জুভেন্টাসকে অসম্মান করেছেন রোনালদো

জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরেছেন রোনালদোছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড–ভক্তদের এখন সুখের সময়। জেডন সানচো, রাফায়েল ভারানদের নিয়ে এমনিতেই দারুণ দল গড়ে ফেলা ম্যান ইউনাইটেড সবচেয়ে বড় চমকটা উপহার দিয়েছে দলবদল মৌসুমের শেষ দিকে এসে—ঘরে ফিরিয়েছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে! ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ৩৬ বছর বয়সী পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড তাঁর পুরোনো ৭ নম্বর জার্সিই পরবেন ম্যান ইউনাইটেডে, সেটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে দুই দিন আগে।

কিন্তু ইতালিতে জুভেন্টাস–সমর্থকদের মন ভার। জুভেন্টাস ছেড়েই যে ম্যান ইউনাইটেডে ফিরেছেন রোনালদো! পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের মতো গোলের বানে ভাসানো স্ট্রাইকার তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না! তার ওপর দলবদল মৌসুমের শেষ দিকে এসে হঠাৎ নাটকীয়তায় রোনালদোর জুভেন্টাস ছেড়ে যাওয়া নিয়ে অনেক সমালোচনাও করছেন জুভের সমর্থকেরা।

শুধু সমর্থকেরাই নন, সাবেক খেলোয়াড়েরাও নেমেছেন রোনালদোর সমালোচনায়। সাবেক দুই তারকা সের্হিও ব্রিও ও আলেসিও তাক্কিনার্দি তো বলেই দিয়েছেন, রোনালদো এভাবে ক্লাব ছেড়ে জুভেন্টাসকে অসম্মান করেছেন! এটাও স্বীকার করেছেন, রোনালদোর মতো ‘গোলমেশিন’–এর বিকল্প পাওয়া দুষ্কর।

সের্হিও ব্রিও। আলেসিও তাক্কিনার্দি। আশি-নব্বইয়ের দশকের ফুটবলের খোঁজখবর রাখলে জুভেন্টাসের এই দুই সাবেক তারকাকে চিনবেন অনেকেই। শুধু তারকা কেন, কিংবদন্তিই তো বলা যায়। ব্রিও ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জুভেন্টাসে খেলেছেন। চারটি লিগ জেতার পাশাপাশি জুভেন্টাসের জার্সিতে উয়েফার সম্ভাব্য সব শিরোপাই অন্তত একবার করে জিতেছেন ইতালিয়ান সাবেক এই ডিফেন্ডার।

আর তাক্কিনার্দি? ১৯৯৪ সাল থেকে পরের ১২ বছরে ছয়বার লিগ ও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এই ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জুভেন্টাসের ইতিহাসে কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝাতে আরেকটি তথ্য দেওয়া যায়। ২০১৭ সালে জুভেন্টাসের বর্তমান স্টেডিয়াম চালু হওয়ার সময় ক্লাবের ইতিহাসরাঙানো ৫০ জন খেলোয়াড়ের নাম স্টেডিয়ামের জায়গায় জায়গায় লিখে রাখা হয়েছিল, তাঁদের একজন তাক্কিনার্দি।

সেই তাক্কিনার্দি ইতালিয়ান দৈনিক তুত্তোস্পোর্তে বলেছেন, ‘রোনালদোর অন্য কোনোভাবে জুভেন্টাস ছাড়া উচিত ছিল। এম্পোলির বিপক্ষে ম্যাচের আগে (জুভেন্টাস কোচ মাসিমিলিয়ানো) আলেগ্রি যখন দলের সবার সঙ্গে ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করছেন, সে সময় নিজের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে ক্লাব ছাড়া উচিত হয়নি। অন্তত একটা সংবাদ সম্মেলন করে সমর্থকদের বিদায় বলবে, এতটুকু আশা করেছিলাম। সমর্থকদের ওর কাছ থেকে আরেকটু সম্মান প্রাপ্য ছিল।’

তাক্কিনার্দি ও ব্রিও (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ২০১৮ সালে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর যে ক্লাবকে ‘আপন’ মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন রোনালদো, সেই রোনালদোই এখন জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যান ইউনাইটেডে ফেরার পর বলেছেন, অবশেষে তিনি ‘ঘরে’ ফিরে এসেছেন। এটাও পছন্দ হয়নি তাক্কিনার্দির, ‘(আলেসসান্দ্রো) দেল পিয়েরো, (ফ্রান্সেসকো) টট্টি, (পাওলো) মালদিনি, (হাভিয়ের) জানেত্তির মতো কিংবদন্তি এখন আর নেই, সেটা মেনেই নিয়েছি। কিন্তু রোনালদো ওখানে গিয়ে যে বলল ও এমন একটা ক্লাবে ফিরেছে, যেটাকে ওর ঘর মনে হয়, এটা শুনতে ভালো লাগেনি।’

দলবদলের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে রোনালদোর ক্লাব পাল্টানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাক্কিনার্দি, ‘জুভেন্টাসকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে ও। দলবদলের মৌসুম শেষ হওয়ার দু-এক দিন আগে ক্লাব ছাড়ল। এরপর এত অল্প সময়ে ওর মতো গোলমেশিনের বিকল্প খুঁজে পাওয়া তো অসম্ভব।’

ব্রিও আরেকটু সোজাসুজিই বলে দিলেন, তিন বছর ধরে যে সমর্থকেরা রোনালদোকে আদর্শ মেনেছেন, সে সমর্থকদের অসম্মান করেছেন রোনালদো, অসম্মান করেছেন জুভেন্টাসকেও।

ইউনাইটেডের অনুশীলনে যোগ দেওয়ার আগে পর্তুগালের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের (১১১) রেকর্ড গড়েছেন রোনালদো
ছবি: রয়টার্স

‘জুভেন্টাসের আরও সম্মান প্রাপ্য ছিল। রোনালদো এভাবে ক্লাবটাকে উপেক্ষা করবে, এটা আশা করিনি। ওর দিক থেকে এটা ভালো কিছু হলো না। ক্রিস্টিয়ানো দারুণ একজন পেশাদার, কিন্তু ওর অন্যভাবে বিদায় নেওয়া উচিত ছিল’ - বলেছেন ব্রিও।

তবে দলবদলটা রোনালদো ও জুভেন্টাস দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়েছে। করোনায় আর্থিকভাবে জটিল পরিস্থিতিতে পড়া জুভেন্টাস রোনালদোর বেতনের ভার থেকে মুক্তি পেলেই স্বস্তি পাবে বলে আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল ইউরোপে। সে কারণেই কিনা ব্রিও বলছেন, ‘ওদের সম্পর্কচ্ছেদ হয়তো সুন্দরভাবে হয়নি, তবে আমার মনে হচ্ছে খেলোয়াড় ও ক্লাব দুই পক্ষের জন্যই এতে ভালো হয়েছে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো খেলোয়াড় থাকলে সে তার সতীর্থ ও ক্লাবের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে যেত।’

মাঠে তিন বছরে অবশ্য জুভেন্টাসের জার্সিটাকে কখনো অসম্মান করেননি রোনালদো। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর চ্যালেঞ্জে সফল না হলেও জুভের জার্সিতে ৩ বছরে ১৩৪ ম্যাচে রোনালদোর ১০১ গোল বলে, চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না তাঁর।