তুষারেও আগুন জিদানের মেজাজ

তুষারপাতের মধ্যে খেলার জন্য খেপেছেন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান।ছবি: রয়টার্স

ফুটবল মাঠ তো নয়, যেন আইস হকির রিঙ্ক। তুষারপাতে কাল রাতে রিয়াল ম্যাচের আগে ওসাসুনার সবুজ ফুটবল মাঠটা যে একেবারে সফেদশুভ্র। হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যে সেই মাঠেই লা লিগার ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ওসাসুনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচ শুরুর আগে তুষার সরানো হলেও বিরতি ছিল না তুষারপাতে। প্রচণ্ড ঠান্ডা জয় করে খেললেও পয়েন্ট তালিকার অবনমন অঞ্চলে থাকা ওসাসুনাকে হারাতে পারেনি রিয়াল। গোলশূন্য ড্র হয়েছে ম্যাচটি।

ম্যাচ শেষে প্রচণ্ড খেপেছেন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান। পয়েন্ট হারানোর জন্য নয়, ফরাসি কিংবদন্তি খেপেছেন এমন পরিবেশে খেলার জন্য। জিদান মনে করেন, এমন তুষারময় পরিবেশ আর যা–ই হোক ফুটবল খেলার উপযোগী নয়। দ্বিতীয় দফায় রিয়ালের কোচের দায়িত্ব নেওয়া জিদান লা লিগা কর্তৃপক্ষকে একহাত নিয়ে বলেছেন, ম্যাচটি স্থগিত করতে পারত তারা।

এটা কোনো ফুটবল ম্যাচ ছিল না। ম্যাচটি স্থগিত করা দরকার ছিল। আবহাওয়া ও এখানে আসার ঝক্কিটা প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছে আমাদের ওপর। মাঠে আমরা যতটুকু পেরেছি করেছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা সত্যিকারের কোনো ম্যাচ ছিল না।
জিনেদিন জিদান, রিয়াল মাদ্রিদ কোচ

ম্যাচটি খেলতে ওসাসুনার মাঠে যেতেই তো জান কাবার হওয়ার দশা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের। প্রচণ্ড তুষারঝড়ে কয়েক দিন ধরেই স্পেনের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। রাজধানী মাদ্রিদেও ভালো প্রভাব পড়েছে সেটির। তুষারপাতের কারণেই নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই পাম্পলোনায় রওনা দিতে হয় রিয়ালকে। লা লিগার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা অবশ্য মাদ্রিদের বিমানবন্দরেই আটকে ছিলেন ঝাড়া চার ঘণ্টা। বরফ সরিয়ে রানওয়ে পরিষ্কার করার পরই উড়তে পারে রিয়ালের বিমান।

মাঠ খেলার উপযোগী করতে কী কষ্টই না করতে হয়েছে মাঠকর্মীদের।
ছবি: রয়টার্স

কাল রাতে ম্যাচের পুরোটা সময়েই ঝরেছে তুষার। এমন পরিবেশে খেলা কতটা কঠিন, সেটি পরিষ্কার একটি তথ্যেই—পুরো প্রথমার্ধে ওসাসুনার গোলে একটি শটও নিতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য দুবার ওসাসুনার জালে বল পাঠিয়েও গোলের দেখা পায়নি রিয়াল। দুবারই করিম বেনজেমার গোল বাতিল হয়েছে অফসাইডের কারণে।

ডাগআউটে ঠান্ডায় প্রায় জমে যাওয়া জিদান ম্যাচের পর রেগে প্রায় আগুনই হয়ে গেলেন। ম্যাচটিকে ঠিক ফুটবল ম্যাচ হিসেবেই মেনে নিতে পারেননি ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক, ‘এটা কোনো ফুটবল ম্যাচ ছিল না। ম্যাচটি স্থগিত করা দরকার ছিল। আবহাওয়া ও এখানে আসার ঝক্কিটা প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছে আমাদের ওপর। মাঠে আমরা যতটুকু পেরেছি করেছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা সত্যিকারের কোনো ম্যাচ ছিল না।’

ম্যাচটি জিতলে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদকে ছাড়িয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠার সুযোগ ছিল রিয়ালের। কিন্তু ড্র করায় আতলেতিকোর চেয়ে তিন ম্যাচ বেশি খেলেও ১ পয়েন্ট পিছিয়ে ১৮ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট পাওয়া রিয়াল। তুষারঝড়ের কারণেই গত রাতে বাতিল হয়ে যায় আতলেতিকো ও বিলবাওয়ের ম্যাচ।

অফসাইডে বাতিল হয়েছে করিম বেনজেমার দুটি গোল।
ছবি: রয়টার্স

এমন আবহাওয়ায় মাদ্রিদে কীভাবে ফিরবেন, সেই চিন্তাতেও ঘুম হারাম হওয়ার জোগাড় জিদানের, ‘ম্যাচ তো এখন অতীত, কিন্তু এখন আমরা কী করব, সেটিই জানা নেই। জানি না কখন ফিরতে পারব। (তবে) আমার সবচেয়ে বড় অভিযোগ ম্যাচ নিয়েই। পরিবেশটা খেলার উপযোগী ছিল না। জানি, আমি এক কথা বারবার বলছি, কিন্তু আর কী বলার আছে।’

রিয়াল মিডফিল্ডার টনি ক্রুস অবশ্য মাঠ কিংবা তুষারপাত নিয়ে কোনো অভিযোগ করলেন না। জার্মান তারকা মনে করেন, রিয়ালের মতো দলের আরও ভালো খেলা দরকার ছিল, ‘আমরা খুব কম সুযোগ বানাতে পেরেছি। মাঠের অবস্থা খারাপ হরেও আমাদের মতো মানের দলের আরও বেশি সুযোগ তৈরি করা দরকার ছিল। মাঠ কোনো অজুহাত হতে পারে না। দুই দলই তো একই মাঠে খেললাম।’

মাঠে যেন খেলা হতে পারে, সে জন্য কী প্রাণান্ত চেষ্টাই না করেছেন মাঠকর্মীরা। ৫০ জন কর্মী খেলার শুরুর আগে ও মাঝবিরতিতে বরফ সরানোর কাজ করেছেন।