জিদানের চাকরি নিয়ে টানাটানি

ছাঁটাই হওয়ার চিন্তা মাথায় ঘুরছে জিদানের?ছবি : রয়টার্স

এই জিদানের অধীনেই রিয়াল গড়েছে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের রেকর্ড। সেই জিদানের অধীনে এই রিয়াল আজ এত অচেনা!

চ্যাম্পিয়নস লিগে এলেই রিয়াল যেন অন্য এক দল হয়ে যায়। ঐতিহ্যগতভাবেই। প্রতিযোগিতায় ১৩টি শিরোপা তো এমনি এমনি আসেনি! তার ওপর বহুদিন ঘুমিয়ে থাকার পর গত দশকেই চার-চারটা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা এসেছে রিয়ালের ঘরে, যার মধ্যে তিনটি টানা। চ্যাম্পিয়নস লিগে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার নজির এই রিয়াল মাদ্রিদেরই, আর সেটার পেছনের কারিগর এই জিনেদিন জিদান। সেই জিদানের মাথায় আজ চাকরিচ্যুত হওয়ার দুশ্চিন্তা!

স্প্যানিশ ক্রীড়াদৈনিক এল মুন্দো জানাচ্ছে, রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের ভাবনায় খেলছে জিদানকে ছাঁটাই করার কথা। আগামী বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জিদানই ডাগআউটে থাকবেন কি না, এ নিয়েও নাকি তর্ক চলছে রিয়ালের বোর্ডরুমে।

ত্বরিত সাফল্য লাভের আশায় রিয়াল কখনো হারতে থাকা ম্যানেজারকে ছাঁটাই করতে পিছপা হয়নি। রিয়ালের হয়ে সে ম্যানেজারের অতীত রেকর্ড যতই দুর্দান্ত হোক না কেন। বর্তমানে দল খাবি খাচ্ছে? ব্যস, কোচকে ছাঁটাই করো। আজ জিদানের অধীনে রিয়াল খাবি খাচ্ছে। যে জিদানের অধীনে রিয়ালের এত এত সাফল্য, সে জিদানই আজ রিয়ালকে ক্রমাগত ম্যাচ জয়ের ফর্মুলাটা বাতলে দিতে পারছেন না।

গতকাল রাতেও চ্যাম্পিয়নস লিগে শাখতার দোনেৎস্কের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই নিয়ে চার দিনে দুই ম্যাচ হারল রিয়াল। এই হারের ফলে রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে আদৌ উঠতে পারবে কি না, দেখা গেছে সংশয়। না উঠতে পারলে সেটাও একটা রেকর্ড হবে। এর আগে রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নিয়েছে, কিন্তু গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি—এমনটা কখনো হয়নি!

গত রাতে রিয়ালকে জেতার জন্য সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারেননি জিদান।
ছবি : রয়টার্স

ফলে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে জিদানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। জিদান কি থাকবেন? নাকি পেরেজ অতীতের সব সুখস্মৃতি এক নিমেষে ভুলে গিয়ে খড়্গহস্ত হবেন? আলোচনায় মুখর হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনেও উঠেছিল এই প্রশ্ন। জিদান যদিও বড় মুখ করে সাংবাদিকদের বলে গেছেন, তিনি অন্তত চাকরি ছাড়বেন না, ‘আমি ইস্তফা দিচ্ছি না। ইস্তফা দিয়ে লাভ নেই কোনো।’

হারলেও নিজেদের খেলায় তেমন কোনো খুঁত দেখছেন না জিদান। তিনি মনে করেন, শিষ্যরা গোল করার জন্য বেশ ভালোই সুযোগ তৈরি করছে, ‘আমরা প্রথমার্ধে বেশ ভালো ছিলাম, কিন্তু গোল হচ্ছিল না। বলটা যেন পোস্টের ভেতরে ঢুকতেই চাইছিল না। আমরা ঠিকঠাক প্রেস করছিলাম। আমার মনে হয় আমাদের জয়টা প্রাপ্য ছিল।’

কিন্তু আসলেই কি জয়টা জিদানের দলের প্রাপ্য ছিল? চোট ও করোনার কারণে দলের রক্ষণভাগ নিয়ে সমস্যা আছে, এ ব্যাপারে নতুন কিছু বলার নেই। রক্ষণভাগের সমস্যা হলে একটা দল গোল বেশি হজম করতে পারে, তাই বলে গোল করতে কেন পারবে না? করিম বেনজেমা না থাকলে রিয়াল মাদ্রিদ মাঝখান দিয়ে একেবারেই আক্রমণ রচনা করতে পারে না। ওদিকে মার্টিন ওডেগার্ড এই কয় দিনেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্রুস-মদরিচ থাকার পরেও মূল একাদশে মাঝমাঠ থেকে সৃষ্টিশীলতা দেখাতে হলে এই নরওয়েজিয়ান তারকার থাকাই লাগবে।

রক্ষণে রামোস আর আক্রমণে হ্যাজার্ড-ওডেগার্ডদের সবাইকে পেলে জিদান হয়তো আরও সুন্দর-কার্যকর ফুটবল খেলাতে পারতেন। গত মৌসুমে লিগ জেতার পথে যেটি করিয়েছেন রিয়ালকে দিয়ে। মৌসুমের প্রথম দিকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হ্যাজার্ড থাকার সময়ে যেমন চোখধাঁধানো ‘ওয়ান টাচ’ ফুটবল খেলেছিল রিয়াল। আবার শেষের দিকে, লকডাউন থেকে ফেরার পর রক্ষণ জমাট রেখে রিয়ালকে লিগ জিতিয়ে এনেছেন জিদান। কিন্তু চোটে রামোস-হ্যাজার্ডদের কেউ নেই, জিদান-ই বা আর কী করবেন!

গত রাতে একের পর এক ক্রসনির্ভর আক্রমণভিত্তিক ফুটবল খেলে গেছে রিয়াল। জিদানের অধীনে এটা একেবারে অনিয়মিতও নয়। কিন্তু আগে যখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছিলেন, তাঁর পাশে বেনজেমা থাকতেন; কিংবা রোনালদোকে বিশ্রাম দিলে আলভারো মোরাতার মতো হেডে দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন...তখন এই কৌশলেও অনেক জয় এসেছে।

কিন্তু এখন নিয়ত পরিবর্তনশীল ফুটবলে রিয়ালকে কতটুকু সাফল্য এনে দিতে পারে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তারওপর এখন তো রোনালদো-মোরাতাও নেই। আর বেনজেমা তো স্ট্রাইকার হলেও বক্সের নিচে এসে খেলা গড়তে ভালোবাসেন।

ক্রসভিত্তিক খেললে বক্সে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেন, বেনজেমার সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলতে পারেন, এমন স্ট্রাইকার জিদানের হাতে আছেন বটে—লুকা ইয়োভিচ। সার্বিয়ান স্ট্রাইকার কদিন আগে আন্তর্জাতিক বিরতিতে সার্বিয়ার জার্সিতে ফর্মে ফেরার আভাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু জিদানের দুর্ভাগ্য, আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে এসেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেলেন ইয়োভিচ।

কিন্তু দিন শেষে সাফল্য-ব্যর্থতাই তো একজন কোচের চাকরি টিকিয়ে রাখা না–রাখার মাপকাঠি। চোট আর করোনার চোটপাট যেমনই থাক, জিদানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই কথা উঠছেই!