‘টাকাওয়ালা’ সদস্য বোর্ডে চাইছে মোহামেডান

মোহামেডান সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন।ছবি: প্রথম আলো

আট বছর পর আজ ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা। নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ সভায় উপস্থিত থাকার কথা বিদায়ী পরিচালনা পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার। সভা পরিচালনা করারও কথা তাঁর। ইতিপূর্বে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, সাধারণ সভায় থাকবেন তিনি। কিন্তু দেখা গেল, সেই লোকমান হোসেন ভূঁইয়াই বার্ষিক সাধারণ সভায় নেই!

কেন নেই? আলোচনা উঠল স্বাভাবিকভাবে। বলা হলো, সাধারণ সভায় এলে তাঁকে অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। ২০১৯ সালে মোহামেডান ক্যাসিনো-কাণ্ডের সঙ্গে কীভাবে জড়াল, কেন মোহামেডানের ঐতিহ্য ধ্বংস করা হলো—এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠত। তাই লোকমান ভূঁইয়া সভায় আসেননি বলে ধারণা করেছেন মোহামেডানের অনেক সদস্য। যদিও সাধারণ সভা হয়ে যাওয়ার পর তিনি ঠিকই এসেছেন। তবে লোকমান হোসেন ভূঁইয়া সভায় থাকুন আর না থাকুন, আট বছর পর বার্ষিক সাধারণ সভাটা ঠিকই করেছে মোহামেডান।

ভোট দিচ্ছেন বেনজীর আহমেদ।
ছবি: প্রথম আলো

সভা পরিচালনা করেন মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন। ২০১৯ সালে আদালত তাঁকে মোহামেডানের নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেন। তারপর অনেক চড়াই–উতরাই পেরিয়ে অবশেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

মোহামেডানের ৩৩৭ জন সদস্য নির্বাচিত করবেন ১৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ। প্রার্থী হয়েছেন ২০ জন। ভোটের লড়াইয়ে কোন ১৬ জন পাস করবেন, বলা কঠিন। তবে যথাযথ উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই চলছে ভোট গ্রহণ।

সাধারণ সভা শেষে ক্লাবের বিদায়ী পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য খন্দকার জামিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ সভা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। সভায় জয়নাল আবেদীন ফারুক (বিএনপি নেতা) বলেছেন, এমন লোকদের বোর্ডে আসা উচিত, যাঁরা ক্লাবকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারবেন। সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি বলেন, যাঁরা টাকা দিতে পারবেন, ভালো নেতৃত্ব দিতে পারবেন, দল গঠনে সহায়তা করতে পারবেন, তাঁদেরই আসা উচিত পরিচালনা বোর্ডে।’

নিয়মিত ক্লাবের সভা আয়োজন, সাধারণ সভা যেন দুই বছর পরপর হয়, এসব দিকেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সাধারণ সভাটি হয়েছে ৮ বছর পর এবং তৃতীয়বারের মতো হচ্ছে বার্ষিক সাধারণ সভা। মাঝখানে আদালতে মামলার কারণে নির্বাচন হতে পারেনি, বলছেন কর্মকর্তারা।

ভোট দিচ্ছেন জাহিদ হাসান।
ছবি: প্রথম আলো

ক্লাবের বিদায়ী পরিচালনা বোর্ডের সদস্য আনোয়ারুল হক হেলাল বলেন, ‘অবশেষে সাধারণ সভা হলো, এটা মোহামেডানের জন্য খুশির খবর। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বোর্ড ক্লাবের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।’

সাধারণ সভায় একই প্রত্যাশা রেখেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি এম এ আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ক্রান্তিকালে আদালত আমাকে দায়িত্ব দেন। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সাধারণ সভা আমরা আগেই করতে পারতাম। কিন্তু কোভিডের কারণে পারা যায়নি। অবশেষে নির্বাচনের মাধ্যমে মোহামেডান নতুন দিনে পা রাখছে, এটা ভালো খবর।’

সাবেক ফুটবলার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শুকনা কথা বলে লাভ নেই। অনেকে অনেক বড় বড় কথা বলবেন। যারা বছরে ২৫-৩০ লাখ টাকা দিতে পারবে, তাদেরই সম্পৃক্ত হওয়া উচিত।’ বিবিধ আলোচনায় কথা বলেছেন কয়েকজন সদস্য। তাঁরা নানা পরামর্শ রেখেছেন। ক্লাব যেন ভালো চলে, সেটাই বলেছেন। সব কথার মূল কথা, অর্থ। অর্থের ওপরই জোর দেওয়া হয়েছে বেশি।

৮ বছরে আয়–ব্যয়ের হিসাবও অনুমোদন করা হয়েছে। এই সময়ে ৫৬ কোটি টাকার বেশি আয় দেখানো হয়েছে। ব্যয় আরও বেশি ৬৩ কোটি।