দুই মিলানকে ধাওয়া করছেন রোনালদোরা

ইব্রা-হীন মিলানও সমান ধারাল।ছবি : রয়টার্স

এ সপ্তাহে পারমাকে হেসেখেলে হারাল জুভেন্টাস। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো করলেন জোড়া গোল। গোলের খাতায় নাম উঠল স্প্যানিশ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা ও সুইডিশ মিডফিল্ডার দেয়ান কুলুসেভস্কিরও। কিন্তু ৪-০ গোলের এই বড় জয়ের পরেও ঠিক যেন স্বস্তিতে নেই দলটার কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো। কেন? যে প্রতিযোগিতায় নয় বছর ধরে নিজেদের আধিপত্য কায়েম রেখেছে জুভেন্টাস, এবার যে সেই প্রতিযোগিতার শীর্ষেই নেই তারা!

হ্যাঁ, লিগ এখনো শেষ হয়নি। লিগের তিন ভাগের এক ভাগ মাত্র শেষ হয়েছে, ১৩টা ম্যাচ খেলেছে সব দল। আর লিগ শেষ না হওয়ার আগে এমন কিছুর ভবিষ্যদ্বাণী করা বাতুলতাই বটে। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। শীর্ষে না থাকা জুভেন্টাসও ‘ওস্তাদের মার শেষ রাতে’ প্রবাদবাক্যের যথার্থতা প্রমাণ করে লিগের শীর্ষে উঠতে পারে। কিন্তু এরপরও আশা জাগাচ্ছে মিলানের দুই দল। জুভেন্টাসের এই একাধিপত্য শুরু হওয়ার আগে ইতালিয়ান লিগে রাজত্ব করত এসি মিলান আর ইন্টার মিলানই। মাঠ ও মাঠের বাইরে নিজেদের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং জুভেন্টাসের জিগীষা—সবকিছু মিলিয়েই গত নয় বছরে বলতে গেলে এই দুই ক্লাবের হাত ফাঁকাই গেছে। এবার আন্তোনিও কন্তের অধীনে ইন্টার ও স্তেফানো পিওলির এসি মিলান—দুজনই সুদিনের আশা দেখাচ্ছেন সমর্থকদের।

এসি মিলানের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। মিলানের লাল-কালো দলটা শিরোপার স্বপ্ন দেখবে আবারও—এই মৌসুমের শুরুতেও কেউ কী সেভাবে ভেবেছিল? হ্যাঁ, ইব্রাহিমোভিচের আসার পর গত মৌসুমের শেষটা বেশ ভালো কাটলেও এই মৌসুমেও যে একই গতিতে এগোতে থাকবে দলটা, কেউই ভাবেনি। কিন্তু সেটাই হচ্ছে। দলের একাধিক তরুণ খেলোয়াড়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত জয়ের নেশা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন দুজন। মাঠের বাইরে পিওলি, ভেতরে ইব্রাহিমোভিচ। আর সে নেশায় বুঁদ হয়ে মিলানকে প্রতিনিয়ত জয়ের বন্দরে নিয়ে যাচ্ছেন রাফায়েল লিয়াও, সান্দ্রো তোনালি, আলেক্সিস সালেমেকার্স, ব্রাহিম দিয়াজ, পিটার হাউগের মতো একাধিক তরুণ। গত রাতের কথাই ধরুন, চোটের কারণে মাঠের বাইরে ইব্রাহিমোভিচসহ মিলানের একাধিক খেলোয়াড়। তাতে কী?

মিলানের পিছু পিছু ছুটছে ইন্টারও।
ছবি : রয়টার্স

ইব্রা না থাকার কারণে দলের কোনো সমস্যা হবে কি না, ম্যাচ শুরুর পর এমন সন্দেহের মেয়াদ ছিল ছয় সেকেন্ড। মাত্র ছয় সেকেন্ডে সিরি’আর ইতিহাসের দ্রুততম গোল করে সেসব আশঙ্কা ধামাচাপা দিয়েছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রাফায়েল লিয়াও। পরে সালেমেকার্সের আরেক গোল মিলিয়ে সাসসুয়োলোকে ২-১ গোলে হারিয়েছে মিলান। এই নিয়ে লিগ মৌসুমে টানা ১৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকল তারা। মৌসুম শুরুর পর লিগে হারেনি। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে মিলানসহ আর মাত্র আরেকটা দল লিগে অপরাজিত আছে।

কে তারা? জুভেন্টাস! পারমাকে দুদিন আগেই ৪-০ গোলে হারানো রোনালদোর দল দুই মিলানকে ধরার দৌড়ে এই রেকর্ডটা গড়ে ফেলেছে।

চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ, শাখতার ও বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের গ্রুপে থাকা ইন্টার নিজ গ্রুপেই সবার শেষে থেকে বাদ পড়েছে প্রতিযোগিতা থেকে। ইন্টার নিয়ে কথা উঠলে এই ব্যর্থতা নিয়েই কথা হচ্ছে বেশি। কিন্তু লিগে যে ইন্টার চুপেচাপে এসি মিলানের ঠিক পেছনেই আছে, অপেক্ষা করছে প্রতিবেশীদের পা হড়কানোর, সেটা অনেকেরই নজরে আসছে না। গত রাতেও স্পেৎসিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে নীল-কালোরা। গোল করেছেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু ও মরক্কোর রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমি।

৩১ পয়েন্ট পাওয়া মিলানের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে তারা। ওদিকে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে জুভেন্টাস। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা রোমা অবশ্য হোঁচট খেয়েছে। ৪-১ গোলে হেরে বসেছে আতালান্তার বিপক্ষে। প্রথমে এডিন জেকোর গোলে এগিয়ে গেলেও পরে দুভান জাপাতা, লুইস মুরিয়েল, জোসিপ ইলিচিচ ও রব গসেনসের গোলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হতে যাওয়া দলটা।

প্রশ্ন একটাই, দুই মিলান কি পারবে তাদের দুর্দান্ত শুরুটাকে শেষ করতে? জুভেন্টাসের রাজত্বে হানা দিতে?