জাদুর ছোঁয়ার পর সম্রাটের দেখাও পেল মেয়েটি

ভক্তের সঙ্গে দেখা করলেন টট্টি।ছবি: রয়টার্স

পৃথিবীতে এখন চলছে অনুপ্রেরণার জোয়ার। সর্বক্ষেত্রেই সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন অনুপ্রেরণা, আর ‘ইনফ্লুয়েন্সার’রাও সে দাবি মেটাচ্ছেন বেশ আগ্রহভরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুপ্রেরণা দেওয়া হচ্ছে, লেখা হচ্ছে বই কিন্তু এত এত অনুপ্রেরণার ফল খুবই কমই মেলে।

ফ্রান্সেসকো টট্টি অনুপ্রেরণা দেওয়াকে পেশা হিসেবে নেননি। রোমের ‘শেষ সম্রাট’ এখনো ফুটবলকেই নেশা মানেন। কিন্তু তিনি যা করেছেন, সেটা খুব কম লোকের পক্ষেই সম্ভব। কোমায় থাকা এক ভক্তকে ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ‘হাল ছেড়ো না। আমরা জানি তুমি পারবে ফিরে আসতে।’ ব্যস, সত্যি সত্যি দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন সেই ভক্ত। শুধু জাগিয়েই সন্তুষ্ট হননি টট্টি। সে ভক্তের সঙ্গে কাল সোমবার দেখা করে এসেছেন ইতালিয়ান কিংবদন্তি।

১৯ বছর বয়সী ইলেনিয়া মাতিল্লি লাৎসিওর নারী দলে খেলতেন। লাৎসিওর হয়ে খেললেও মাতিল্লির প্রিয় দল কিন্তু রোমা। আর টট্টির তো মহাভক্ত এই ফুটবলার। কিন্তু ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুতেই ভয়ংকর এক ধাক্কা খায় ইলেনিয়ার স্বপ্ন। গত ডিসেম্বরে বন্ধুর সঙ্গে রাত দুটোয় বাসায় ফিরছিলেন গাড়িতে করে। ভয়ংকর এক দুর্ঘটনায় সঙ্গে থাকা বন্ধু মার্তিনা ওরো ঘটনাস্থলেই মারা যান। ইলেনিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় রোমের জেমেল্লি হাসপাতালে।

গত নয়টা মাস সেখানেই আছেন ইলেনিয়া। কোমায় চলে যাওয়া এই তরুণীকে বাঁচানোর জন্য তাঁরা ধরনা দেন প্রিয় ক্লাবের সবচেয়ে বড় কিংবদন্তির কাছে। ইলেনিয়ার বাবা-মার আকুল আবেদনে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন টট্টি। একটি ভিডিওবার্তা রেকর্ড করে পাঠান টট্টি। ভক্তকে শুভকামনা জানিয়ে বলেন, ‘হাল ছেড়ো না ইলেনিয়া। আমরা জানি তুমি পারবে, আবারও সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে আমাদের মাঝে। আমরা সবাই তোমার সঙ্গেই আছি।’

এর পর যা হলো, সেটা রূপকথার ক্ষেত্রেই শুধু বলা যায়। ভিডিওবার্তা শোনার পর জেগে উঠেছেন ইলেনিয়া মাতিল্লি। আনন্দিত বাবা-মা টট্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছিলেন, টট্টির সঙ্গে সরাসরি দেখতে পারবে ইলেনিয়া। খুব বেশি দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়নি তাঁদের। গতকালই ইলেনিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন টট্টি।

দেড় ঘণ্টা ইলেনিয়ার সঙ্গে কাটিয়েছেন টট্টি। ভক্তের সঙ্গে দেখা করার অভিজ্ঞতাটাও জানিয়েছেন উৎসুক সাংবাদিকদের, ‘আমাকে দেখে হেসেছে সে, আমাকে জড়িয়ে ধরেছে এবং কেঁদেছে কিছুক্ষণ। ইলেনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারাটা চমৎকার এক অভিজ্ঞতা ছিল। সে যখন হাসপাতাল থেকে বের হবে, তখন আবার দেখা করব।’

টট্টির সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ ছাড়েন কেউ? তাই ইলেনিয়ার মা-বাবার সঙ্গে চিকিৎসক দলও দাঁড়িয়ে পড়লেন ক্যামেরার সামনে।
ছবি: রয়টার্স

ইলেনিয়া এখনো কথা বলতে পারছে না। তবে আকারে ইঙ্গিতে ভাব প্রকাশ করতে পারছে। একটি ট্যাবলেটে লিখে আলোচনা চালাতে পারছে এখন। আনন্দিত বাবা স্তেফানো পুরো ঘটনা এখনো যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, ‘আমার মেয়ের এক বন্ধুকে ধন্যবাদ দিতে হবে কারণ সেই ফ্রান্সেসকো টট্টির সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা ভেবেছিল এবং তাঁর একটা বার্তা শোনানোর কথা ভেবেছিল। ফ্রান্সেসকো এতে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন। তিনি অনেক ভালো মনের মানুষ। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল যেন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি।’