দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে জামালদের

নিজের দশক সেরা একাদশে আমিনুলকে রেখেছেন বিপ্লব ভট্টাচার্য। ছবি: প্রথম আলো।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি চলছে। ঠিক এই সময়ে আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের মাহাত্ম্যই হবে আলাদা। ফুটবলে আমরা ২০০৫ সালের পর এই প্রথম দেশের বাইরে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছি। আজ আমাদের দল নেপালের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারলে এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কিছুই হবে না। এই ট্রফি বাংলাদেশের ফুটবল জাগরণে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। খেলোয়াড়দের জন্যও তা হবে বিরাট অর্জন। ঘরোয়া ফুটবলে দর্শকখরা কিছুটা হলেও কমবে।

সব চাপের কথা ভুলে আজ দায়িত্ব নিয়েই খেলতে হবে বাংলাদেশের ফুটবলারদের। নেপালের সঙ্গে আমরা কয়েকবারই জিতেছি। মনে পড়ছে, আজ থেকে ২১ বছর আগে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেই বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন সূর্য উঠেছিল। এই নেপালকে হারিয়েই দীর্ঘ ১৫ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে সেরা হয়েছিলাম আমরা। সেমিফাইনাল, ফাইনালে আমি পোস্টের নিচে ছিলাম। ফাইনালে ৪৩ মিনিটে মতিউর মুন্নার কর্নার থেকে আলফাজের দেওয়া একমাত্র গোলে জিতেছিলাম আমরা।

সেদিনের কথা কখনোই ভোলার নয়। দশরথের গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে দিই আমরা। তবে গত ২১ বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। নেপালের মাঠে তাদেরই বিপক্ষে জেতা এখন কঠিন। আজ তা মাথায় রেখেই নামতে হবে জামাল ভূঁইয়াদের। আজও স্বাগতিক দলের অনেক সমর্থক থাকবে গ্যালারিতে।

মানসিক, শারীরিক সবদিক থেকেই নেপাল আমাদের চেয়ে এগিয়ে। নিজেদের মাঠে ওরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে। সাম্প্রতিক বছরে নেপাল র‌্যাঙ্কিংয়ে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশকে। ওদের কয়েকজন খেলোয়াড়ই আছে বেশ ভালো। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ফুটবলার আছে নেপালের। পুরো শক্তির দল নিয়েই ওরা খেলছে নিজেদের মাঠের তিন জাতি টুর্নামেন্টে।

১৯৯৯ সাফ গেমসের ফাইনালে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামেই বাংলাদেশের ‘বীর’ ছিলেন বিপ্লব
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ দলে বেশ কয়েকজন নতুন খেলোয়াড় এসেছে। নতুন আর অভিজ্ঞতার মিশেলেই হয়তো ফাইনালের একাদশ সাজাবেন কোচ জেমি ডে। যারাই খেলার সুযোগ পাবে, কোনোভাবেই স্নায়ুচাপে ভোগা চলবে না। আমি চাই, সব ফুটবলার দায়িত্ব নিয়ে খেলবে। নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দেবে মাঠে।

মাঠে প্রতিপক্ষ হলেও মাঠের বাইরে তাঁরা যেন বন্ধুর মতোই। কাল হোলি উৎসবে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডেকে যেমন রাঙিয়ে দিলেন নেপালের কোচ বালগোপাল মহারজন
ছবি: প্রথম আলো

১৯৯৯ সালে যেমনটা আমরা দিয়েছিলাম। সেই সাফ গেমসটা আসলে স্বপ্নের মতো ছিল। দেশের বাইরে থেকে ট্রফি নিয়ে ফিরেছিলাম, যা ছিল আমাদের ফুটবলে একটা বৃত্ত ভাঙার মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৯৫ সালে মুন্না ভাইয়ের নেতৃত্ব মিয়ানমারে চার জাতি ট্রফি জয়ের চার বছরের মধ্যেই আসে নেপাল থেকে ওই সাফল্য। দেশের বাইরে ট্রফি জিতলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় অনেক।

নেপাল অপরাজেয় নয়। একটু চেষ্টা করলেই ট্রফিটা আমাদের হতে পারে। ঘরের মাঠে খেলা বলে নেপাল চাপে থাকবে। সেই চাপই কাজে লাগাতে হবে। আর গোল করতে হবে। আমরা এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচে ১ গোল পেয়েছি, সেটিও আত্মঘাতী। তাই গোল করার ওপর জোর দিতে হবে। আর একটা কথা—হারের আগে যেন হেরে না যাই আমরা। শুভকামনা, বাংলাদেশ।