ড্র হলেও রোমাঞ্চের কমতি ছিল না আবাহনী–শেখ জামাল লড়াইয়ে

আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে জমজমাট ছিল আবাহনী–শেখ জামালের লড়াইছবি: প্রথম আলো

দুবার গোল করে এগিয়ে যাওয়া, পাল্টা দুবার সমতায় ফেরা। দুটি লাল কার্ড। সহকারী কোচের হলুদ কার্ড দেখা। গোল বাতিল হওয়া। খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি—একটি ফুটবল ম্যাচে এর চেয়ে বেশি উত্তেজনা আর ছড়াতে পারত না!

এই উত্তেজনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল গ্যালারিতেও। শেষ বাঁশি বাজার পর দুর্দান্ত এক ম্যাচ উপহার দিয়েও জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে না পারার কষ্ট ছিল দুই দলের খেলোয়াড়দের মুখে।

লিগে অপরাজিত থাকার আনন্দ নিয়ে আজ মাঠে নেমেছিল আবাহনী লিমিটেড ও শেখ জামাল ধানমন্ডি। আবাহনী লিমিটেড দুবার এগিয়ে গেছে—দুবারই সমতায় ফিরেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি।

সমতায় ফেরার পর ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারত শেখ জামালও। ম্যাচের শেষ দিকে কয়েকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে তারা। শেষ মুহূর্তে বল জালে জড়িয়ে উল্লাস করেছেন আবাহনীর ফুটবলাররাও।

কিন্তু সহকারী রেফারি অফসাইডের পতাকা তোলায় সে উল্লাস টেকেনি। সে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদও জানিয়েছেন আবাহনীর ফুটবলাররা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ২–২ গোলে ড্র হয়।

চলতি মৌসুমে আবাহনীর পরিকল্পনার বড় অংশজুড়ে সেট পিস। বিশেষ করে ফুলব্যাক রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো–ইনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা।

১৩ মিনিটে রায়হানের থ্রোর উৎস থেকেই এগিয়ে যায় আবাহনী। রায়হানের থ্রো বক্সের মধ্যে থেকে ক্লিয়ার করেছিলেন শেখ জামালের ডিফেন্ডার।

ফিরতি বলে সোহেল রানা ভলি করলে গোলমুখের জটলা থেকে ব্যাক হিলে জালে জড়িয়েছেন হাইতিয়ান কেভিনস বেলফোর্ট।

আবাহনী এগিয়ে গিয়েছিল ম্যাচে। গোলের পর খেলোয়াড়দের উল্লাস
ছবি: প্রথম আলো

শেখ জামালের দুর্দান্ত ফরোয়ার্ড লাইন থাকায় তাদের বিপক্ষে কোনো দলই বেশিক্ষণ এগিয়ে থাকার আনন্দ ধরে রাখতে পারে না। ধানমন্ডির প্রতিবেশী আবাহনীও পারেনি। সমতায় ফিরতে সময় নিয়েছে মাত্র ৬ মিনিট।

১৯ মিনিটে ১–১ করেছেন শেখ জামালের সুলাইমান সিল্লাহ। মাঝমাঠের ওপর থেকে ভালিজনভ ওতাবেকের রক্ষণচেরা থ্রু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে বুলেটগতির শটে গোলটি করেছেন সুলাইমান। লিগে এটি তাঁর চতুর্থ গোল।

উপভোগ্য ম্যাচের ৩৬ মিনিটে বিপত্তি। প্রতিপক্ষের ট্যাকলে মাটিতে পড়ে ছিলেন আবাহনী ডিফেন্ডার রায়হান। পরে তাঁর শরীরে শেখ জামাল অধিনায়ক সলোমন কিংয়ের জোরে বল মারা কেন্দ্র করে দুই দলের খেলোয়াড়েরা ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন।

এর জের ধরে ৪০ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে সলোমন ও আবাহনীর উইঙ্গার জুয়েল রানাকে। সলোমনের মতো ফরোয়ার্ডকে হারানোর ক্ষতিটা বেশি শেখ জামালেরই হওয়ার কথা।

