চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বেই ‘ঘরে ফিরছেন’ তাঁরা

আর্থুর-পিয়ানিচ ; জার্সির হয়েছে অদল-বদল।
ছবি : এএফপি

চ্যাম্পিয়নস লিগে বহুদিন পর দেখা হচ্ছে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া পর যা দেখার আশা মানুষ ছেড়েই দিয়েছিলেন, সেটাই ঘটতে যাচ্ছে আবার। আবারও ন্যু ক্যাম্পে খেলতে নামবেন রোনালদো। গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্রর পর এমন অনেক প্রত্যাবর্তনের গল্প খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তবে রোনালদো ফিরছেন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের মাঠে। কিন্তু এঁদের গল্পগুলো সাবেক ক্লাবে ফেরার।

২০১৪ বিশ্বকাপের পর রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে প্রায় ছয় কোটি পাউন্ডের বিনিময়ে আনহেল দি মারিয়া। যোগ দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ক্লাবের বিখ্যাত সাত নম্বর জার্সিটা দি মারিয়াকে দিয়ে ইউনাইটেড সমর্থকেরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। আশার গুড়ে বালি দিয়ে এক বছর পরেই পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন এই তারকা। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে বছর দুয়েক আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম লেগে দলকে জেতানোর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ইউনাইটেড সমর্থকদের সামনে উদ্দাম উদ্‌যাপন করে রেড ডেভিলদের চোখের শূল হয়েছিলেন আবারও। পরের লেগে দি মারিয়ার পিএসজিকে হারিয়ে ইউনাইটেডই উঠেছিল কোয়ার্টারে।

দি মারিয়াকে নিয়ে পিএসজি এবারও আসছে ইউনাইটেডের বিপক্ষে লড়তে। তবে এবার লড়াইটা হবে গ্রুপপর্বে। সেই হারের দগদগে ঘা এখনও  শুকায়নি হয়তো এই আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের। তবে দি মারিয়া এবার একা নন, আসছেন আরেক সাবেক ইউনাইটেড তারকা আন্দের এরেরাকে নিয়ে। এরেরার সঙ্গে ইউনাইটেডের সম্পর্ক আবার দি মারিয়ার মতো দা-কুমড়ো নয়। দুজন ইউনাইটেডে এসেছিলেন একই মৌসুমে, দি মারিয়া যেখানে এক মৌসুম শেষেই পাড়ি জমিয়েছিলেন ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের দুর্গে, এরেরা থেকেছেন আরও চার মৌসুম। নিজের অধ্যবসায় দিয়ে জয় করেছিলেন ইউনাইটেড সমর্থকদের মন।

দি মারিয়া-এরেরা যাচ্ছেন সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে খেলতে।
ছবি : টুইটার

এরেরার সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাবেন ব্রাজিলের রাইটব্যাক রাফায়েল দা সিলভা। ইউনাইটেডে যত দিন খেলেছেন, সমর্থকদের নয়নের মনি হয়েই ছিলেন। পরে ক্লাব ছেড়ে যোগ দেন লিওঁতে, সেখান থেকে এখন তুর্কি ক্লাব ইস্তানবুল বাশেকশেহিরে। ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে নেমে তাঁর মন কেমন না করে যায়-ই না!

আশরাফ হাকিমি, চিরো ইম্মোবিলে, বেঞ্জামিন মেন্দি, ক্রিস্তোফার এনকুনকু কিংবা জোসে সা'র কাহিনিটা অবশ্য দি মারিয়ার মতো ‘প্রতিশোধ’  নয়। তাই বলে এরেরার মতো সাবেক ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা চেপে রেখে যে খেলতে নামবেন তা-ও নয়। এই চারজনের কাছে বরং এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বটা সাবেক ক্লাবের কাছে নিজেকে সরাসরি প্রমাণ করার উপলক্ষ। আশরাফ হাকিমির কথাই ধরুন। বেচারার কপাল খারাপ, জন্মেছিলেন দানি কারভাহালের সময়ে। দু'বছর ধারে ডর্টমুন্ডে দুর্দান্ত খেলার পরেও কোচ জিনেদিন জিদানের আস্থা পুরোপুরি অর্জন করতে পারেননি, কারভাহালকে হটিয়ে হতে পারেননি ক্লাবের মূল রাইটব্যাক। এ মৌসুমে পাকাপাকিভাবে যোগ দিয়েছেন ইন্টার মিলানে। আর এবার গ্রুপপর্বেই দেখা হয়ে যাচ্ছে হাকিমির সাবেক ও বর্তমান ক্লাবের। লিগে এবার প্রথম দুই ম্যাচে এক গোল ও দুই অ্যাসিস্ট করা হাকিমি মুখিয়ে থাকবেন রিয়ালকে এটা বুঝানোর জন্য, যে, ‘দেখ, কাকে ছেড়ে দিয়েছ তোমরা!’

