দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে মাসিহর ঈদ-আনন্দ

আবাহনীর আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানি ঈদ উপহার দিয়েছেন দরিদ্র এই পরিবারকে।
ছবি: সংগৃহীত

পেশাদার খেলোয়াড়ের জীবনে এমন দিন কতই আসে। পরিবার ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে পালন করতে হয় ধর্মীয় উৎসব। মাসিহ সাইগানি তেমনই এক খেলোয়াড়, যাঁর জীবনে অনেকবারই ঈদ কেটেছে দেশের বাইরে। আবাহনী লিমিটেডের এই আফগান ডিফেন্ডার এতে অবশ্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন না। সহজভাবেই নেন সবকিছু।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের এই সময়ে জার্মানিতে নিজের পরিবার ছেড়ে মাসিহ রয়েছেন ঢাকার ধানমন্ডিতে আবাহনী ক্লাবে। দু-একজন বাদে বাংলাদেশের ফুটবলাররা সবাই চলে গেছেন নিজ নিজ পরিবারের কাছে। ক্লাবে আছেন শুধু মাসিহ, নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে সিজোবা, হাইতির কারভেন্স বেলফোর্ট। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল আগস্ত স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন আবাহনী ক্লাবের পাশেই এক ফ্ল্যাটে।

আবাহনী ক্লাবে মাসিহর সময় কাটছে সানডে, বেলফোর্টদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে। এখন অনুশীলন নেই তবে জিম করেন নিয়মিত। ঈদের এই সময়টায় পরিবারকে মিস করেন অনেক। কিন্তু পেশাদার ফুটবলার হিসেবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন।

আবাহনী ক্লাবে মাসিহর সময় কাটছে সানডে, বেলফোর্টদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে।
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশ বিভূঁইয়ে কেমন কাটছে ঈদ? ফোনে জানতে চাইলে মাসিহ বললেন, ‘ভালোই কাটছে। ঈদের সকালে নামাজ পড়েছি ধানমন্ডিতে। তবে জুমার নামাজ মিস করেছি। এ জন্য খারাপ লেগেছে। ঈদের দুপুরে গিয়েছিলাম তানভীরের বাসায় ( তানভীর আহমেদ, আবাহনীর স্টাফ)। দুপুরের খাবার খেয়েছি সেখানে। মাংস, পোলাও কত কী...। সানডে, বেলফোর্টও গিয়েছিল। আমরা একসঙ্গে ঈদের দুপুরটা সেখানেই কাটিয়েছি।’

মাত্র ২ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে কাবুল থেকে জার্মানি পাড়ি দেওয়ায় সেখানেই ঈদ করা হয়েছে মাসিহর। পেছন ফিরে বলেন, ‘জার্মানিতে ছোটবেলায় অনেক স্মৃতি রয়েছে ঈদের। ঈদ মানেই ভালো ভালো রান্না। ভালো খাবার। আর বাসায় আত্মীয়স্বজন আসা। অনেক মিষ্টি খাওয়া হতো তখন। অনেক সেলামি পেতাম আত্মীয়দের কাছ থেকে। এগুলো সবই মধুর স্মৃতি। সবাই সুন্দর জামাকাপড় পরতাম। একটা অন্য রকম আমেজ থাকত ঈদ ঘিরে।’

আবাহনীর আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানি।
ফাইল ছবি

ঢাকায় এটি মাসিহর দ্বিতীয়বারের মতো ঈদ উদ্‌যাপন। দুই বছর আগে প্রথমবার ঢাকা ছিলেন কোরবানির ঈদের সময়। তখনো আবাহনীতেই খেলেন। এবার চাইলে জার্মানিতে নিজের পরিবারের কাছে যেতে পারতেন। প্রিমিয়ার লিগ যে আপাতত বন্ধ। আবার শুরু হওয়ার কথা ২২ জুন। তবে লম্বা বিরতি থাকলেও বাড়ি যাওয়ার ঝুঁকিটা নেননি। মাসিহ বলেন, ‘জার্মানি চাইলে হয়তো যেতে পারতাম। কিন্তু গিয়ে যদি করোনার জন্য আটকা পড়ি! এই ভয়ে আর যাওয়া হয়নি।’

তবে পরিবার থেকে দূরে থাকলেও জার্মানিতে কাটানো ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনকে নাড়া দেয় ভীষণভাবে। মাসিহ বলেন, ‘একদিন স্কুল থেকে এসেছি। আমার গায়ে আফগান পোশাক, যা সাধারণ পোশাকের মতো নয়। আমাকে আফগান পোশাকে দেখে মা-বাবা বলেছিলেন, খুব সুন্দর আর হ্যান্ডসাম লাগছে। স্মৃতিটা কখনো ভুলব না।’

মাসিই সাইগানির ঈদ কাটছে ঢাকায়।
ফাইল ছবি

ঈদের এই সময়ে নিজেকে গর্বিত ভাবেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে। ঢাকার এক পরিবারের চার বোন আর তাদের মাকে সহায়তা করেন। ঈদ উপহার দিয়েছেন দরিদ্র এই পরিবারকে। মাসিহ বলেন, ‘ওদের সবাইকে ঈদ শপিংয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। জামা-জুতা আর নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যপণ্য কিনে দিয়েছি। এই সামান্য উপহার দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এটাই আসলে আমার এবারের ঈদ-আনন্দ। আমাদের সবারই উচিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।’

আশির দশকে কাবুলের পরিস্থিতি ছিল খুবই খারাপ। যুদ্ধের কারণে বোমা, গুলি ছিল নিত্য ব্যাপার। ১৯৮৮ সালে মাসিহর পুরো পরিবার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে চলে যায়। ফ্রাঙ্কফুর্টে তাঁদের নিকট আত্মীয়রা ছিলেন। শুরুতে আত্মীয়দের কাছেই গিয়ে ওঠে মাসিহর পরিবার। জার্মানিতে জীবনযাত্রা সহজ, স্বাভাবিক ও খুবই ভালো। বিশেষ করে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য। সবকিছু গোছানো ও পরিকল্পিত। তাই খুব ভালো একটা শৈশব পেয়েছেন মাসিহ। শৈশবের ঈদও তাঁর কাছে ছিল অনেক আনন্দময়।