জিদানকে সঠিক মানতে বাধ্য হচ্ছেন ব্রিটিশরা
ব্রিটিশ মিডিয়া পারলে জিনেদিন জিদানকে শূলে চড়ায়। দ্বিতীয় মেয়াদে জিদান রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বেলকে মাঠে কম দেখা গেছে। গত মৌসুমে তো করোনা বিরতির পর লিগে টানা সাত ম্যাচে বেঞ্চেই বসে ছিলেন।
একপর্যায়ে বেল নিজেই বলে বসেছিলেন তাঁকে স্কোয়াড থেকে বাদ দিতে। রিয়ালে রীতিমতো ব্রাত্য হয়ে পড়া বেল এবার মুক্তি খুঁজে নিয়েছেন। যে ক্লাব তাঁকে এ শীর্ষ পর্যায়ে এনেছে, বিশ্বসেরাদের কাতারে তুলেছে, সেই টটেনহামে ফিরেছেন।
যুক্তরাজ্যের ফুটবল সমর্থক ও সাংবাদিকেরা জিদানের ওপর খেপে ছিলেন। গত এক দশকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় তারকা তো বেলই। চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন, যার দুটিতে জয়সূচক গোল তাঁর।
এমন এক বিশ্বমানের ফুটবলারের সঙ্গে জিদান অন্যায় করছেন বলেই তাদের ধারণা। ব্যক্তিত্বের লড়াইয়ের কারণেই বেলকে ব্যবহার করছেন না জিদান, এমনটাই ভাবতেন তারা।
বেল ইংল্যান্ডে ফিরেছেন ছয় মাস হয়নি এখনো। এরই মাঝে ভুল বুঝতে শুরু করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো। তারাও টের পাচ্ছে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেই বেল বা ২০১৮ সালের বেলের সঙ্গে বর্তমানের বেলের অনেক পার্থক্য।
অবশেষে অনেকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন, জিদানের বেলকে ওভাবে দল থেকে বাদ দেওয়াটা খুব একটা ভুল ছিল না।
সাইমন জর্ডান একসময় ক্রিস্টাল প্যালেসের মালিক ছিলেন। এখন ফুটবলে ধারাভাষ্য ও খেলা বিশ্লেষণ করেই সময় কাটান এই ব্যবসায়ী। ব্রাইটনের বিপক্ষে টটেনহামের ১-০ গোলে হারের ম্যাচের পর বেলকে রীতিমতো ধুয়ে ফেলেছেন এই বিশ্লেষক।
সমর্থকদের মনে বহু আশা জাগিয়ে ফেরা বেল সেদিনও ক্লাবকে হতাশ করেছেন। প্রথম একাদশে নেমেছিলেন, কিন্তু এমন খেলাই খেলেছেন যে দলে স্ট্রাইকারের অভাব থাকা সত্ত্বেও তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নিয়েছেন কোচ জোসে মরিনিও। ম্যাচে একটাও শট নেননি বেল।
বয়স ৩১ পেরোনোর পরও নিজেদের সেরা ফর্মে দেখা গেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসিকে। কিন্তু ৩০ পেরোনোর আগ থেকে ধুঁকছেন বেল। জর্ডানের দাবি, বয়স মাত্র ৩১ বছর হলেও শীর্ষ পর্যায়ে সময় শেষ হয়ে এসেছে বেলের।
এই ফরোয়ার্ডের কাছে আর ভালো কিছু দেখার আশা করছেন না তিনি, ‘গ্রীষ্মের শুরুতে যখন এই দলবদলের ঘোষণা এল এবং গ্যারেথ বেলকে নিয়ে এত উত্তেজনা ও আলোচনা শুরু হলো; আমি অত জ্ঞানী কেউ না হলেও এতে গা ভাসাইনি। কারণ, আমার ধারণা বেলকে প্রতিভার অপচয় বলে মনে হয়েছে। আমার ধারণা, এ অবস্থায় আসার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। হয়তো চোট বা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই হোক, সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার ক্ষমতা অনেকটাই শেষ হয়ে এসেছে। এখন আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে।’
