‘টাকার লোভে’ই সুপার লিগের ফন্দি

সুপার লিগ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের ১২টি বড় ক্লাব।ছবি: টুইটার

স্কাই স্পোর্টসের মাইক্রোফোন হাতে কাল গ্যারি নেভিল কথা বলার সময় তাঁর চোখ-মুখের ভাষাই সব বলে দিচ্ছিল। বিস্ফারিত নেত্রে সুপার লিগে অংশ নেওয়া ক্লাবগুলোকে ধুয়ে দিচ্ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক এ ডিফেন্ডার।

এখন ফুটবল-পণ্ডিত হিসেবে টিভি চ্যানেল মাতানো নেভিল মনে করেন, নির্ভেজাল লোভ থেকেই ক্লাবগুলো সুপার লিগ চালুর পরিকল্পনা করেছে।

নেভিলের অমন চাহনি যথেষ্ট কারণ আছে। ইউরোপিয়ান সুপার লিগ চালু হলে এত দিন ধরে চলে আসা চ্যাম্পিয়নস লিগ গুরুত্ব হারাবে। অপেক্ষাকৃত ছোট ক্লাবগুলোর সঙ্গে বড়দের ব্যবধানটা পরিষ্কার হয়ে চোখে বিঁধবে। কাল ইউরোপের ১২টি বড় ক্লাব মিলে সুপার লিগ চালুর ঘোষণা দেয়।

দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ক্লাবগুলো খেলবে একে অপরের বিপক্ষে। মৌসুমজুড়ে দর্শকেরা তো বড় দলগুলোর মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। এটাই নিয়মিত দেখা যাবে সুপার লিগে। আবার বড় ম্যাচ মানেই তো প্রচুর দর্শক ও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উপার্জনের সুযোগ। নেভিলের চোখে এটি ক্লাবগুলোর নির্ভেজাল লোভ ছাড়া আর কিছুই না।

রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, আতলেটিকো মাদ্রিদ সুপার লিগে নাম লিখিয়েছে স্পেন থেকে। ইতালি থেকে রয়েছে জুভেন্টাস, এসি মিলান ও ইন্টার মিলান। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, চেলসি, আর্সেনাল ও টটেনহাম অংশ নেবে সুপার লিগে।

জার্মানি ও ফ্রান্সের লিগ থেকে কোনো দল ‘বিদ্রোহী লিগ’ তকমা পাওয়া এ টুর্নামেন্টে নাম লেখায়নি। স্কাই স্পোর্টসের ফুটবল-পণ্ডিত হিসেবে নেভিল ধুয়ে দিয়েছেন সুপার লিগে অংশ নেওয়া এসব ক্লাবকে, ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লিভারপুলের ওপরই বেশি রাগ হচ্ছে। তারা এমন এক প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে, যেখানে কখনো অবনমনের মুখ দেখবে না। এটা মর্যাদাহানিকর। দেশের বড় ক্লাবগুলোর কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে হবে আমাদের—এর মধ্যে আমার দলও (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)।’

ইংলিশ ক্লাবগুলোর মালিকদের উদ্দেশে নেভিল সোজাসাপ্টাই বলেন, ‘নির্ভেজাল লোভ থেকে এটা করা হয়েছে। তারা প্রতারক। এই দেশের ফুটবলের সঙ্গে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি মালিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহাম ও আর্সেনাল চ্যাম্পিয়নস লিগেও নেই। অথচ তারা যেন ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতাবলে সেখানে থাকতে চাইছে? এটা কৌতুক ছাড়া আর কী। এখন সময় এসেছে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নিয়ন্ত্রক গঠন করে ক্লাবগুলোর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু দখল করা ঠেকাতে হবে। যথেষ্ট হয়েছে, আর না!’

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে লিগ জয়ের পাশাপাশি দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন রাইটব্যাক পজিশনে খেলা নেভিল। ক্লাবটির কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিখ্যাত ‘ক্লাস অব ৯২’–এর সদস্য হিসেবে খ্যাতি কুড়োনো নেভিল সুপার লিগে অংশ নেওয়া ইংলিশ ক্লাবগুলোর পয়েন্ট কেটে নেওয়ার দাবি তুলেছেন, ‘কালই সব পয়েন্ট কেটে নিন। লিগ টেবিলের নিচে পাঠিয়ে সব টাকা নিয়ে নিন। আমি সিরিয়াসলিই বলছি। কারণ এটা অপরাধ, দেশের ফুটবলপ্রেমীদের বিরুদ্ধে অপরাধ। ফুটবল পৃথিবীর সেরা খেলা, এই দেশেরও (ইংল্যান্ড) সেরা খেলা। আর তাই এটা অপরাধ।’

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটির কিংবদন্তি রয় কিনের চোখেও পরিষ্কার লোভ থেকে সুপার লিগে অংশ নিচ্ছে ক্লাবগুলো, ‘টাকার লোভ থেকেই এটা হচ্ছে। ফিফার কাছ থেকে আমরা এখনো কিছুই শুনিনি। কিন্তু ব্যাপারটা ভালো লাগছে না। আশা করি এটা যেন এখানেই থেমে যায়। আমরা বড় ক্লাবের কথা বলি। বায়ার্ন মিউনিখ তো পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্লাব—ওরা অন্তত এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটা ভালো দিক।’

ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনও মুখ খুলেছেন সুপার লিগের বিরুদ্ধে, ‘সুপার লিগ হলে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের ৭০ বছরের ইতিহাস থেকে সরে আসতে হবে।’

চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বও বুঝিয়ে দেন ফার্গি, ‘ইউনাইটেডে থাকতে আমরা চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলেছি। সেগুলো ছিল ক্লাবের সেরা রাত। আবার দেখুন, এভারটন ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে নতুন স্টেডিয়াম বানাচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার জন্য। দর্শকেরা এই টুর্নামেন্ট খুব পছন্দ করেন।’

সুপার লিগ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই টুর্নামেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাবগুলো ৩.৫ বিলিয়ন ডলার করে পাবে। এর আগে জানা গিয়েছিল শীর্ষ ছয় দল মৌসুমে পাবে ৩৫ কোটি ইউরো। কিন্তু বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী দল ৮ কোটি ইউরোর কাছাকাছি আয় করতে পারে।