ঢাকায় এসেও তাঁর কণ্ঠে রোনালদোদের কাছে সেই টাইব্রেকারে হারের স্মৃতি

রোনালদোর গোলে ২০০৮ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে এগিয়ে গিয়েছিল ম্যান ইউনাইটেডছবি: ইউনাইটেডের ওয়েবসাইট

২০০৮ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি। মস্কোতে এক মায়াবি রাতে ইউরোপ–সেরার মঞ্চে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দুই পরাশক্তির সেই লড়াইটা ফুটবল পিপাসুদের মনে থাকবে অনেক দিন। ১-১ গোলে শেষ হওয়া সেই লড়াই চলে যায় টাইব্রকারে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে জেতে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ইউনাইটেড। হেরে যায় আভরাম গ্র্যান্টের চেলসি।

সেদিনের হেরে যাওয়া কোচ আভরাম গ্র্যান্ট এখন ঢাকায়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আমন্ত্রণে গতকাল ঢাকায় এসে আজ সাংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নানা প্রশ্নের ভিড়ে ২০০৮ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই ফাইনালের প্রসঙ্গও উঠে আসে। মনে পড়ে সেই দিনটা, এমন এক প্রশ্নে ৬৬ বছর বয়সী গ্র্যান্ট ফিরে যান ১৩ বছর পেছনে।

চেলসির সাবেক কোচ ডুব দেন স্মৃতির সাগরে, ‘সেটি ছিল চেলসির জন্য দারুণ এক মৌসুম। আমরা চাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল জেতার যোগ্য দাবিদার ছিলাম। কিন্তু ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে যাই। সত্যি বলতে সেদিন চেলসির জয় প্রাপ্য ছিল। আমার কাছে সেই স্মৃতিটা অমলিন এখনো। যেখানেই যাই, সেই পেনাল্টি শুটআউটে হেরে যাওয়া নিয়ে লোকে জিজ্ঞাসা করে আমাকে।’

বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে গ্র্যান্ট (বাঁ থেকে চতুর্থ)
ছবি: বাফুফে

নাটকীয়তায় ভরপুর ফাইনালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। বিরতির ঠিক আগে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের গোল সমতা ফেরায় চেলসিকে। দ্বিতীয়ার্ধে চেলসির ফরোয়ার্ড দিদিয়ের দ্রগবা লাল কার্ড দেখেন।

এরপর টাইব্রকারে কার্লোস তেভেজের গোলে এগিয়ে যায় ইউনাউটেড। মাইকেল বালাক করেন ১–১। সেই রাতে চেলসি গোলকিপার আটকে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর স্পট কিক। টাইব্রেকারে চেলসির অধিনায়ক জন টেরির শট পোস্টে চুমু খেয়ে চলে যায় বাইরে। নিকোলা আনেলকার শট আটকান ইউনাইটেডের গোলকিপার। এরপরই জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে ইউনাইটেড।

গ্র্যান্ট কোচ ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়েস্ট হ্যাম, পোস্টমাউথেরও। ছিলেন ইসরায়েল, ঘানা জাতীয় দলের কোচ। স্বাভাবিকভাবে হঠাৎ তাঁর ঢাকায় আসা নিয়ে কৌতূহল তৈরি করেছে দেশের ফুটবলে। তবে এ বিষয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। দুই পক্ষের কথাবার্তাতেই ধোঁয়াশা।

আভরাম গ্র্যান্ট
ছবি: বাফুফে

ঠিক কী কারণে গ্র্যান্ট ঢাকায় এলেন বা তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হলো, সেটা খোলাসা করেননি বাফুফে সভাপতি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গ্র্যান্ট এখানে এসেছেন বাফুফের আমন্ত্রণে। আমাদের ফুটবলীয় অবকাঠামো, আমাদের ফুটবলের সুযোগ–সুবিধা ইত্যাদি দেখবেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ধারণা নেবেন। তারপর ফিরে গিয়ে একটা পরিকল্পনা দেবেন।’

গ্র্যান্টও পরিষ্কার করলেন না বাফুফেকে কী ধরনের পরিকল্পনা বা প্রস্তাবনা দেবেন। এ নিয়ে এক প্রশ্নে চেলসির সাবেক কোচ বললেন, ‘বাফুফেকে ধন্যবাদ আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। বাফুফে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আমি ঠিক কী করব, এই প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে পারব না। এখানে কী হচ্ছে বা কী আছে, কী নেই, আমি ঠিক জানি না। সংক্ষিপ্ত সময়ে আমি আর কতটুকুই-বা দেখতে পারব, বলুন।’

ল্যাম্পার্ডের গোলে সেদিন সমতায় ফিরেছিল গ্র্যান্টের চেলসি
ছবি: ইউনাইটেডের ওয়েবসাইট

তারপর যোগ করেন, ‘আমি এখানে এসে খুশি। আমি ফুটবল ভালোবাসি। ফুটবলেই আছি। বাংলাদেশের ফুটবলে কীভাবে উন্নতি করা যায়, সেটা দেখতেই আমার আসা।’

বাফুফের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কেমন ধারণা হলো, এমন প্রশ্নে তাঁর কথা, ‘আমি দেখছি এখানে ফুটবলের প্রতি অনেক ভালোবাসা। এই ভালোবাসা কাজে লাগিয়ে কীভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই দেখার।’

বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন এক প্রশ্নে বলেন, ‘এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। তবে তাঁর কাছে আমাদের কোনো চাওয়া নেই। তিনি সব দেখবেন, তারপর একটা প্রস্তাবনা দেবেন।’

ইউনাইটেডের শিরোপার উচ্ছ্বাস
ছবি: ইউনাইটেডের ওয়েবসাইট

কিন্ত ৪–৫ বছর ধরে বাফুফের একজন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর থাকার পরও কেন গ্র্যান্টকে নিয়ে আসা? তাহলে বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি কী করছেন? কোনো পরিকল্পনা কী তিনি দিতে পারছেন না বাফুফেকে?

এসব প্রশ্নে সালাউদ্দিনের উত্তর, ‘আমি বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের ওপর খুশি। বিষয়টা হলো, গ্র্যান্ট শুধু টেকনিক্যাল ব্যক্তি নন, তাঁর অনেক জ্ঞান ফুটবলে। আমরা তাঁর সঙ্গে ফুটবলীয় বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছি।’

তাহলে কী গ্র্যান্ট বিশ্বের বড় কোনো ক্লাবের কোনো প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করবেন? এবার সালাউদ্দিন বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা হতে পারে। তিনি এখানে টেকনিক্যাল পরামর্শক হিসেবে আসেননি। অন্য কাজও করতে পারেন।’