ব্রাইটন ম্যাচের আগেই বেলের কাছে নিজের চাওয়াটা জানিয়ে দিয়েছিলেন মরিনিও। নিয়মিত স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। এ অবস্থায় একসময়ের সেরাদের একজনকে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে বলেছিলেন মরিনিও। সেই চ্যালেঞ্জের প্রথম ম্যাচটায় ব্যর্থ হয়েছেন বেল।
জিদান কেন দিনের পর দিন বেলকে খেলাননি, সেটা বুঝতে শুরু করেছেন জর্ডান, ‘আমরা এত দিন বলতাম, “এই ছেলে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল জিতিয়েছে আর এখন তাকে মাঠেই নামায় না কীভাবে?” এখন আমরা দেখতে শুরু করেছি, কেন এমনটা হচ্ছিল। এটা খুবই দুঃখজনক। কারণ, আপনি যখন চোখ বন্ধ করেন এবং সেরা খেলোয়াড় বা অনেকের চোখে সেরা খেলোয়াড়দের কথা মনে করেন, তাদের সবাইকে সেরা ফর্মেই দেখতে চান। কিন্তু ফেরার পর গ্যারেথ বেলের মধ্যে অমন কিছু দেখতে পাইনি আমরা।’
স্পেনে যে কারণে বেলের সমালোচনা হতো, সেটা ধীরে ধীরে টের পাচ্ছে ইংলিশ ফুটবলের দর্শকেরাও। খেলায় নিজের সেই ধার হারিয়েছেন, উন্নতির কোনো ইচ্ছা টের পাওয়া যায়নি। খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টাও নেই। ম্যাচে প্রভাব রাখতে পারছেন না।
গত বছর রিয়াল মাদ্রিদ থেকে চীনের এক দলেও যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের কারণে সেটা হয়নি। সে সিদ্ধান্ত ভুল বলেই প্রমাণিত হয়েছে। নতুন মৌসুমেও বেলের চড়া বেতন দিতে রাজি হয়নি কেউ। এমন অবস্থায় বেতনের কিছু অংশ দিয়ে তাঁকে ধারে নিতে রাজি হয়েছে টটেনহাম।
টটেনহামে গিয়েও রিয়ালের ফর্ম ধরে রেখেছেন। শুরুতেই চোটে পড়েছেন। এক মাসের বেশি মাঠের বাইরে থাকার পর ফিরেছেন। তা–ও এখনো কোনো ম্যাচে মনভরানো পারফরম্যান্স দেখা যায়নি।
জর্ডানের ধারণা, বেল যেমন খেলছেন, তাতে তাঁকে এমন বেতন দিয়ে কোনো ক্লাবে রাখাটাই ভুল, ‘ক্যারিয়ারের চূড়ায় থেকে কে চীনে যেতে চায়? চীনে সে–ই যেতে চায় যার টাকার দরকার, সেখানে তো নিজেকে ভালো করার জন্য কেউ যায় না। এই খেলোয়াড় সপ্তাহে পাঁচ লাখ পাউন্ড না কত আয় করে, টটেনহাম তার অর্ধেক দিচ্ছে নাকি এক-তৃতীয়াংশ, যা–ই দিক না কেন, তারা তো অন্তত এক কোটি পাউন্ড খরচ করছে। বেতনের এক-তৃতীয়াংশ যদি দেয়, তাহলে ও রকমই তো দিচ্ছে। একজন ফুটবলারকে ওরা এক কোটি পাউন্ড দিচ্ছে। সে বিশ্বের জন্য কোনো টিকা আবিষ্কার করেনি। সে একজন ফুটবলার। তার দায়িত্ব এখানে আসা এবং খেলার জন্য নিজেকে ফিট রাখা।’