ছেড়ে দাও আমায় — জুভেন্টাসকে রোনালদো
একই দলবদলের মৌসুমে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ক্লাব বদলাবেন, কে ভেবেছিলেন! বছরখানেক আগেও কেউ এই কথা বললে হয়তো ব্যাপারটা হেসেই উড়িয়ে দিতেন ৯৯ শতাংশ লোক। কিন্তু এটাই বাস্তব এখন।
লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজি পাড়ি জমিয়েছেন, ওদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও জুভেন্টাস ছাড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেছেন। জানা গেছে, রোনালদো এর মধ্যেই জুভেন্টাসকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। জুভেন্টাসের হয়ে খেলার আর ইচ্ছা নেই তাঁর। খবরটা জানিয়েছেন দলবদলবিষয়ক নির্ভরযোগ্য ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো।
এত খ্যাতি, এত জৌলুশ, এত সম্মান, এত অর্থকড়ি—রোনালদোর সব পাওয়া শুরু হয়েছিল সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলার সময়টায়। ইউনাইটেডের সমর্থকেরা তাঁকে নিজেদের ঘরের ছেলে হিসেবেই মানতেন। এমনকি দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার পরও ওল্ড ট্রাফোর্ডে কান পাতলেই শোনা যেত, অনেক ইউনাইটেড সমর্থক রোনালদোর ফেরার আশায় দিন গুনছেন। দলবদলের বাস্তবতায় সেই রোনালদো হয়তো ম্যানচেস্টারে ফিরবেনও, তবে ইউনাইটেডের হয়ে নয়, তাঁদেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সিটির হয়ে!
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। ইংলিশ দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্টের প্রধান ফুটবল প্রতিবেদক মিগেল ডেলানি তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছেন, সিটির সঙ্গে রোনালদোর দুই বছরের চুক্তি হয়ে গেছে। মাদ্রিদভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক ‘এএস’কে উদ্ধৃত করে একই খবর দিয়েছে ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন।
সিটিতে যাওয়ার জন্য নিজের বেতনও কমাতে রাজি হয়েছেন রোনালদো। জুভেন্টাসে মৌসুমপ্রতি ৩ কোটি ১০ লাখ ইউরো কামানো রোনালদো সিটিতে যাওয়ার জন্য এর চেয়েও কম নিতে রাজি বলে জানিয়েছেন রোমানো।
রোমানো আরও জানিয়েছেন, এরই মধ্যে জুভেন্টাস সতীর্থদের কাছে বিদায় নিয়ে নিয়েছেন রোনালদো। জানিয়েছেন, জুভেন্টাস ছাড়ছেন তিনি। এমনকি এম্পোলির বিপক্ষে আগামী ম্যাচেও দেখা যাবে না রোনালদোকে। ওদিকে রোনালদোকে সিটিতে পাঠানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর মুখপাত্র হোর্হে মেন্দেজ। দফায় দফায় সভায় বসছেন সিটির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে। যদিও সিটি এখনো রোনালদোর জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব পাঠায়নি। তারা চাইছে, রোনালদো যেন জুভেন্টাসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ফ্রিতে সিটিতে চলে আসেন, দলবদল ফি বাবদ কিছুই দিতে চাইছে না সিটি।
কিন্তু জুভেন্টাসই–বা সেটা হতে দেবে কেন? সিটিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রোনালদোকে বিক্রি করতে আপত্তি নেই তাদের, তবে সেটার জন্য অন্তত আড়াই কোটি ইউরো গুনতে হবে সিটিকে। জুভেন্টাস যে খামাখা টাকাটা চাইছে, তা কিন্তু নয়।
২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ১০ কোটি ইউরোর বিনিময়ে জুভেন্টাস যখন রোনালদোকে দলে এনেছিল, দলবদল ফি বাবদ সব টাকাপয়সা একেবারে রিয়ালকে না দিয়ে রোনালদোর চুক্তির চার বছরজুড়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা করেছিল জুভেন্টাস। যে পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছিল রিয়াল। সে হিসাবে এবার আড়াই কোটি রিয়ালকে দেওয়ার কথা জুভেন্টাসের। যে রোনালদোই ক্লাবে থাকছেন না, সে খেলোয়াড়ের জন্য আরেক ক্লাবকে টাকা দিতে যাবেই–বা কেন জুভেন্টাস? সিটির কাছে ওই টাকাই আদায় করতে চাইছে জুভেন্টাস।
ওদিকে রোনালদো এলে ইংলিশ উইঙ্গার রাহিম স্টার্লিংকে বিক্রি করে দেবে সিটি, এমনটাই খবর। যদিও স্টার্লিংয়ের জন্য এখনো কেউ সিটির কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায়নি।