পাননি, সেই স্বাদ পেয়েই ক্ষোভ ঝেড়েছেন পুরোনো ক্লাবের প্রতি। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের পর বলেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগের ব্যর্থতার জন্য বারবার তাঁকেই বলির পাঁঠা বানিয়েছে প্যারিসের ক্লাবটি।

চোটের কারণে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল সিলভাকে।
ছবি: রয়টার্স

গত মৌসুমে করোনার কারণে ফ্রেঞ্চ লিগ শেষ করা যায়নি। চ্যাম্পিয়নস লিগ হবে কি না, এ নিয়েও কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। তখনই পিএসজির ক্রীড়া পরিচালক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, দল থেকে বয়স্ক খেলোয়াড় বাদ দেওয়ার সময় হয়েছে। তাই স্ট্রাইকার এদিনসন কাভানি ও ডিফেন্ডার সিলভার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো চেষ্টা করেনি তারা। বরং দুজনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, জুন পার হয়ে গেলে চুক্তি শেষ হয়ে গেলেও দুজন যেন চ্যাম্পিয়নস লিগের বাকি ম্যাচগুলো খেলতে রাজি হন।

কাভানি রাজি হননি, তবে সিলভা দলের প্রতি নিবেদন দেখিয়ে এমন প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন। সিলভার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তোলে পিএসজিকে। তখন টনক নড়ে ক্লাবের। তাঁকে আবার নতুন করে চুক্তি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অপমানিত সিলভা সে প্রস্তাবে রাজি না হয়ে চেলসির সঙ্গে চুক্তি করে চলে যান প্রিমিয়ার লিগে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ  জিততে না পারার আক্ষেপ নিয়েই পিএসজি ক্যারিয়ার শেষ করেছেন সিলভা।
এএফপি ফাইল ছবি

সিদ্ধান্তটা কতটা সঠিক ছিল, কাল সেটা প্রমাণিত হয়েছে। মৌসুমের মাঝপথে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পিএসজিকে প্রথমবার ফাইনালে নেওয়া কোচ টমাস টুখেলও। পিএসজিতে ব্রাত্য হয়ে পড়া এ দুজন দল ছাড়তে বাধ্য হওয়ার এক বছরের মধ্যে কাল জিতে নিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। গতকাল ম্যাচের প্রথমার্ধেই চোটের কারণে মাঠ ছেড়েছেন চোখে জল নিয়ে। ৯০ মিনিট শেষে আবার কাঁদলেন। টুখেলকে জড়িয়ে ধরে তাঁর সে কান্না অবশ্য আনন্দের।

গত মৌসুমে একটুর জন্য অধরা ট্রফিটা ছুঁতে পারেননি। সে সঙ্গে যে ক্লাবকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা সময়টা দিয়েছেন, সে ক্লাবই তাঁকে ওভাবে চুক্তি নবায়ন নিয়ে অপমানিত করেছে। ম্যাচ শেষে আরএমসি স্পোর্টকে সিলভা তাই বলেছেন, ‘এটা অসাধারণ। আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটা কখনো ভুলব না। আমি খুবই খুশি। এই কাপ জেতা অনেক বড় ব্যাপার। আমার চোট? অনেক কিছুই মাথায় এসেছিল। এত আগে ম্যাচ থেকে বেরিয়ে যাওয়া আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু এ পর্যায়ে আপনি ৭০ শতাংশ (ফিট) থাকতে পারেন না। তবে আমি খুশি যে দল মাথা ঠান্ঠা রেখেছে এবং খুব ভালোভাবে রক্ষণ করেছে। আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, কিন্তু ভালো করেছি। শেষ পর্যন্ত যা করেছি, তার পুরস্কার পেয়েছি।’

কাল সেই টুখেলকে জড়িয়ে ধরেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার আনন্দ করলেন সিলভা।
ছবি: টুইটার

এরপরই পিএসজির ওপর জমে থাকা ক্ষোভ ঝেড়ে দিয়েছেন, ‘এটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। কারণ, পিএসজিতে এটা (চ্যাম্পিয়নস লিগ) জেতার জন্য অনেক চাপে ছিলাম। যখনই পিএসজি বাদ পড়ত, মানুষ বলির পাঁঠা খুঁজত এবং সব সময় আমাকেই বেছে নেওয়া হতো। এটা খুব খারাপ।’

৩৬ বছর হয়ে গেছে সিলভার। কিন্তু এমন একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে রক্ষণে রাখা কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা টের পেয়েছে চেলসি। তাই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পরই কাজ শেষ বলে ভেবে নেয়নি ক্লাবটি। এরই মধ্যে সিলভার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।

বিজয়ীদের উদার হতে হয়। তাই তো ক্ষোভ উগরে দিলেও সাবেক ক্লাবের প্রতি শুভকামনা জানাতে ভোলেননি। চেলসিতে এসে নিজের অপূর্ণতা ভুলেছেন। এখন চাইছেন সাবেক সতীর্থরাও সেটা পাক, ‘আশা করি প্যারিস ভবিষ্যতে এটা জিতবে। কারণ, ওখানে অনেক বন্ধু রেখে এসেছি এবং আমি সব সময় লাল ও নীল থাকব (পিএসজির রং)।’