ডজন পূর্ণ হলো আবাহনীর

রহমতগঞ্জকে হতাশ করে আবাহনীই শেষ পর্যন্ত জিতল শিরোপাছবি: প্রথম আলো

ফেডারেশন কাপ ২০২০। ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের প্রতিপক্ষ রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। সেবার রহমতগঞ্জের হৃদয় ভেঙেছিল বসুন্ধরা কিংস। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে, দানিয়েল কলিনদ্রেস হৃদয় ভাঙেন রহমতগঞ্জের। ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে জোড়া গোল করেন এই কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড।

দুই বছর পর আরেকটি ফেডারেশন কাপের ফাইনাল। কমলাপুর স্টেডিয়ামে আজও রহমতগঞ্জকে খালি হাতে ফেরানোর অন্যতম নায়ক কলিনদ্রেস। এবার কলিনদ্রেস খেলেছেন আবাহনীতে। আজ ফাইনালে রহমতগঞ্জকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আবাহনী। জয়ের অন্যতম নায়ক কলিনদ্রেস করেছেন ম্যাচের প্রথম গোল। অন্য গোলটি রাকিব হোসেনের। রহমতগঞ্জের একমাত্র গোলটি করেছেন ফিলিপ আজাহ।

এই জয়ে ফেডারেশন কাপে শিরোপার ডজন পূর্ণ হলো আবাহনীর। সর্বোচ্চ ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হলো আকাশি-নীল দলটি। প্রথম শিরোপার স্বপ্ন অধরা থেকে গেল আগের দুই রাউন্ডে শেখ রাসেল ও মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা রহমতগঞ্জের।

কলিনদ্রেস আরও একবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে রহমতগঞ্জের দুঃস্বপ্নে দেখা দিলেন
ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতা কাপের পর ফেডারেশন কাপ—এই মৌসুমে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতল আবাহনী। ১৮ ডিসেম্বর বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে আবাহনী জিতেছিল স্বাধীনতা কাপের শিরোপা।

আজকের ম্যাচে লড়াইটা ছিল রহমতগঞ্জের দেশি কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীর সঙ্গে আবাহনীর বিদেশি কোচ মারিও লেমোসের। দিন শেষে জয় হয়েছে আবাহনীর পর্তুগিজ কোচের।

পেশাদার যুগে পা রেখে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হারে রহমতগঞ্জ। ক্লাবটির ৮৯ বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল। সন্ধ্যাটা রাঙিয়ে রাখতে কমলাপুরের গ্যালারিতে ছিল হাজার চারেক রহমতগঞ্জের দর্শক। কিন্তু সেই সুযোগটা দিল কোথায় আবাহনী?

চোটের কারণে আক্রমণে বড় অস্ত্র রাফায়েল আগুস্তো এবং দরিয়েলতন গোমেজকে আজ পায়নি আবাহনী। আগুস্তোর বদলে মারিও লেমোস মাঠে নামান জুয়েল রানাকে। চোটের কারণে দর্শক হয়ে বসে ছিলেন ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা। তাঁর বদলে খেলেছেন ডিফেন্ডার মনির হোসেন। কিন্তু তাঁকেও ৫৬ মিনিটের মাথায় তুলে নেন কোচ। মনিরের বদলি নামেন মামুন মিয়া।

আবাহনীর দ্বিতীয় গোলটি করেন রাকিব
ছবি: প্রথম আলো

আগুস্তো আর দোরিয়েলতনের অভাবটা অবশ্য সেভাবে বুঝতে দেননি কলিনদ্রেস। নাবিব নেওয়াজ ও জুয়েল রানারা নিশ্চিত সুযোগ পেয়েও নষ্ট করেছেন। কিন্তু কলিনদ্রেস ম্যাচজুড়েই ছিলেন উজ্জ্বল।

আবাহনীর পুরোনো অস্ত্র সানডে নেতৃত্ব দিয়েছেন রহমতগঞ্জের আক্রমণভাগে। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগও পেয়েছিলেন সানডে, একবার তো আবাহনীর গোলকিপার গোলপোস্টের বাইরে দেখে মাঝমাঠের একটু ওপর থেকেই শট নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাল খুঁজে পায়নি সানডের কোনো শট।

ম্যাচের ২৮ মিনিটে নাবিব নেওয়াজ এগিয়ে নিতে পারতেন আবাহনীকে। বক্সের মধ্যে জুয়েল হেডে বল বাড়িয়ে দেন নাবিবের কাছে। কিন্তু ফাঁকা পোস্ট পেয়েও নাবিব শট মারেন বারের ওপর দিয়ে। বিরতির খানিক আগে আবাহনীকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন কলিনদ্রেস। বক্সের সামনে থেকে রাকিব বল বাড়িয়ে দেন কলিনদ্রেসের উদ্দেশে। দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে কলিনদ্রেস জালে পাঠালেন বল।

আবাহনীর শিরোপার উচ্ছ্বাস
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের ৬৪ মিনিটে আবাহনীর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রাকিব। বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণে ওঠা নুরুল নাইমের শট ফিস্ট করে ফেরান রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক রাকিবুল হাসান। ফিরতি বল গিয়ে পড়ে রাকিবের সামনের। ঠান্ডা মাথায় দেখে শুনে পোস্টে শট নেন রাকিব (২-০)।

পিছিয়ে পড়া রহমতগঞ্জ তখন গোল শোধে মরিয়া। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে ফিলিপ আজাহর গোলে স্কোরলাইন ২-১ করে রহমতগঞ্জ। শাহরিয়ার বাপ্পীর থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢোকেন আজাহ। এরপর আবাহনীর ডিফেন্ডার মামুন মিয়াকে সহজেই পরাস্ত করেন। গোলরক্ষক শহীদুল আলম জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসেও সর্বনাশ ঠেকাতে পারেননি। কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন আজাহ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উদ্‌যাপনটা আবাহনীরই হলো!

ডিসেম্বরে স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন। এরপর জানুয়ারিতে ফেডারেশন কাপ জিতল আবাহনী। কোচ মারিও লেমোসের চোখ এবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার দিকে। সেই ২০১২-১৩ মৌসুমে ট্রেবল জিতেছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। ৯ বছর পর এবার ট্রেবল জেতার সম্ভাবনা জেগেছে আবাহনীর সামনেও।