ডিফেন্ডার হতে চেয়েছিলেন ম্যারাডোনা

ম্যারাডোনা ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন ডিফেন্ডার।ছবি: এএফপি

ডিয়েগো ম্যারাডোনা মানেই আক্রমণভাগে একের পর এক নৈপুণ্য। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের নিয়ত তটস্থ করে রাখা। আর্জেন্টিনা, নাপোলি, বার্সেলোনা, বোকা জুনিয়র্স, সেভিয়া, আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ—সব জায়গাতেই আক্রমণভাগ মাতিয়েছেন।

কিন্তু যদি বলা হয়, আক্রমণভাগ নয়, বরং রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলেন ম্যারাডোনা? পছন্দ করতেন রক্ষণভাগে খেলতে? ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে?

চমক লাগাই স্বাভাবিক। তবে এ তথ্য খোদ ম্যারাডোনাই দিয়েছেন নিজের আত্মজীবনী ‘এল দিয়েগো’তে। অকপটে স্বীকার করেছেন ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতে পছন্দ করার ব্যাপারটা।

‘আমি খেলতে চেয়েছি। কিন্তু আমি জানতাম না কোথায় খেলব। আমি আসলেই জানতাম না। কোনো ধারণাই ছিল না আমার। খেলতে পারলেই হতো আমার। আমি শুরু করেছিলাম একজন ডিফেন্ডার হিসেবে। আমি সব সময় ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতে পছন্দ করতাম আর “লিবেরো” হিসেবে খেলতে আমার এখনো ভালো লাগে। এখন তো তারা আমাকে ফুটবল স্পর্শই করতে দেয় না। তারা মনে করে, ফুটবল খেললে আমার হৃদ্‌যন্ত্রে বিস্ফোরণ হবে। একজন “লিবেরো” হিসেবে খেলার বেশ সুবিধা আছে। পেছন থেকে গোটা মাঠ ভালোভাবে দেখা যায়। পুরো মাঠের কোথায় কী হচ্ছে বোঝা যায়’—আত্মজীবনীতে বলেছেন ম্যারাডোনা।

প্রশ্ন উঠতে পারে, ‘লিবেরো’ কী? আগে সেন্টারব্যাকের (তিন সেন্টারব্যাকবিশিষ্ট ছকে একজন বা দুই সেন্টারব্যাকবিশিষ্ট ছকে একজন) সঙ্গে একজন এমন খেলোয়াড় খেলতেন, যাঁর কাজ ছিল সেন্টারব্যাক প্রতিপক্ষের আক্রমণ না আটকাতে পারলে তাদের পেছনে থেকে রক্ষণ সামলানো। তাদের বলা হতো লিবেরো বা সুইপার।

জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, আর্জেন্টিনার দানিয়েল পাসারেলা, ইতালির ফ্রাঙ্কো বারেসি—সবাই এই গোত্রের খেলোয়াড় ছিলেন। এখনকার গোলরক্ষকদের মতো তখনকার গোলরক্ষকেরা অতটা সব্যসাচী ছিলেন না।

নয়্যার, আলিসন, এদেরসন, লরিস, টের স্টেগেন, ওবলাকদের মতো ছোট ছোট পাস দিয়ে নিচ থেকে আক্রমণ গড়া, নিখুঁত লং বল দেওয়া, বক্সের বাইরে বেরিয়ে এসে দলকে বিপদমুক্ত করা—এসব কাজ করতে পারতেন না সেকালের গোলরক্ষকেরা। তাঁদের ভূমিকা ছিল শট সেভ করা, পাঞ্চ করা, ক্যাচ করা—এসবেই সীমাবদ্ধ। লিবেরোদের কাজ ছিল পাশের সেন্টারব্যাক দলকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দলকে বিপদমুক্ত করা ও একই সঙ্গে আক্রমণ শুরু করা। সেই ভূমিকাটাই মুগ্ধ করত ম্যারাডোনাকে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি ১৯৭৪ সালের বিশ্বজয়ী বেকেনবাওয়ারের মতো হতে চেয়েছিলেন ম্যারাডোনা?

আত্মজীবনীর পরের অংশে অবশ্য তিনি সেটা বলেননি। জানিয়েছেন খেলার প্রতি নিজের নিখাদ আবেগের কথাটা, ‘আমার পায়ে বল থাকলেই হয়েছে। বল নিয়ে খেলাটা আমাকে একটা আলাদা শান্তি দিত। এখনো দেয়। সব সময় দেয়। আমাকে একটা বল দাও, আমি খেলতে থাকব। বল নিয়ে আনন্দ করব। জেতার চেষ্টা করব, ভালো খেলতে চাইব। আমাকে একটা বল দাও আর দেখো, আমি কী কী করতে পারি, কোথায় কোথায় করতে পারি!’