দম আটকানো ম্যাচে শেষ ষোলোয় ডেনমার্ক

জয়ের পর শেষ ষোলোয় ওঠার আনন্দে উদ্বেল ডেনমার্কের খেলোয়াড়েরা।ছবি: রয়টার্স

সবার আগে নিজেদের কাজটা সারতে হবে। জিততে হবে রাশিয়ার বিপক্ষে। ডেনমার্ক এ কাজটা সেরেছে দারুণভাবেই। পাশাপাশি খোঁজ রাখতে হচ্ছিল একই সময়ে রাশিয়ার ক্রেস্টভ স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া বেলজিয়াম-ফিনল্যান্ড ম্যাচেও।

ফিনল্যান্ড বেলজিয়ামের কাছে হারলে এবং ডেনমার্ক নিজেদের ম্যাচটা বড় ব্যবধানে জিতলে গ্রুপের সেরা দ্বিতীয় দল হিসেবে উঠবে ইউরোর শেষ ষোলোয়। এই সমীকরণ মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত শেষ ষোলোয় উঠেছে ডেনমার্ক।

ঘরের মাঠ কোপেনহেগেনে 'বি' গ্রুপের তলানির দল হিসেবে রাশিয়ার মুখোমুখি হয় ডেনিশরা। অন্যদিকে শ্রেয়তর গোলব্যবধান ও ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠে নামার আগে রাশিয়া ছিল টেবিলে দ্বিতীয়। সমান ৩ পয়েন্ট পাওয়া ফিনল্যান্ড ছিল তিনে।

কিন্তু দুই জায়গায় ৯০ মিনিটের লড়াই শেষে শীর্ষস্থানীয় বেলজিয়াম ও ফিনল্যান্ড বাদে পাল্টে যায় রাশিয়া ও ডেনমার্কের অবস্থান।

শেষ ষোলো নিশ্চিতের পর ডেনমার্ক দলের উদযাপন।
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়াকে ৪-১ গোলে চূর্ণ করে ডেনমার্ক। অন্য ম্যাচে ফিনল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারায় বেলজিয়াম। এতে ৩ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে 'বি' গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠল বেলজিয়াম। আর ডেনমার্ক?

দুর্দান্ত এক জয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে তারা উঠল শেষ ষোলোয়। ৩ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট। তাদের সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ফিনল্যান্ডের (-২) চেয়ে শ্রেয়তর গোলব্যবধানে দ্বিতীয়স্থানে উঠে আসে ডেনমার্ক (১)।

ফিনল্যান্ডকে এখন ছয়টি গ্রুপে তৃতীয় হওয়া ছয় দলের মধ্যে শীর্ষ চারে থেকে শেষ ষোলোয় ওঠার প্রার্থনা করতে হবে। আর ৩ ম্যাচ শেষে রাশিয়ার (-৫) সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট হলেও গোলব্যবধানে গ্রুপের তলানির দল হিসেবে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ল তারা।

দুরপাল্লার এই শটে রাশিয়ার জালে অবিশ্বাস্য গোল করেন ডেনমার্কের আন্দ্রেস ক্রিশ্চিয়ানসেন।
ছবি: রয়টার্স

শেষ বাঁশি বাজার পর কোপেনহেগেনে ডেনিশ সমর্থকদের উদযাপন ছিল দেখার মতো। ক্যাসপার স্মাইকেল, মার্টিন ব্রাথওয়েট, ইউসুফ পলসেনরাও শেষ ষোলোয় ওঠার আনন্দে উদ্বাহু নৃত্য জুড়েছিলেন। আনন্দের ধরন এমন হওয়াই স্বাভাবিক! রুপকথার মতো জয় তুলে নিয়েই যে গ্রুপপর্বের বাধা টপকে গেল ডেনমার্ক।


৩৮ মিনিটে ডেনিশ উইঙ্গার মিকেল ড্রামসগার্ডের অবিশ্বাস্য গোলে জয়ের অভিযাত্রার শুরু করে ডেনিশরা। দুরপাল্লার শটে করা তাঁর গোলটি ছিল দেখার মতো।

বিরতির পর ৫৯ মিনিটে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারে রাশিয়া। তাদের মিডফিল্ডার রোমান জোবনিন ব্যাক পাস দিয়েছিলেন গোলকিপারকে। দুর্বল সেই পাস ধরে ডেনমার্ককে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন ইউসুফ পলসেন।

হার ও বিদায়ে শোকাতুর রাশিয়ার খেলোয়াড় আরতেম জুবা।
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের ৬৭ থেকে ৭০ মিনিটের মধ্যে জমে যায় নাটক। এ সময় কোপেনহেগেনে গ্যালারির সমর্থকেরা আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠেন। ওদিকে রাশিয়ায় যে ফিনল্যান্ডের জালে একটি গোল করেছে বেলজিয়াম!

কিন্তু গোলটি বাতিল হওয়ায় ম্লান হয় ডেনিশ সমর্থকদের আনন্দ। এর মধ্যে ৭০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ম্যাচের ব্যবধান ২-১ করে ফেলেন রাশিয়ার স্ট্রাইকার আরতেম জুবা।

কিন্তু এরপরই রুপকথার জয়ের পরিপূর্ণতা দিতে শুরু করে ডেনিশরা। ৭৯ থেকে ৮১ এই ৩ মিনিটের মধ্যে দুটি গোল আদায় করে নেয় ডেনমার্ক। ৭৯ মিনিটে দুরপাল্লার শটে অবিশ্বাস্য এক গোল করেন আন্দ্রেস ক্রিশ্চিয়ানসেন।

এরপর ৮১ মিনিটে ডেনমার্ককে শেষ গোলটি এনে দেন জোয়াকিম মাহেলে। ওদিকে রাশিয়ায় ৭৪ মিনিটে আত্মঘাতী গোল হজম করে ফিনল্যান্ডও পিছিয়ে পড়ে। আর ৮১ মিনিটে ফিনল্যান্ডের জালে শেষ গোলটি করেন রোমেলু লুকাকু।

ম্যাচ শেষে ডেনমার্কের খেলোয়াড়দের উদযাপন।
ছবি: রয়টার্স

দলের মূল তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে ডেনমার্কের প্রথম ম্যাচে মাঠ ছাড়েন। তাঁর জীবন নিয়ে সংশয়ের মাঝে সে ম্যাচে ফিনল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হার মেনেছিল ডেনমার্ক। পরে বেলজিয়ামের কাছেও ২-১ গোলে হেরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় ছিল '৯২ ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু রাশিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মরণকামড় দিয়ে ঠিকই শেষ ষোলোয় উঠল ডেনমার্ক।

দলের এমন জয়ে সদ্যই হাসপাতাল ছাড়া এরিকসেনের চেয়ে বেশি খুশি হবেন আর কে!