ঢাকায় বসেই ইউরোর রোমাঞ্চ

ইউরো নিয়ে ঢাকায় বসেই মেতেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের ইউরোপীয় কোচরাছবি: এএফপি

পর্তুগাল, স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ড—চার দেশের নামই আছে ইউরোর ফেবারিটের তালিকায়। পর্তুগাল টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, এর আগের দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। আর জার্মানি তো যেকোনো ফুটবল টুর্নামেন্টেই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের পতাকা উড়িয়ে মাঠে নামে। ইংল্যান্ডকে নিয়ে খুব হাঁকডাক না থাকলেও সম্ভাব্য শিরোপাজয়ীদের তালিকায় রাখতে হয় তাদেরও।

ঢাকায় এই মুহূর্তে আছেন এই চার দেশেরই চার ‘প্রতিনিধি’। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ জেমি ডে ইংল্যান্ডের মানুষ। আছেন আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস, বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন এবং ব্রাদার্সের ইরানি বংশোদ্ভূত জার্মান কোচ রেজা পার্কাস। ঢাকায় বসেই ইউরোর রোমাঞ্চে মেতেছেন তাঁরা। চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন নিজ নিজ দেশের খেলার।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে

ইউরোতে জার্মানি ও ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। পার্কাস আর জেমি ডে স্বাভাবিকভাবেই খুশি। তবে দলের পারফরম্যান্সের মতোই বিষণ্ন লেমোস ও অস্কারের মুখ। পরশু রাতটা একেবারেই ভালো যায়নি লেমোসের। ১ গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত জার্মানির বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরেছে পর্তুগাল। আত্মঘাতী গোল দুটিই বেশি পোড়াচ্ছে লেমোসকে, ‘ম্যাচের প্রথম দিকে ভালো খেলেছে পর্তুগাল। কিন্তু জার্মানির মতো দলের বিপক্ষে দুটি আত্মঘাতী গোল খেলে ম্যাচে টেকা যায় না। জার্মানি পর্তুগালের তুলনায় সবকিছুতেই এগিয়ে ছিল। তাদের ঠেকিয়ে রাখার মতো কোনো কৌশলই আমরা দেখাতে পারিনি।’

আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস।
ছবি: প্রথম আলো

২ ম্যাচে ৩ গোল করেছেন রোনালদো। এবারের ইউরোতে এখন পর্যন্ত তাঁর সমান গোল আছে কেবল পাত্রিক শিকের। তবু রোনালদোকে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো পছন্দ হচ্ছে না লেমোসের, ‘আমি মনে করি, রোনালদোকে উইঙ্গার হিসেবে খেলানো গেলে দল বেশি উপকৃত হতো। কিন্তু ভালো স্ট্রাইকারের অভাবে এখন রোনালদোকেই স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাতে হচ্ছে। এটা দলের জন্য ভালো হচ্ছে না।’ পরের রাউন্ডে খেলতে না পারার শঙ্কাও পেয়ে বসেছে আবাহনীর কোচকে, ‘নিজেদের খেলায় উন্নতি না করতে পারলে ফ্রান্সের বিপক্ষে জেতা যাবে না। এতে পরের রাউন্ডে যাওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে।’ ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন নম্বরে আছে পর্তুগাল।

হ্যারি কেইনদের নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন জেমি
ছবি: রয়টার্স

পর্তুগাল দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ধানমন্ডিতে লেমোসের মন খারাপ থাকলেও গোপীবাগে জার্মানিকে নিয়ে বেশ আনন্দেই আছেন পার্কাস। পর্তুগালের বিপক্ষে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি, ‘এক গোল খাওয়ার পরও আমার বিশ্বাস ছিল জার্মানি ম্যাচে ফিরবে। কারণ, জার্মানির আক্রমণভাগ অনেক শক্তিশালী। রক্ষণভাগে সমস্যা থাকলেও আক্রমণভাগ তা পুষিয়ে দিতে পারে। আমি মনে করি, ইউরোতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা রাখে জার্মানি।’

টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় খুশি জেমি ডেও। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র। দলের এমন পারফরম্যান্সে আশাবাদী হয়ে নিজের দেশকে অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালে দেখছেন জেমি, ‘৬ পয়েন্টের মধ্যে আমরা ৪ পয়েন্ট পেয়েছি। তবে আমাদের আরও ভালো খেলার সামর্থ্য আছে। নকআউট পর্বে ভালো খেলবে দল। আমার বিশ্বাস, ইংল্যান্ড অন্তত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে।’

দলের পারফরম্যান্স ভালো হলেও এখনো গোলের দেখা পাননি রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক হ্যারি কেইন। তবে জেমি যেন তাঁর পাশেই আছেন, ‘আমরা সবাই জানি ও এখন পর্যন্ত যা খেলেছে, এর চেয়ে ভালো খেলার সামর্থ্য তাঁর আছে। কিন্তু সে–ও তো একজন মানুষ। প্রতিটি ম্যাচেই সে ভালো খেলতে পারবে না।’

জার্মানির বিপক্ষে পর্তুগালের হারে মন খারাপ মারিও লোমোসের
ছবি: রয়টার্স

সুইডেনের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর পোল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে স্পেন। দলটির সব বিভাগেই সমন্বয়ের অভাব দেখছেন ব্রুজোন, ‘ঐতিহ্য অনুযায়ী স্পেন বল দখলে রেখে খেলছে। নিচ থেকে আক্রমণে উঠছে। কিন্তু প্রতিটা বিভাগেই আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো বক্সের মধ্যে আমরা ভালো করতে পারছি না। সুযোগগুলোকে গোলে পরিণত করা যাচ্ছে না। আবার রক্ষণভাগেও ভুল করছি।’ তবে ব্রুজোনের আশা—একটি জয়ই হয়তো বদলে দেবে স্পেনকে।