জুয়েলে উদ্ধার আবাহনীর

দলকে জেতানোর আনন্দ জুয়েলের।ছবি: প্রথম আলো

মাঠে নামার আগে কোচ মারিও লেমোস কাছে ডেকে কিছু একটা বললেন জুয়েল রানাকে। আবাহনীর মিডফিল্ডারকে আজ একাদশে রাখেননি কোচ। রহমতগঞ্জের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ৫৭ মিনিট পর্যন্ত যখন গোলের জন্য হন্যে হয়ে সারা মাঠ দৌড়াচ্ছে আবাহনী, তখনই মামুনুল ইসলামের বদলি হিসেবে মাঠে নামালেন জুয়েলকে।

কোচকে মোটেও হতাশ করেননি ঝিনাইদহের এই ফুটবলার। আস্থার প্রতিদান দিয়ে মাঠে নামার ২২ মিনিটের মধ্যেই দলকে গোল উপহার দিলেন জুয়েল। শেষ পর্যন্ত এই একটা গোলই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ জুয়েলের একমাত্র গোলেই রহমতগঞ্জকে হারিয়েছে আবাহনী। লিগে এটি আবাহনীর টানা তৃতীয় জয়। তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে যুগ্মভাবেই শীর্ষে রইল আবাহনী। ৩ ম্যাচে দুই হার ও এক ড্রতে মাত্র ১ পয়েন্ট রহমতগঞ্জের।

জুয়েলকে ঘিরে উল্লাস।
ছবি: প্রথম আলো

ফেডারেশন কাপে মোহামেডানের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোল করেন জুয়েল রানা। কিন্তু এরপর থেকে আর নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। একাদশেও সেভাবে কোচ তাঁকে রাখছিলেন না। বদলি হিসেবেই খেলাচ্ছিলেন। গোল করা কিংবা করানো কোনো ভূমিকাতেই গত ম্যাচগুলোতে জুয়েলকে সেভাবে দেখা যায়নি। অবশেষে আজ আবাহনীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পয়েন্ট এল জুয়েলের সুবাদেই।

লিগের প্রথম ম্যাচে পুলিশের বিপক্ষে জিততে ঘাম ঝরেছিল আবাহনীর। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রাদার্সের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে অবশ্য দুর্দান্ত খেলেন রুবেল মিয়া। আজ সেই তুলনায় রুবেল সেভাবে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেননি। ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ অনুশীলনে চোট পাওয়ায় তাঁকে ছাড়াই খেলতে নামে আবাহনী। তাই স্বাভাবিকভাবেই বেলফোর্টের ওপর দায়িত্বটা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু রহমতগঞ্জ কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীর কৌশলই ছিল বেলফোর্টকে কড়া পাহারায় বোতলবন্দী করে রাখা।

একাধিকবার গোল পেতে চেষ্টা করেছেন আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফ্রান্সিসকো রদ্রিগেজও। রহমতগঞ্জের জমাট রক্ষণ গলে তাই তো গোল বের করতে বেশ কষ্ট হয়েছে আবাহনীর। আর রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার কৌশলে খেলেছে রহমতগঞ্জ।
আবাহনীর মাঝমাঠ থেকে খুব বেশি বলের জোগান দিতে পারেননি কেউ। যদিও বল নিয়ে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন রুবেল মিয়া, বেলফোর্টরা। কিন্তু সেভাবে সফল হতে পারছিলেন না।

প্রথমার্ধে বহু চেষ্টাতেও গোলের দেখা পায়নি আবাহনী।
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের ২৩ মিনিটে অবশ্য এগিয়ে যেতে পারত আবাহনী। কিন্তু মামুনুলের কর্নার থেকে নাসির উদ্দিন হেড করে বলটা পাঠালেন বাইরে। আর ৩৩ মিনিটে ফ্রান্সিসকোর শট কোনো রকমে ফিস্ট করে গোল বাঁচালেন রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ।

পুরো ম্যাচে বলার মতো একটাই আক্রমণ ছিল রহমতগঞ্জের। ৭১ মিনিটে রহমতগঞ্জের তাজিক ফরোয়ার্ড দিলশদ ভাসিয়েভের শট আবাহনী ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানির গায়ে লেগে চলে যায় বাইরে।

দ্বিতীয়ার্ধে মামুনুলকে তুলে নিয়ে জুয়েলকে মাঠে নামান কোচ। এরপর আক্রমণে কিছুটা হলেও ধার বেড়েছে। আর সেই আক্রমণেরই ফসল গোলটি। ৭৯ মিনিটে রায়হানের লম্বা থ্রো থেকে বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো বেলফোর্ট প্রথমে হেড করেন। বেলফোর্টের মাথা ছোঁয়া বলটি পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা জুয়েল দুর্দান্ত হেডে পাঠান জালে। মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে আবাহনীর গ্যালারি। বাকি সময়ে চেষ্টা করেও আর কোনো দল গোল পায়নি।