উভয় দলই দশজনের। তবে আক্রমণের কোনো কমতি হয়নি। ১০ জন খেলোয়াড় হয়ে পড়লেও উভয় দল খেলিয়েছে দুজন ফরোয়ার্ড। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই ব্রাজিলিয়ান ফ্রান্সিসকো তোরেসের গোলে আবার এগিয়ে যায় আবাহনী।

ওভারল্যাপিংয়ে উঠে বক্সের মধ্যে থেকে ক্রস করেছিলেন রায়হান। দূরের পোস্ট থেকে উড়ন্ত হেডে দুর্দান্ত গোল করেন ফ্রান্সিসকো। লিগে এটি তাঁর চতুর্থ গোল।

দুবার পিছিয়ে পরে প্রতিবারই সমতায় ফিরেছে শেখ জামাল
ছবি: প্রথম আলো

পিছিয়ে থাকা শেখ জামাল ৬০ মিনিটে স্ট্রাইকার নুরুল আবসারের বদলি হিসেবে মাঠে নামায় মিডফিল্ডার ওমর ফারুককে। না, মাঝমাঠ শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে নয়। উদ্দেশ্য আক্রমণের গতি বাড়ানো।

ওমরকে মাঝমাঠে পাঠিয়ে ফরোয়ার্ড ওতাবেককে ওপরে উঠিয়ে তাঁর প্রথাগত জায়গায় খেলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এরপরই বেড়ে যায় জামালের আক্রমণের গতি। ওমর জোবের গোলে ৭১ মিনিটে সমতায় ফিরে শেখ জামাল।

প্রতি–আক্রমণ থেকে সুলাইমানের পা থেকে আসা বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে জালে জড়িয়েছেন জোবে। ৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসে আছেন গাম্বিয়ান এই ফরোয়ার্ড।

জামালের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে ৮১ মিনিটে মোহাম্মদ সোহেল রানার বদলি হিসেবে নামানো হয় ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরীকে। এরপরও কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করে নষ্ট করেছেন জামালের ফরোয়ার্ডরা। বিশেষ করে জোবে।

যোগ করা সময়ে ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার আগে নাটকীয়তা। রাফায়েল আগুস্তোর ক্রসে দূরের পোস্ট থেকে হেড করেছিলেন ফ্রান্সিসকো।

গোলমুখ থেকে সেটি হেডে জালে জড়ান বদলি নাসিরউদ্দিন। কিন্তু ততক্ষণে অফসাইডের পতাকা তুলেছেন সহকারী রেফারি ফেরদৌস আহমেদ।

সেটি অফসাইড ছিল না বলে ম্যাচ শেষে দাবি আবাহনী ম্যানেজার সত্যজিৎ দাসের, ‘সেটি কোনোভাবেই অফসাইড হয়নি। এই যে ভিডিও দেখে (হাতের মোবাইলে সে মুহূর্তের দৃশ্য দেখিয়ে) আপনারাই বিচার করেন। এভাবে ফুটবল খেলা যায় না।’

শেখ জামালের রক্ষণে আবাহনীর একটি আক্রমণ
ছবি: প্রথম আলো

ভিড়ের মধ্য থেকে শোনা গেল দুই দলের খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখানোরও উদ্দেশ্য আছে। আবাহনী ম্যানেজার বলছিলেন, সলোমন যেন পরবর্তী ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে খেলতে না পারেন; সে জন্য লাল কার্ড দেখানো। একজনকে যেহেতু দেখানো যায় না, তাই জুয়েলকেও দেখানো হয়েছে।

সেটি লাল কার্ড হয় না বলে দাবি করেছেন শেখ জামালের কোচ শফিকুল ইসলামও, ‘সলোমনেরটা কোনোভাবেই লাল কার্ড হয় না। হলুদ কার্ড দেখানো যেতে পারত।’