ইন্টারে গিয়েও হাকিমি আছেন দুর্দান্ত ফর্মে।
ছবি : রয়টার্স

ইতালির ক্লাব তুরিনোতে আলো ছড়ানোর পর তৎকালীন ডর্টমুন্ড কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ বড় আশা করে দলে এনেছিলেন ইতালির স্ট্রাইকার চিরো ইম্মোবিলে কে। লাভ হয়নি। নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন বারবার। সেভিয়া ঘুরে আবারও নিজের দেশে ফিরে সন্ধান পেয়েছেন হারানো ফর্মের। লাৎসিও-ডর্টমুন্ড ম্যাচে আলাদা নজর থাকবে তাই ইম্মোবিলে'র ওপর।

নেইমার, এমবাপ্পে, দি মারিয়া, কাভানিদের প্রতাপে বেশ ক'জন প্রতিভাবান ফরাসি তরুণ ক্লাব ছেড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য-ক্রিস্তোফার এনকুনকু। এখন খেলেন লাইপজিগে, গত আসরে খেলেছিলেন সেমিফাইনালেও। এবার গ্রুপপর্বে সাবেক ক্লাব পিএসজিকে পেয়ে তাঁর মনের ভাবও হাকিমির মতোই হওয়ার কথা!

একই অবস্থা ম্যানচেস্টার সিটির লেফটব্যাক বেঞ্জামিন মেন্দি ও অলিম্পিয়াকোসের গোলরক্ষক জোসে সা’র ও। মার্শেইতে দাম না পেয়ে মোনাকোতে পাড়ি জমিয়েছিলেন মেন্দি, সেখানে এতই ভালো খেললেন, চোখে পড়ে গেলেন পেপ গার্দিওলার। বাকি কথা সবার জানা। দাম না দেওয়ার মাশুল দিতে পারে এবার মার্শেই। যেমনটা দিতে পারে সা-এর সাবেক ক্লাব এফসি পোর্তো।

আর্থুর-পিয়ানিচের দুটি উদাহরণ একদমই সাম্প্রতিককালের। উয়েফার আর্থিক নিয়মের জালে আটকে থাকা বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস ক্লাবের বাৎসরিক হিসাব-নিকাশের খাতায় যাতে লাভ দেখাতে পারে, সে উদ্দেশ্যে অদলবদল করেছিল এই দুই মিডফিল্ডারের। জুভেন্টাস থেকে পিয়ানিচ গেছেন বার্সায়, বার্সা ছেড়ে তুরিনে পাড়ি জমিয়েছেন আর্থুর। গ্রুপপর্বে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে দেখা হয়ে যাচ্ছে দুজনেরই। তাই এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বের জুভেন্টাস-বার্সেলোনার দুই ম্যাচ শুধু মেসি-রোনালদোর আরেক মহারণই নয়, বরং পরিচিত হতে পারে আর্থুর-পিয়ানিচের লড়াই হিসেবেও। জুভেন্টাসের বিপক্ষে লড়তে আর্থুরের সঙ্গে আসছেন আরেক সাবেক জুভ তারকা গোলরক্ষক নেতো-ও।

সম্প্রতি দলবদল হয়েছে আরেকটা। ফরাসি ক্লাব রেনেঁ থেকে চেলসিতে নাম লিখিয়েছেন সেনেগালের গোলরক্ষক এদোয়ার্দ মেন্দি। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে ‘ঘরে’ ফিরছেন তিনিও। সাবেক ক্লাব সেভিয়ার বিপক্ষে রেনেঁর হয়ে খেলতে আসছেন বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি মিডফিল্ডার স্তিভেন এনজনজি।

ফরাসি লেফটব্যাক লুকাস হার্নান্দেজকে আতলেতিকো থেকে আনার জন্য গত বছর আট কোটি ইউরো খরচ করেছিল বায়ার্ন। চোট সমস্যার কারণে হার্নান্দেজ এখনও নিজের পুরোটা দিতে পারেননি। এই মৌসুম যদি হার্নান্দেজের আলো ছড়ানোর মৌসুম হয়, তবে তাতে সবার আগে পুড়ে খাক হতে পারে গ্রুপপর্বে বায়ার্নের প্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো।

পিরলো এখন কোচ।
ছবি : রয়টার্স

সাবেক ক্লাবে খেলোয়াড়দের ফিরে আসার এই আয়োজনে আন্দ্রেয়া পিরলো-মিরসেয়া লুসেস্কু'র ‘মিলন’টা একটু ব্যতিক্রম। ৭৫ বছর বয়সী এই লুসেস্কুর অধীনেই দুই যুগ আগে অভিষিক্ত হয়েছিলেন পিরলো। দুই যুগ পর সেই পিরলোই এখন লুসেস্কুর মতো ম্যানেজারের ভূমিকায়। মাঠে লড়বে তাঁদের দল জুভেন্টাস ও ডায়নামো কিয়েভ।