জীবনের প্রতিটি ক্ষণে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ যাঁর

চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে খেলতে এসেছেন থ্যাংকগডছবি: সংগৃহীত

বার কয়েক টোকা দিতে খুললেন রুমের দরজা। চোখেমুখে ভীষণ রাগের ছাপ ফুটিয়ে বললেন, ‘আমি ঘুমাচ্ছিলাম। দুঃখিত, আধঘণ্টা পরে আসুন।’

সময় মেপে আবার যেতেই তাঁর রাগ-ক্ষোভ সব উধাও। বরং সেগুনবাগিচার বাসার আড্ডায় ক্ষণে ক্ষণে শোনা যাচ্ছিল ‘ধন্যবাদ’। শব্দটার সঙ্গে যে তাঁর দারুণ দোস্তি। তাঁর নামের একটা অংশই যে ‘থ্যাংক’ দিয়ে শুরু, থ্যাংক গড। পুরো নাম পিটার এবিমবোয়ি থ্যাংক গড। এ নামের পেছনেও আছে ধন্যবাদ জানানোর গল্প।

নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বায়েলসায় রাম পিটার ও আয়েস্তা দম্পতির বসবাস। দুই মেয়ে নিয়ে সুখেই ছিলেন তাঁরা। তবে তৃতীয় সন্তানের আগমনী বার্তা পেলে মনেপ্রাণে প্রত্যাশা করতে থাকেন ছেলে সন্তানের। এক শুক্রবার আয়েস্তার ইচ্ছাপূরণ হয়। পরিবারের সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। ছেলে সন্তানের আগমনীতে পরিবারের সদস্যরা ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন সৃষ্টিকর্তাকে।

চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যাচে থ্যাংকগডের সৌজন্যে এমন দৃশ্য নিয়মিত দেখা যায়
ছবি: প্রথম আলো

আয়েস্তা সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা চিরস্থায়ী করে ফেললেন। একমাত্র ছেলের নামটাই রেখে দিলেন ‘থ্যাংক গড’। পারিবারিক এবিমবোয়ি তো পাকাপাকি ছিলই, বাবার নামের প্রথম অংশটাও পেলেন, পিটার।

চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে খেলতে এসে বসে পারিবারিক নাম নয়, থ্যাংক গড নামেই পরিচিতি পেয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। এ নিয়ে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করলেন তিনি, ‘বড় দুই বোনের পর আমার জন্ম হওয়ায় মা থ্যাংক গড নামটি রেখেছেন। আগে যেখানে খেলতে গিয়েছে, সেখানে সবাই পিটার এবি বলে ডাকতেন। এখানে সবাই পিটার থ্যাংক গড নামে ডাকে বলে ভালো লাগে।’

থ্যাংক গডকে পেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে পারে চট্টগ্রাম আবাহনীও। লিগে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে এক হ্যাটট্রিকসহ ৭ গোল করে গোলদাতার তালিকার শীর্ষে আছেন তিনি। তাঁর গোলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দলের পয়েন্ট। লিগে এখন পর্যন্ত অপরাজিত চট্টগ্রামের ক্লাবটি। তাদের ১২ গোলের অর্ধেকের বেশি এসেছে থ্যাংক গডের পা থেকে।

আগে যেখানে খেলতে গিয়েছে, সেখানে সবাই পিটার এবি বলে ডাকতেন। এখানে সবাই পিটার থ্যাংক গড নামে ডাকে বলে ভালো লাগে
চট্টগ্রাম আবাহনীর নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার পিটার এবিমবোয়ি থ্যাংকগড

সে গোলগুলোর জন্যও সৃষ্টিকর্তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান থ্যাংক গড, ‘স্ট্রাইকার হিসেবে গোল করাটাই আমার প্রধান কাজ। গোলের জন্য প্রথমে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, প্রতিটা গোলের পর আমি দুই হাতের দুই আঙুল আকাশের দিকে তুলে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।’

মা আনেস্তা অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছেন বেশ আগেই। মায়ের অর্থবহ নাম রাখার ধরনটা ধরে রেখেছেন থ্যাংক গড নিজের সন্তানদের নাম রেখেই। থ্যাংক গডের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের প্রত্যেকের নামই অর্থবহ।

৯ বছরের বড় মেয়ের নাম ‘ফ্যাবর’, সহযোগিতা করা। ৭ বছরের মেজ মেয়ের নাম আরও বেশি আকর্ষণীয়, ‘ফেইথফুল’; যার ওপর সবাই বিশ্বাস রাখতে পারেন। ৫ বছর বয়সী মেয়ের নাম রাখতে ইংরেজি শব্দের সহযোগিতা নেননি। তার নাম ‘পেরে এরে।’ ইংরেজিতে পেরে এরের অর্থ ‘রিচ ওমেন’। বাবা থ্যাংক গডের বিশ্বাস মেয়ে বড় হয়ে ধনী হবেন।

থ্যাঙ্কগডই চট্টগ্রাম আবাহনীর মূল ভরসা
ফাইল ছবি

শুধু দুই বছরের ছেলের নামটিই নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে রাখা হয়েছে পিটার জেমি। ছেলেমেয়েদের নামের ব্যাখ্যা দিলেন থ্যাংক গড, ‘আমার মা আমার নাম অর্থবহ করে করেছে। আমিও আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সন্তানদের নাম অর্থবহ করে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করি। এতে সেও সায় দেয়।’ বায়েলসাতে চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাস করছেন থ্যাংক গডের স্ত্রী জুনবেরে। পোশাকের ব্যবসা করেন স্ত্রী।

এবার আসা যাক ফুটবলের গল্পে। প্রথমবার বাংলাদেশে এসেই হতে চান সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ জন্য কার কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, সে ছোট তালিকাটা করে ফেলেছেন থ্যাংক গড, ‘এ মুহূর্তে আমি ছাড়া আর তিনজনের নাম বলতে পারি-আবাহনীর দরিয়েলতন গোমেজ, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের এমেকা ওগবুগ ও বসুন্ধরা কিংসের রবসন।’