ট্রাম্প যা করেননি, সেটা করবেন বাইডেন?

বাইডেন কি রাপিনো-মরগানদের আশা পূরণ করবেন?ছবি: রয়টার্স

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মেগান রাপিনোর সম্পর্কটা দা-কুমড়োর মতো বললেও হয়তো কম বলা হবে। বিভিন্ন ইস্যুতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সমালোচনায় নেমেছেন দেশটির নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক। সেটা বর্ণবাদী আচরণের জন্য হোক, অধিবাসী নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে হোক কিংবা হোক সেটা সমকামীদের আন্দোলন নিয়ে। তবে রাপিনোদের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল বেতনসংক্রান্ত। জাতীয় দলের ফুটবলারদের বেতন–বোনাসের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে যে বৈষম্য, এ নিয়ে বরাবরই সোচ্চার রাপিনো ও তাঁর সতীর্থরা। কিন্তু ট্রাম্পের কাছে মেগানদের দাবি কখনোই খুব একটা গুরুত্ব পায়নি।

গত সপ্তাহেই নিজেদের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী চার বছরের জন্য ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনকে দেশের দায়িত্ব দিয়েছেন রাপিনোরা। দায়িত্ব এখনো বুঝে নিতে বহু বাকি, কিন্তু বাইডেনকে ক্ষমতায় দেখে কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়ে ওঠার কথা রাপিনোদের। কারণ, ট্রাম্পের সময়ে যখন নিজেদের দাবি আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দল, তখন বারবার তাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিতেন বাইডেন।

বিশ্ব ফুটবলের সেরা তারকাদের মধ্যে পড়েন অ্যালেক্স মরগানরা।
ছবি: টুইটার

নারী ফুটবলাররা পুরুষ দলের সমান বেতনের দাবি করে আসছেন বহু দিন ধরেই। এ ইস্যুতে অনেক শীর্ষ ফুটবলারকেই জাতীয় দলের দায়িত্ব থেকে সরে থাকতেও দেখা গেছে ইউরোপে। যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবলাররা এভাবে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। বকেয়া ভাতা আদায়ের জন্য ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি ছিল, পুরুষ দলকে যে ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া হয়, সেটা নারী দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। নারীদের ফুটবলে চারটি বিশ্বকাপ জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। অলিম্পিকেও চারটি সোনা জিতেছে তারা।

সে তুলনায় পুরুষ ফুটবল দলের সাফল্য বলতে কিছু নেই। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে তো বাছাইপর্বই পেরোতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সে তুলনায় বেতন–ভাতা ভালোই পায় সে দল। ছোটখাটো সাফল্যের ভিত্তিতেই যে ভাতা দেওয়া হয়, সেটার সঙ্গেই তুলনা টেনেছিলেন রাপিনোরা। ছেলেদের সাফল্য ও সে তুলনায় বোনাসের অঙ্কের সঙ্গে নিজেদের সাফল্যের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ হিসাব কষে বের করেছিলেন তাঁরা। সে চিন্তা থেকেই বকেয়া ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের দাবি জানিয়ে মামলা করেছিলেন রাপিনোরা।

গত মে মাসে সে মামলায় অবশ্য হেরে গেছেন রাপিনোরা। বিচারক গ্যারি ক্লজনার বলেছেন, নারী দল প্রাথমিকভাবেই ছেলেদের বেতনের কাঠামো মেনে নেয়নি। তারা নির্দিষ্ট এক লাখ ডলারের বেতনের চুক্তিতে আছে। ফলে ছেলেদের বেতন বা বোনাসের ভিত্তিতে তারা অর্থ পেতে পারে না। তবে এই বিচারক মেডিকেল ভাতা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবাসন ব্যবস্থার উন্নতির প্রসঙ্গে রাপিনোদের দাবি আমলে নিয়েছিলেন। এ রায়ে স্বভাবতই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন রাপিনো-মরগানরা।

২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের নারী দল।
ছবি: টুইটার

এমন দুঃসময়ে তাঁদের সাহস জুগিয়েছিলেন বাইডেন। গত ২ মে আদালতের রায়ের পর টুইটারে রাপিনোদের লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন। সে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ফেডারেশনকে সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছেন, আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত যেন এ বৈষম্য দূর করা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নারী দলকে বলছি, হাল ছেড়ো না। এ লড়াই এখনো শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ফেডারেশনকে বলছি, সমান বেতনের ব্যবস্থা করো, এখনই! না হলে আমি যখন প্রেসিডেন্ট হব, তখন বিশ্বকাপের টাকা খুঁজতে অন্য কোথাও যেতে হবে তোমাদের।’

২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে উত্তর আমেরিকা। কানাডা ও মেক্সিকো সহ-আয়োজক হলেও মূল ভারটা যুক্তরাষ্ট্রেরই। বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, সেটার জন্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য ছাড়া গতি নেই ফেডারেশনের। আর এখন আগামী চার বছর বাইডেনের ক্ষমতায় থাকা মানেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তাঁর প্রশাসনই নেবে। তাই মেয়েদের ফুটবলে বেতন বৈষম্য দূর করা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল ফেডারেশনকে। অবশ্য বাইডেন যদি তাঁর আগের মন্তব্যগুলো মনে রাখেন, তবেই এটা সম্ভব!